সূর্য ডুবেছে বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে, চারিদিকে অন্ধকার, কেমন যেন একটা থমথমে ভাব। ২ ঘণ্টা আগে চায়ের দোকানটা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে আর কোথাও কোন শব্দ নেই, চারিদিকে নীরব। মাঝে মাঝে শুধু কিছু ঝিঁঝিঁ পোকা তার সঙ্গিনীকে ঝি ঝি করে ডেকে উঠছে । এরকম বিষণ্ণ পরিবেশ কে আরও বিষণ্ণ করে তুলেছে চাদের হালকা আলো । চায়ের দোকানের পাশে যে বাড়িটা থম মেরে দাড়িয়ে আছে তার বারান্দায় ময়না পায়চারী করছে আবার মাঝে মাঝে থেমে রেলিং ধরে দাড়িয়ে থাকছে।
'ময়না' তার আসল নাম না , তার স্বামী তাকে আদর করে ময়না ডাকে। এই অস্থিরতা আসলে তার স্বামী দেলুর জন্য। সে কখনো ভাবতেই পারিনি যে, ৪০ বছর আগে সামান্য কয়েকশ মানুষ মারার জন্য দেলুর জীবনে এরকম একটা ঘটনা ঘটবে । দেলু কতবার যে তার মাথাটা কোলে নিয়ে চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলেছিল “দেখ ময়না খোদা আমার সোয়াবের বিনিময়ে পৃথিবীতেই আমাকে যে দেড় দুই লাখ গেলমান দিয়েছে এরা কক্ষনো আমার কোন ক্ষতি করতে দেবেনা। ” কথাগুলো মনে পড়তেই আঁচলে চোখ ঢেকে ফুপিয়ে উঠলো ময়না ।
আজ ফাঁসির রায় হয়ে গেল ! দেলুর কথাগুলোকে তার কাছে এখন শুধু ফাকা বুলি মনে হচ্ছে। সে কত আশা করেছিল আজ দেলুর মুক্তি হবে, তার হাতের নীল লইট্যা মাছের ঝোল খেয়ে কড়াত করে একটা ঢেঁকুর তুলে বলবে “গিন্নী রান্না মাছ তো খাওয়ালে, এবার চল কাঁচা মাছ খাওয়া যাক !” এত দুঃখের মাঝেও এই সুখ কল্পনাটুকু ময়নার মুখে হাসি এনে দিল। “ওহ ! জেলে যাওয়ার আগে কি সেই দিনগুলি ছিল ! মরদ বুড়া হলে কি হবে তার যে মেশিন ছিল ! ঠিক যেন বাকা কাস্তে আর তাতে কি ধাঁর। কতবার যে ঐ মেশিন দুই হাতে ধরে এদিক ওদিক করেছি!” মেশিনের কথা মনে পড়তেই লজ্জায় ময়নার মুখ লাল হয়ে উঠলো, সেই সাথে মেশিন না পাওয়ার দুঃখে হৃদয়ের চাপা যন্ত্রণা জল হয়ে চোখে উঠে আসলো।
ছল ছল চোখ নিয়ে বিষণ্ণ মনে বারান্দার রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকাতেই ময়না চমকে উঠলো! “এ কি করে সম্ভব! আরে ওটাই তো! কি তাজ্জব ব্যাপার যার কথা ভাবছি তাকে এভাবে আকাশে দেখতে পাবো!” তিন চতুর্থাংশ মেঘে ঢাকা চাঁদের দিকে তাকিয়ে আর চোখের পানি ঠেকাতে পারলনা “ওহ দেলু! তোমার মেশিন ঠিক এরকমই ছিল! মেশিনের মুখ ঠিক এরকম ছুঁচালোই ছিল! ওহ দেলু! তোমার ঐ পুরা মেশিনের থেকে মেশিনের মুখটাকে আমি বেশি ভালবাসতাম!” মেশিনের শোঁকে কখন যে ময়না চিৎকার করে উঠেছিল তা বুঝতে পারেনি।
তার চিৎকারে দেলুর ৪ টা গেলমান এসে প্রায় মূর্ছা যাওয়া ময়নাকে ধরে ফেলল। তারা চিৎকার করে উঠল “বেগম সাহেবা! বেগম সাহেবা! কি হয়েছে?” ময়না কোন রকমে চাঁদের দিকে নির্দেশ করে “দেলুর মেশিনের মুখ...” বলে মূর্ছা গেল।
এদিকে কথা জড়িয়ে যাওয়ার কারনে গেলমান গুলো মেশিন শব্দটা বুঝতে পারেনি, শুধু বুঝতে পেরেছে “দেলুর” এবং “মুখ” শব্দ দুটি । গেলমান গুলো ছাগলের মত একবার চাঁদের দিকে তাকায় আর একবার ময়নার দিকে তাকায় । এক ছাগল(গেলমান) ভাবল “বেগম সাহেবা তো মিথ্যা বল্বেনা! অবশ্যই চাঁদে হুজুরের মুখ দেখা গেছে!” সে কিছুক্ষন চাঁদের দিকে তাকিয়ে কিছু বুঝতে না পেরে বাকি সাথির দিকে তাকাল, তাদের মুখ দেখে কিছু বুঝতে না পেরে নিজেকে চালাক প্রমান করার জন্য বলল “অইত! অইত হুজুরের মুখ দেখা যাচ্ছে !” বাকি গেলমান গুলোও চাঁদের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষন ভেবে বলে উঠলো “তাইত! তাইত!” ...
বিঃদ্রঃ যারা বিশ্বাস করে না যে চাঁদে দেলুর মুখ দেখা যায়নি তাদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেওয়ার জন্য এই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা দাড় করিয়েছি ।
এরপরও যারা বিশ্বাস করেনা তারা মূর্খ । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।