ভালবাসা মানে অন্যের ভালত্বে বাস করা
রা বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে । ,শ্রাবনের অঝোর ধারার বৃষ্টি কখন শেষ হবে কে জানে। .তাকে হাসপাতাল যেতে হবে । ইমারজেন্সি কল এসেছে একটা রোগী ভর্তি হলো এখন খুব খারাপ। .
সে গাইনী বিভাগে রেজিস্টার তাকে যেতেই হবে।
এই জেলা হাসপাতালে যোগ দিয়েছে আজ ৩ মাস হলো .তার কাছে দিন রাত্রি সব সমান সারাদিন ডুবে থাকে কাজের মাঝে বাসায় খুব কম সময় পায়..সে । .আজ ছুটির দিন । .
কাজের মেয়েটি ছাতা হাত এ এগিয়ে গেছে একটা রিক্সার খোঁজে । ,তার মন এ পরছে ঢাকায় ফেলে আসা বাবা -মায়ের কথা। এখন হয়ত বাবা ঘুমাচ্ছে , মা সংসারের নানান কাজে ব্যস্ত .।
অনেক দিন ঢাকা যাওয়া হয় না তার । সে এখানে একা থাকে, তারা দুটি মানুষ সে আর কাজের মেয়েটি।
বৃষ্টির ছাট তার শাড়ি ভিজিয়ে দিচ্ছে কালো পাড় সাদা শাড়ি চুল ছেড়ে দিয়েছে এপ্রনটা হাতেই আছে । বৃষ্টি এতটাই জোরে পরছে যে দূর থেকে আবছা একটা ছায়ার মতন কিছু দেখতে পেল সে কাছে আসতেই দেখল রিক্সা। মেয়েটিকে দোর বন্ধ করতে বলে হাসপাতাল এর উদ্দেশে উঠে বসলো।
.
কাছেই হাসপাতাল দু ধারের নারকেল গাছের সারি নির্জন রাস্তা আর বৃষ্টি সব অস্পষ্ট লাগছে।
ইমার্জেন্সি গেট এ এসেই ঝড়ের গতিতে ঢুকলো, ছুটল গাইনি ওয়ার্ড এর দিকে, অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে এগিয়ে গিয়ে জেনে নিল রুগী কে? সাদা পর্দা সরিয়ে সে চমকে তাকালো একটি সুন্দর ফুট ফুটে মেয়ে যেন একরাশ শেফালী ফুল ছড়ানো মেয়েটি ৭ মাসের অন্তঃস্বত্তা খিঁচুনি দিচ্ছে শুধু জ্ঞান নেই কেবল খিচুনি দিচ্ছে.পালসে দেখল দ্রুত চলছে যেন খুব কষ্ট হচ্ছে মেয়েটির ধারা ডাকলো,সিস্টার তাড়াতাড়ি একটা সেলাইন লাগান ভাবনার আকাশে ঘুরে বেড়ানো ধারা আর নেই কর্তব্যের বেড়া জালে এ অন্য ধারা .। .
মেয়ের মা কে ডেকে দ্রুত জেনে নিল কেস হিস্টরি কি। সকাল থেকে খিচুনি মেয়েটি বয়স ১৭ বছর মেয়েটির বর কুয়েত থাকে বিয়ে হয়েছে ৯ মাস এটাই প্রথম ইসু । বর চলে গেছে বিদেশে।
ধারা রুম এ গেল খুব দ্রুত কিছু টেস্ট লিখল । .মেয়েটি প্রেসার বাড়ছে যে কোনো সময় একটা অঘটন ঘটতে পারে.। মেয়েটিকে বাঁচাতে হবে এমন আরো কয়েকটি খিঁচুনি হলেই শেষ। .
মেয়েটিকে অন্ধকার ঘরে রাখতে বলে , মা কে বলল মেয়ের পাশে থাকতে। . বড় অসহায় লাগছিল ধারার কি করবে।
..আজ ছুটির দিন কনসাল্টেন্ট নেই, আসবেন না তাকেই সিদ্বান্ত নিতে হবে ।
ভাবলো ওঁকে জানিয়ে রাখি। .কল করে যাবতীয় উপদেশ শুনে নিল । আগে মেয়েটির খিঁচুনি কমাতে হবে বাচ্চা বাঁচবে না মেয়েটিও বাঁচে কিনা !!!!!!!!!!!!!!!
