আমি অন্যকিছু নই, আমি সবাই...। অতুল বসে আছে ডাইনিং টেবিলে। মা পাকের ঘড়ে রান্না করছেন। তাই বই -খাতা নিয়ে অতুলকে ডাইনিং টেবিলে বসানো হয়েছে যেন সে ফাকি না দিতে পারে।
অন্যমনস্কভাবে পড়তে পড়তে হঠাত-ই চোখে পরল একটু দূরে চিনির কৌটার কাছে অনেক সরু কিন্তু লম্বা একটা পিঁপড়ার লাইন।
অতুলের মাথায় সাথে সাথে এক দুষ্ট বুদ্ধি খলে গেল। কোথা থেকে একটা মোম জ্বালিয়ে মোমের ফোঁটাগুলো আস্তে আস্তে সেই পিঁপড়ার লাইনে ঢালতে লাগল। সাথে সাথে পিঁপড়ার লাইনটা এলোমেলো হয়ে গেল। ছোটাছোটি- দৌরা দৌরি করে শুশৃঙ্খল দলটা মুহূর্তের ভেতর বিশৃঙ্খল হয়ে গেল। এই দৌড়াদৌড়ি -ছোটাছুটি দেখে অতুল তো মহা খুশী।
আনন্দটাকে আরো বাড়ীয়ে তোলার জন্য-ই কিনা জানি না অনেকগুলো জীবিত পিপড়াকে আবার কাচের গ্লাসে বন্ধ করে ওদের হন্যে হয়ে ছোঁটাকে আরো উপভোগ করতে থাকল। এর ভেতর মায়ের হুংকার শোনা গেল। অতুল সব ফেলে দৌড়ে আবার পরতে বসল। যদিও মন পরে রইল কাচের গ্লাসে আটকানো ঐ পিপড়াগুলোর দৌড়া দৌড়ীর দিকে।
যাই হোক, একটু পর মা জানালঃ তারতারি জাম-কাপর পরে রেডি হতে হবে।
মা নাকি একটু অতুলকে নিয়ে সুপার সপে যাবে। অতুল মনের আনন্দে তারাতারি জামা-কাপর পরে মার হাত ধরে বের হল। সুপার সব খুব একটা দূরে নয়, বাসা থেকে রিক্সায় ২০ মিনিটের পথ। সুপার সপে মা যখন ঘুরে ঘুরে পুরো মাসের প্রয়োজনীয় বাজার করতে থাকেন, তখন অতুলের চোখ শুধু পরে থাকে সব মজার মজার চকলেটের দিকে। মাকে বলে-কয়ে ,ঢং করে অনেকগুলো চকলেট কিনে অতুল মহাখুশী।
রিকশায় করে ফেরার সময় অতুল লক্ষ্য করল হঠাৎ করে_ই কোথা থেকে যেন বিশাল এক মিছিল চলে আস্ল। কিচ্ছু বুঝে উঠার আগে-ই আশে-পাশের বাসগুলোকে ইট ছুড়ে, লাঠি দিয়ে মাড়তে লাগ্ল। আরেকজন হঠাৎ -ই একজন আবার আগুন লাগিয়ে দিল। মা চিৎকার করে রিক্সাওয়ালাকে পথ ঘুরিয়ে নিতে বলছে কিন্তু পেছিন দিক থেকে-ও একই রকম আরেকটি মিছিল চিৎকার করে করে ধেয়ে আসছে। মা অতুলের হাত ধরে সব বাজার ফেলে রেখে দৌড়ে এক গলির ভেতর ধোকার চেষ্টা চেষ্টা করতে যাবে এর ভেতর পেছন থেকে কারা যেন অসংখ্য ইট ছুড়ে মারতে লাগল।
অতুল পেছন ফিরে দেখার সুজোগ-ও পেল না, কিন্তু মা'র মাথায় অনেকগুলো ইটের আঘাত লেগে মা মোটামুটি রক্তাক্ত হইয়ে গেল। অনেকক্ষণ দৌড়ে আসার পর অতুল লক্ষ্য করল পেছনে আর কেউ নেই। এখন অনেকটা বিপদমুক্ত, কিন্তু মা তার হাত শক্ত করে মুঠবন্দি করে ছুটে-ই চলছে। অনেক্ষন পর মা থামলেন, এবং অতুলকে বুকে জরিয়ে ধরে কাদা শুরু করলেন। এর-ই মাঝে আসে -পাসে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেল।
সবাই অতুল এবং মা কে নিয়ে হাসাপাতালে গেল। মার মাথায় ব্যান্ডিজ লাগিয়ে দিল,অতুলের কিচ্ছু হয় নি, শুধু একটু আচর লেগেছে কিন্তু আম্মু তাকে একদম বুকের ভেতর শক্ত করে ধরে আছেন। হাঁসপাতালের একজনের ফোন দিয়ে মা ফোন দিলেন বাবাকে। কিছুক্ষণের ভেতর বাবা অফিসের গাড়ী নিয়ে চলে এসে অতুলকে এবং মা কে নিয়ে বাসায় চলে আসলেন।
আসে-পাসের বাসা থেকে অনেক আন্টি-আঙ্কেলরা-ও বাসায় আসলেন খবর নিতে।
সবার চোখে যেন এক ধরনের অস্থিরতা, সবাই যেন এক ধরনের হতাশায়। আব্বু ডাকল অতুলকে। বললঃ "আজ আর পড়া দরকার নাই। গিয়ে খেলা ধুলো কর। "।
অতুলের কি যেন মনে হল,হঠাত চলে গেল ডাইনিং টেবিলে। দেখল সেখানে কাচের গ্লাসে পিপড়াগুলো এখনো অস্থির হয়ে দৌরাচ্ছে, ঠিক যেমনটা অতুল এবং মা দৌড়াচ্ছিল কিছুখন আগে। অতুল গ্লাসটা খুলে দিল। পিপড়াগুলো দৌড়ে চলে গেল মোমের ভেতর পোড়া পিপড়াগুলোর কাছে। অনেকক্ষণ ঘোরাঘুড়ি করে আবার সবাই লম্বা লাইন করে চলে জেতে থাকল।
অতুল আর কখনো পিঁপড়া নিয়ে খেলবে না। কখখোনো না। । ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।