আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছেলেবেলায় ক্রিকেট খেলা

থিংক সিম্পল।
ক্রিকেট ক্রিকেট! ক্রিকেট খেলা!! ক্রিকেটকে বুঝতে শুরু করি ৯২ এর বিশ্বকাপ ফাইনাল থেকে। তখন মাদ্রাসায় পড়তাম, মাদ্রাসার নিচে কতগুলো ফার্মেসী ছিল, ফার্মেসীর বদরুদ্দোজা ভাই বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে তার বাসার টিভিটি ফার্মেসীতে এনেছিলেন। সেই সময়ে এত কিছু বুঝতাম না, ফাইনালে যখন পাকিস্তান জিতল, তখন ছাত্রদের সাথে হুই হুল্লোড় করতে করতে ক্রিকেটের ব্যাপারে আগ্রহ জন্মালো। এরপর ছিয়ানব্বই এশিয়ার দেশ শ্রীলংকার বিশ্বকাপ জয় ক্রিকেটের ব্যাপারে আমকে যেন মোহগ্রস্ত করে ফেলে।

ক্রিকেট খেলতে শুরু করি বাসার ছাদে। মাদ্রাসার বন্ধে বাসায় আসলে খেলা হত। একান্নবর্তী পরিবারে চাচাতো, ফুফাতো ভাইয়েরা ছাড়াও আশপাশের কিছু ছেলেপুলেরাও আসতো খেলতে। আমাদের ছাদটা বেশ বড়সড়ই ছিল। আমি ছিলাম ফাস্ট বোলার, দুই চার পা দৌড়ে হাত ঘুরিয়ে বোলিং করতাম, প্লাস্টিকের বলে টেপ পেচিয়ে টেপ টেনিসের আইডিয়া তখন থেকেই আমরা জানতাম।

ছাঁদ থেকে মাঠে আসতে কিছুটা দেরী হয় ছোট বয়সের কারণে, আমাদের মাদ্রাসাটা ঢাকার একটি সরকারী কলোনীর মধ্যে হওয়াতে কলোনীর মাঠে খেলতে পারতাম। একটা মাঠই ছিল আমাদের দখলে। হুজুররা খেলাধুলায় উৎসাহ দিতেন না, আবার মানাও করতেন না। তবে ছাত্রদের মাঝে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহের কোন কমতি ছিল না, চাঁদা দিয়ে স্টাম্প ব্যাট বল কিনতাম। আবার চাঁদা দিয়ে নিজেরাই টুর্নামেন্টের আয়োজন করতাম।

মোটামুটি অলরাউন্ড প্লেয়ার ছিলাম, তাই টুর্নামেন্টে নিজের দলের অধিনায়কত্বও করেছি। আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত খেলার সময় পেতাম, তাই বেশী ওভারের খেলা যেত না, বড়জোড় দশ ওভারের খেলা হত। বিভিন্ন সময়ে আমাদের মাঝে খেলা নিয়ে ঝগড়া বেধে যেত। একবার ঝগড়া করে আমরা দুটো গ্রুপ আলাদা হয়ে যাই, সেই সাথে আলাদা হয়ে যায় আমাদের ক্রিকেটীয় উপকরণ, স্ট্যাম্প পরে আমাদের ভাগে, আর ব্যাট পড়ে তাদের ভাগে, তো মাঠের দুই প্রান্তে আমরা আমাদের উপকরণ নিয়ে অদ্ভুত ক্রিকেট শুরু করলাম! স্ট্যাম্প পার্টি শুধু বোলিং প্র্যাক্টিস করে, আর ব্যাটিং পার্টি স্ট্যাম্প ছাড়া ব্যাটিং প্র্যাক্টিস করে। কয়েকদিন এভাবে চলার পর সিনিয়ররা ব্যাপারটি খেয়াল করে আমাদের আবার ইউনাইট করার জন্যে টুর্নামেন্টের আয়োজন করলেন।