মেয়েটি র ব্যথা আছে হয়ে যাবে বাচ্চা ডেলিভারি রুম এ নেয়ার সময় নেই বেডেই করতে হবে ভেবে নিল কি কি করতে হবে সময় গড়াচ্ছে ধারার শরীর বেয়ে ঘাম ঝরছে মেয়েটির দু হাত
সেলাইন নয় গ্লুকোজ চলছে রুম এ কবরের নিস্তব্দতা সে আর দুজন সিস্টার
ঘড়ির টিক টিক ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না । একেকটি মুহুর্ত্ত মূল্যবান এখন খিচুনি থামার জন্য ইনজেকসন দিয়েছে কিন্তূ বাচ্চা না হলে থামবে না ধারা মন এ মন এ প্রাথর্না করছে যেন হয়ে যায় ।
প্রায় ঘন্টা দু এক পর একটা মৃত বাচ্চা হলো কিন্তূ খিচুনি কমেনি ধারা ইনজেকসন দিতে থাকলো তার এখন একটাই খেয়াল বাঁচাতে হবে মেয়েটিকে। .
মৃত সন্তানটির দিকে তাকালো সে, একটি ছেলে সন্তান তার নিথর দেহ পরে আছে অথচ এর চিত্কার করে পৃথিবীর সবাই জানানোর কথা ছিল দেখো আমি এসেছি !!!!!!!!!!!!
বাইরে এসে মা কে বলল সব আরো অনেকেই ছিল কেউ কাঁদছিল কেউ বিষন্ন মুখ করে দাঁড়ানো কেউ বা বিধাতা কে স্মরণ করছে ।
মেয়েটির মা কাঁদতে কাঁদতে বলছে ডাক্তার আমার এই মেয়েকে বাঁচান একে বিয়ে দিতে চাইনি ওরা জোর করেছে তাই দিলাম । মেয়েটি সেদিন আম খেতে চেয়েছে আরো অনেক কিছু বলে মা কাঁদছে নীরবে হাত রাখল ধারা মায়ের মাথায় কি বলবে সে ?
মেয়েটি বাঁচবে না এ কথা বলবে ? কেন বিয়ে দিল কেন এই অল্প বয়েসে বাচ্চা নিল তা বলবে?
মায়ের মন আম খাওয়াতে পারেনি তাই কাঁদছে। আর কোনো দিন ও পারবে কিনা ধারাও জানে না....হ্যাঁ মেয়েটি বেঁচে উঠেছে ।
ধারা চরম ধৈর্য্যের সাথে ওর চিকিত্সায় মগ্ন ছিল
ঘুমায়নি সারা রাত মেয়েটির প্রেসার ঠিক হতে খিচুনি কমলে সে বাড়ি গেছে।
কিন্তূ অমন কত প্রাণ অকালে ঝরে যায় কেউ কি তা জানে? এই মেয়েটির এখন খেলার কথা
পড়ার কথা অথচ বিয়ে কি না বুঝতেই তাকে বিয়ের পিরিতে বসতে হলো.। যার বিয়ে হয়েছে তাকে বেশিদিন দেখেনি, হয়নি কোনো আলাপচারিতা হয়নি মন বোঝা কোথায় সুদুর প্রবাসে তার স্বামী সে কি জানে তার স্ত্রী আজ অসুস্থ .অনেক কিছুই মন এ পড়ল তার।
বিশাল জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ধারা,.ভাবছে এমন কেন হয় কোন অতৃপ্ত বাসনার ফল এ এখনো যে ফুল ফুটেনি অযত্ন অবহেলায় এ কি হচ্ছে কোথায় যাচ্ছে আমাদের সমাজ.। .....কেন এই সব নিয়ম গুলো পাল্টায় না ।
.বৃষ্টি এখনো ঝরছে সেই সাথে বুকের কান্নাও ঝরছে অঝর ধারায় কি বলবে কি করবে ও সমাজের অসঙ্গতি গুলো সে তো ঠিক করতে পারবে না।
মন এ পড়ল.দু বছরের সংসার জীবন ধারার যেখানে সুখ নামের পাখিটিকে দেখতেই পাইনি ।
..শিহাবকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল মাত্র দু বছরের মাথায় শিহাব তাকে ছেড়ে গেল.। তারপর আজ অনেকদিন একা সে । তার সাথে সাথে আরো অনেক কথা মনের আকাশে উঁকি দিল ।
.
