শিশুতোষ যে কোন রচনা।
রাশেদ খুব চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে। বন্ধুরা অবশ্য ছোট করে তাকে রশি বলে ডাকে, আসলে রাশেদ সাবার মাঝে একটা বন্ধন তৈরী করে। ও সাবইকে বেধেঁ রাখে ওর দুষ্টুমী আর মায়া দিয়ে। অবশ্য এই নামটা রাশেদের মোটেও পছন্দ নয়।
এলাকার বড় ভাইরা কোন দুষ্টুমীমূলক কাজ পড়লে এইছোটখাট দুষ্টু বাহিনীটাকেই খবর দেন। বড়রা এই মাসুম বাচ্চাদের উৎপাতে বিরক্ত হলেও তেমন কোন শাস্তির ব্যবস্থা নিতে পারতেন না। তাই বান্দরামী কাজে তাদের প্রশংসা ও কদর ছিলো বড় আপু-ভাইদের কাছে।
রাশেদ বরাবরই ক্লাসে ফার্স্ট হয়। চশমা পরা ভদ্র পিকলুর কিছুতেই বোধগময় হয় না সারাদিন দুষ্টুমী করেও কি করে এত ভালো রেজাল্ট করা যায়।
স্কুলের সবাই মোটামুটি অতিষ্ঠ হলেও ভালো ফলাফলের কারণে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যেত না। সবার কাছে অবশ্য রাশেদ খারাপ না বেশি পড়ুয়া আর শান্তশিষ্ট জনের চোখের বালি,আর অন্যদের চোখের মণি।
কতদিন যে স্কুল পালিয়ে বন্ধুরা গিয়ে মাঠে ফুটবল খেলে কাদাঁয় মাখামাখি হয়ে বাসায় ফিরেছে, বড় আপুর কল্যাণে মা'র বকুনি থেকে বেচেঁছে। তার দীঘল কালো কেশের আপুটার বিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে সে এখন আপুর কাছে পরম আদরের পাত্র। শত অন্যায় আবদারও এখন আর আপু ফেলতে পারেন না।
এলাকার পিকনিকের জন্য চাদাঁ তোলার দায়িত্ব তার কাধেঁই বর্তায়। যে যেমন দেয় বাধাঁধরা কোন নিয়ম নেই। তারপর একটা দিন আনন্দোল্লাস!!!
সেদিন রাশেদের আপুটাকে বড় বেশি আপন মনে হয়। তাদের মতো বাদঁড় টাইপ ছেলেদের রান্না সব আপু করে দিয়েছে।
নিয়মের ব্যতিক্রম হয় না, পরের দিন থেকে সেই আগের মতো ঝগড়া।
নিয়মিত জ্বালাতন।
অবশ্য বাবা রাশেদকে মোটেও পছন্দ করেন না। ছেলে হবে ভদ্র শান্ত-শিষ্ট মেধাবী। কিন্তু এই ছেলের মেধা ছাড়া আর কিছুই নেই। আদব-কায়দার ধার ধারে না।
স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ, রাশেদের কত পরিকল্পনা, কি করবে না করবে কিন্তু বাবা পাঠিয়ে দিলেন মসজিদে ইমাম সাহেবে কাছে। কিছুদিন ধর্মকর্ম করার জন্য। সারা বছর তো অধর্মের কাজ করেই যায়। এই অত্যাচার থেকে বাচাঁর জন্য রাশেদ নিজেই অত্যাচার শুরু করল। ইমাম সাহেবে ওযুর পানিতে রঙ মিশিয়ে রাখলো, রাতের বেলা টিনের চালে ঢিল ছোড়া, বন্ধুরা সবাই যেন নতুন কাজ পেয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে শুরু করলো।
কিছুদিনের মধ্যেই ছাড়া পেলো সে।
পাড়ার মিষ্টির দোকান ছিলো তাদের জন্য উদার হস্ত। অবশ্য তা না হলে কিভাবে যেন দইয়ের পাতিল ছিদ্র হয়ে যেত দোকানী নিজেও জানত না।
অংক স্যার নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ক্লাস নেন বলে একদিন চকের আগা-গোড়া তেল মাখিয়ে রাখল, বোর্ডটাও নষ্ট করে রাখল যেন স্যার লিখতে না পারেন।
পরে শাস্তি পেতে হয়েছিলো।
ভীষণভাবে সেদিন প্রতীজ্ঞা করেছিলো আরেকদিন এর চেয়ে ভয়ংকর কিছু করবে।
বৃষ্টির দিন হেডস্যারের বাসা থেকে স্কুলে আসার পথে বিছানো ইটগুলো সব সরিয়ে রেখেছিলো ,যেন স্যারের স্কুলে আসতে অনেক দেরী হয়।
একবার ফুটবল খেলায় প্রতিযোগী দলের এক সদস্য তাকে ল্যাঙ মেরে ফেলে দেয়। প্রায় দেড় মাস বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়েছিলো, এই প্রথম সে দুষ্টুমিতে কারো কাছে হেরে যায়। হেডস্যার তাকে দেখতে এসেছিলেন।
ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলো সেদিন আর মনে মনে প্রতীজ্ঞা করেছিলো এবার সুস্থ হয়ে ওঠার পর আর কোন দুষ্টুমি করবে না।
সুস্থ হয়ে ওঠার পর থেকে আর কেউ কোন দিন তাদেরকে কোন ধ্বংসাত্মক কাজ করতে দেখেনি। তাদের দুষ্টু ছেলের দল এখন ভালো ছেলের দল হিসেবেই বেশি পরিচিত।
উৎর্সগ: নিহাল সোনা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।