সেবারে টুর্নামেন্টের ফাইনালে হেরে যাই। তবে সেমিফাইনালটা বেশ উত্তেজনাকর ছিল। সেমিফাইনালে আট ওভারে আমরা ৪৫ রান তুলেছিলাম। আমার দলে দুজন ভাল বোলার থাকায় কনফিডেন্ট ছিলাম যে এ রান ডিফেন্ড করতে পারব। প্রতিপক্ষে সাবেক শক্রু পক্ষের দুজন ছিল, তাই অনেকটা মর্যাদার ব্যাপার মনে হয়েছিল আমার কাছে, ব্যটিং এ এসে তারা প্রথম চার ওভারেই ২৫ রান তুলে ফেলে, আস্কিং রান রেটের চেয়ে তাদের রানরেট বেশী।

চাপের মধ্যেই ছয় নম্বর ওভারটা ভাল করলাম। প্রতি বোলার তিন ওভারের বেশী করতে পারবে এমন বাধ্যবাধকতা ছিল। শেষ ওভারে তাদের দরকার ছিল চার রান, আর আমাদের দরকার দুই উইকেট, বল করতে এসে প্রথম বলেই একটি উইকেট ফেলে দেই। তারপরের বলে তারা একটি রান নেয়, চার বলে তিন রান দরকার, এমন মুহুর্তে চার নম্বর বলে তাদের শেষ ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করে দেই, কিন্তু আম্পায়ার সে আউট গ্রহন করবে না, ঘটনা হল আগেরবার আউটের পর স্ট্যাম্প যে বসিয়েছিলাম, তখন মিডল স্ট্যাম্প কিছুটা নিচে ছিল, আর তখন আমাদের বেলস ছিল না, বল দুই স্ট্যাম্প এর মাঝখান দিয়ে চলে যায় কিন্তু স্ট্যাম্প পড়েনি, তাই আম্পায়ার আমাদের জোড় দাবী প্রত্যাখ্যান করলেন। আমার তখন ভীষণ জেদ চেপে গেল, রান আপ বাড়িয়ে দৌড়ে এসে বল করলাম, দিলাম ওয়াইড! এখন তিনবলে দুই রান দরকার, সবাই আমাকে শান্ত হয়ে স্বাভাবিক বল করতে বলল, আমি বলে চুমু খেয়ে আবার বল করলাম, বল করেই চোখ বন্ধ করে ফেললাম! তাকিয়ে দেখি ব্যাটসম্যানের অফ স্ট্যাম্প নেই! :rotfl: উচ্ছাসে পুরো কেদেই ফেললাম! এরপর ক্রিকেটে দেশ এগিয়েছে, আর আমি পিছিয়েছি, কিছু ঘটনায় খেলাধুলা ছেড়ে দিয়েছিলাম, হাফেজী শেষের পর নতুন যে মাদ্রাসায় ভর্তি হলাম, সেখানে খেলাধুলা ছিল পুরো নিষিদ্ধ, কিন্তু আইসিস ট্রফির খেলা শুনার জন্যে পাগল ছিলাম।

ট্রাংকের ভেতর একটা একশত টাকা দামের রেডিও লুকিয়ে রেখেছিলাম। খেলা চলাকালীন সময়ে বাথরুমে যেয়ে অনেক্ষন খেলার বিবরণ শুনতাম, আর শুনতাম বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা তালেব এলেমদের চিৎকার চেচামেচি! :-X :guli: তিন বছর পর আবার মাঠের ক্রিকেটে ফিরি আলিয়া মাদ্রাসায় এসে। কিন্তু ততদিনে বোলিং এর জোড় কমে গেছে, বল করতে গেলে ওয়াইড আর চার ছক্কা খেয়ে ওভার পার করতে হয়। তবে বাংলাদেশ বয়ে বেড়াচ্ছে পনের কোটি প্লাস মানুষের স্বপ্ন, আমাদের স্বপ্ন বিশ্ব ক্রিকেটে স্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা। বিশ্বকে দেখিয়ে দেয়া যে আমরাও পারি পেছন থেকে উঠে আসতে, আমরাও পারি বাধাকে অতিক্রম করতে, আমরাও পারি অসাধ্য সাধন করতে।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.