সিস্টারের ডাকে ফিরে তাকালো, মেয়েটির প্রেসার ঠিক হচ্ছে না ওকে দেখে নিজের ঘরে গিয়ে বসলো। আজ ছুটির দিন সবাই বিশ্রাম নিচ্ছে বেড়াচ্ছে আনন্দ্দ করছে নিজ নিজ পরিবারের সাথে আর সে নির্জন হাসপাতালের একটি রুম এ বসে ।
ওর মন এ হলো আমার যদি একটা ফুট ফুটে বেবি থাকত !!!! সারাদিন পুতুল খেলত ছোট বেলায় । কেন পারল না আর দশটা মেয়ের মত ঘর করতে? কেন তার জীবন এমন হলো? এই কেনর উত্তর পাবে না জেনেও বার বার মনে আসে । হয়ত ওকে নিয়েই কেটে যেত বাকি দিনগুলো তার।
আর কিছু চাইনা আর কিছুই না....চোখ ঝাপসা হয়ে এলো ...ওর। ..
মেয়েটির কথা মন এ হলো তার ইশঃ যদি বাচ্চা বাঁচানো যেত !!!!!!!!!!!!..কিন্তূ কিছুই করার ছিল না ধারার .। বাচ্চাটা মৃতই ছিল .। . মেয়েটি বেঁচে উঠেছে ধারা চরম ধৈর্য্যের সাথে ওর চিকিত্সায় ব্যাস্ত ছিল ধারা ঘুমায়নি সারারাত। মেয়েটির প্রেসার ঠিক হতে খিচুনি কমলে সে বাড়ি গেছে.।
কিন্তূ অমন কত প্রাণ অকালে ঝড়ে যায় কেউ কি তা জানে? এই মেয়েটির এখন খেলার কথা ,পড়ার কথা অথচ বিয়ে কি না বুঝতেই তাকে বিয়ের পিরিতে বসতে হলো.। যার সাথে বিয়ে হয়েছে তাকে বেশিদিন দেখেনি, হয়নি কোনো আলাপচারিতা, হয়নি মন বোঝা, কোথায় সুদুর প্রবাসে সেই মানুষটি ।
মন এ পড়ল আজ কয়দিন থেকে একটা টেলিফোন খুব জ্বালাচ্ছে তাকে সে তো এখানে কারো সাথেই মেশে না নিশু বৌদির বাসায় যায় গল্প করে এই তো..। ফোনের কথা মন থেকে ঝেড়ে ফেলল.। .
আর একজন যে অহর্নিশি জ্বালাচ্ছে নির্ঝর, সার্জারির উনি বড় ডাক্তার প্রায় দেখা হয় টি রুম এ করিডর্ এ , ওয়ার্ড এ ।
.দেখা হলে একটু হাসি বিনিময় ছাড়া আর কিছুই হয়না ।
সে কিন্তূ বুঝে গেছে নির্ঝর কিছু বলতে চায় কিন্তূ সে শুনবে কেন? তার আজ কাল আর ভালো লাগেনা।
এই তো সেদিন ওনার বাসায় সন্ধ্যায় দাওয়াত ছিল সে গিয়েছিল একটা ধনেখালি চড়া পাড় নীল শাড়ি পরে সবার সাথে আনন্দ করছিল সে ।
ভালই কেটেছিল সন্ধ্যাটা কেবল আসার সময় ওই ঘটনাটা ছাড়া।
ধারা বলতে গেল,
নির্ঝর ভাই, যাচ্ছি ,
নির্ঝর,বলল , একটু বস আমার গাড়ি পৌছে দেবে ।
ধারা বলল, নাহ আমি যেতে পারব.।
এই বলেই বেরিয়ে এলো সুন্দর কটেজ বাড়িটা ওদের, বাগানটাও সুন্দর অনেক ফুল ফুটেছে। বিকেলে দেখেছে ও। রাস্তা দিয়ে হাঁটছে ও চমকে দেখে পাশে নির্ঝর, গেট খুলে বাইরে আসতেই নির্ঝর বলল ,একটু দাঁড়াও,
ধারা ঘুরে চাইল নির্ঝর একটা গোলাপ ছিঁড়ে হাত এ নিল বাড়িয়ে দিল ওর দিকে ও কি করবে ভাবছে নিয়ে নিল হাতে ।
নির্ঝর হেসে বলল তুমি আসায় সন্ধ্যাটা আজ সুন্দর কাটল ...
