২০০৭ সালের মাঝামাঝি। হঠাৎ শুনি আমাদের ম্যানেজমেন্ট বিভাগে নতুন একজন টিচার নিয়োগ দেয়া হবে। কারণ তুহিন স্যার তখন চলে গেছেন। একদিন মাসুদ আহমদ হায়দার স্যার বললেন আগামীকাল তোমাদের সেকশনে নতুন একজন ম্যাডাম আসবেন, উনার ট্রায়াল ক্লাস আগামীকাল।
এমনিতে তুহিন স্যার চলে যাওয়ার কারণে আমাদের সবার মন একটু খারাপ ছিল, কারণ ম্যানেজমেন্টে তুহিন স্যারের পড়ানোর স্টাইলই ছিল আলাদা।
যার কারণে সবাই উনাকে পছন্দ করত। কিছুক্ষণ পড়ানোর পর উনি বলতেন "এই বলো, বলো, তুমি বলো..." যাই হোক আমরা মাসুদ স্যারের কাছ থেকে নিউজটা শোনার পর একটু ভাল লাগলো এবং নতুন ম্যাডামকে দেখার খুব আগ্রহ জাগলো।
পরের দিন ক্লাসে গেলাম এবং যথারীতি আমি আর মেহেদী একসাথে বসলাম। টিফিনের পর ছিল ম্যানেজমেন্টের ক্লাস। টিফিনের পর আমি আর মেহেদী সবার আগে ক্লাসে উপস্থিত হই যদিও আমরা প্রতিদিন টিফিন ক্লাসের ১০ মিনিট পর ক্লাসে যেতাম।
কিছুক্ষণের মধ্যেই মাসুদ স্যার ম্যাডামকে নিয়ে আসলেন তারপর সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন উনি চিটাগাং ক্যান্ট: কলেজ থেকে এসেছেন। আজ তোমাদের ক্লাস নিবেন।
মাসুদা ম্যাডামকে দেখার সাথে সাথে আমার আর মেহেদীর কি রকম যে আনন্দ লাগছিল তা ভাষায় প্রকাশ মত না। মেহেদী বলল চল ইমরান প্রথম দিনই শুরু করে দেই। আমি বললাম না দোস্ত আজ না, আগে উনার জব স্থা্য়ী হোক, তারপর অনেক করতে পারব।
তো প্রথম দিন আমরা কোন দুষ্টমি করিনি, যা করার আমরা শুধু হাসছিলাম। উনি অনেক জটিল ক্লাস নিলেন, আমাদের অনেক ভালো লেগেছিলো। তো যাওয়ার আগে উনি আমার আর মেহেদির নাম জিজ্ঞেস করলেন, আমাদেরও আর বুঝতে বাকি রইলনা যে ম্যাডাম আমাদের ফলো করেছেন।
এরপর থেকে শুরু হলো ম্যাডামের সাথে দুষ্টমি। বিরতির পর প্রতিদিন ক্লাসে দেরি করে আসতাম।
কতদিন ক্লাসে ঢুকতে দিত আবার কতদিন বাহির করে দিত, বাহির করে দিলেই আমরা চলে যেতাম কেন্টিনে আড্ডা মারতে। ম্যাডামের গলার সাউন্ডটা ছিলো সবচেয়ে মিষ্টি!!! আমরা উনার সাউন্ডটা শোনার জন্যই আমরা দুষ্টমি করতাম। যখন আমাকে
এ---ই ই---ম---রা---ন বলে চিৎকার করতেন তখন এত মজা লাগতো যে তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কতদিন যে আমাকে আর মেহেদিকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন তার কোন হিসাব নাই। মাঝে মাঝে আমাকে বলতেন, ই-ম-রা-ন, আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি কিন্তু এর মানে এই নয় যে আমি তোমার সব দুষ্টমি মেনে নিব!!! আরও একজনের কথা না বললেই নয়! সে হচ্ছে আমাদের অপার্থিব জগতের শোভন!!! সেও ম্যাডামকে ক্লাসে থাকার সময় একটা মিনিটের জন্য শান্তি দিত না।
আলমাস কি করত জানেন? ম্যাডামের দিকে চেয়ে চেয়ে ঘুমাত আর যখন ম্যাডামের পড়ানো শেষ হয়ে গেলে বলত, ম্যাডাম আরও এ-ক-টু বলবেন কি? তখন ম্যাডামের যে কি রাগ উঠত... আর আমরা সবাই হাসতাম।
ম্যাডামের পড়ানোর স্টাইলটই ছিলো জু---স। উনি আমদেরকে সবসময় কিভাবে ম্যানেজমেন্টে ভালো মার্কস তুলতে পারি তার জন্য শুধু টেকনিক শিখাতেন। ম্যাডামের পড়ানোর থিওরি ছিল এটাই। চিত্রের উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন।
পরীক্ষার হলে আমাকে বারবার সর্তক করতেন এই বলে যে,
"এই ই---ম---রা---ন, আর একটি কথা বললে তোমাকে একদম হল থেকে বাহির করে দিব। " কিন্তু মজার ব্যাপার হল, ম্যাডাম কোনদিন আমাকে হল থেকে বাহির করে দেন নাই। আমি ম্যানেজমেন্টে সবসময় পয়েন্ট চুরি করতাম। অর্থ্যাৎ যদি এই পৃষ্টায় ৮ নম্বর পয়েন্ট লিখে শেষ করতাম, তো পরের পৃষ্টায় গিয়ে দিয়ে দিতাম ১১ নম্বর! ক্যামব্রিয়ানের কোন টিচার আমার চুরি ধরতে না পারলেও মাসুদা ম্যাডাম প্রি-টেস্টে আমার চুরি ধরে ফেলেন এবং অনেক কম মার্কস দেন। সেই সাথে ম্যানেজমেন্টের সব টিচারকে উনার বীরত্বগাঁথা জানিয়েই শুধু ক্লান্ত হননি ম্যাডাম আমার বড় ভাইয়াকেও বিষয়টা জানান।
তারপরও আমি ফাইনালে পয়েন্ট চুরি করেছিলাম, যদিও টেস্টে করি নাই ম্যাডামের ভয়ে।
অনেকদিন থেকে আমার প্রিয় মাসুদা ম্যাডামকে নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছা ছিলো, কিন্তু সময়ের অভাবে পারি নাই। আজ আমি আমার প্রিয় ম্যাডামকে ফেইসবুকে পেয়েছি এবং এ্যাড করেছি।
ম্যাডামকে বলব, ম্যাডাম আপনাকে খুব বেশি মিস আর অনেক অনেক ভালোবাসি। আবারও ইচ্ছা করে আপনার সেই ক্লাসগুলোতে ফিরে যেতে, কিন্তু আমি তাও জানি মানুষের জীবনের চরম বাস্তবতায় তা কখনও সম্ভব নয়।
আমাদের সেই দুষ্টমিগুলার জন্য সবার পক্ষ থেকে সরি ম্যাম! দোয়া করি আপনার জন্য। সারা জীবন ভালো থাকবেন ম্যাডাম!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।