ধারা কি বলবে মাথা নিচু করে বলল,
ধন্যবাদ ,কাল দেখা হবে ।
এই বলে পা বাড়ালো..
পথে আসতে আসতে ধারা ভাবলো ও কিছু নয় ও তো বন্ধু একটা ফুল দিল আর তো কিছু নয় ওর বউ আছে সন্তান আছে ওরা সুখী হোক ।
আজ মন খুব বিক্ষিপ্ত। কিছুই ভালো লাগছেনা তার । আজ অফিস আসতেই নির্ঝরের সাথে দেখা টি রুম এ কেউ নেই..। .
সে পেপার পড়ছিল নির্ঝর বলল,
ধারা তুমি এত বিষন্ন কেন
ও হেসে বলল - কই না তো
তুমি কথা বলো না কেন ?
এই তো বলছি......
ধারা নামটা খুব সুন্দর তুমি কি জানো ?
কি জানি !
একটু রাগ হলো ওর কিন্তূ রাগ করার মতই কিছুই হইনি.।
তবুও ও কথা শুনতে ভালো লাগে না । .নির্ঝর তার বন্ধু হতে চায় এ তো খারাপ নয়.। কিন্তূ আর কাউকেই ও বন্ধু হিসেবে পেতে চায় না ।
যার কাছ থেকে ভালবাসা স্নেহ মায়া মমতা পাওয়ার কথা, পায়নি সে । নারীত্বের চরম অপমান কি করে ভুলবে? সে দু বছরের সেই জ্বালা ধরা রাতগুলোর কথা ভুলতে পারছেনা।
নির্ঘুম কাটে তার প্রতিটি রাত। যাকে সে সব টুকু ভালবাসা উজার করে দিয়েছিল। সে কি পেরেছিল তার মুল্য দিতে? পেরেছিল কি সে একটি মেয়েকে আপন করে নিতে? তার এত দিন এর ভালবাসা কি মিথ্যে ?
আজকাল শিহাব কে নিয়ে অনেক কথাই শুনতে পায় । গা করেনা কি হবে একদিন ওর কাছে শিহাব ছিল ওর পৃথিবী আজ কিছুই না।
তার মনে হলো পৃথিবী নামক রঙ্গমন্চে সবাই ভালথাকার অভিনয় করছে..।
তাকে ভালো থাকতেই হবে অনেক বড় হতে হবে.। এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি পারে চলে যাবে সে এফ সি পি এস ১ পার্ট পাশ করেছে সে ।
ধারার মন এ পড়ল অনেক দিন আগে ছাদে সে আর শিহাব সে গান গাইছিল দুজন মুখ মুখি মিষ্টি বাতাস হাত এ হাত দুজনার .। স্মৃতিরা কেবল কষ্ট দেয় ।
আমার ও পরানো যাহা চায়
তুমি তাই তুমি তাই গো...............
আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন তোমাতে করিব বাস
দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী দীর্ঘ বরষ মাস ............।
কি চায় ধারার পরান শিহাব কে ? না সে আর কাউকেই চায়না ওই জীবন ছিল দুঃস্বপ্নের।
ধারার দুচোখে জল এর ধারা......আর নয় আর নয় ভালবাসা .। ....মা সব সময় বলেন মেয়েদের জীবন পদ্মপাতায় জলের মতন আজও বোঝা হয়ে উঠেনি তার..। .
........
গল্পটা মিথ্যে নয় হয়ত সত্যি পাঠক ঠিক করে নেবেন । জীবনের পাতায় পাতায় এমন অনেক গল্প থাকে যা কাউকে বলা যায় না.।
বানান ভুলে ক্ষমাপ্রাথী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।