আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিঁপড়া লাভের গুড় খেলেও ক্ষতি নেই



বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো জমাকৃত অর্থ ব্যবসায় বিনিয়োগ করে, বাংলাদেশের বর্তমানের প্রধান ব্যবসা তৈরি পোশাক রপ্তানী, এবং এই খাতেই ব্যংকগুলোর বরাদ্দ সবচেয়ে বেশী। তারা সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করছে, এই ব্যবসা সম্প্রসারণ ঋণের সীমা কোনো কোনো সময় শ্রমিকদের বেতন পর্যন্ত বিস্তৃত। ফ্লোর ভাড়া ব্যতিত অনেক তৈরি পোশাক শিল্পের মালিক বাড়তি কোনো অর্থ বিনিয়োগ করেন না এই ব্যবসায়। এবং মূলত যেসব তৈরি পোশাকের নির্মাণ ব্যয় বাংলাদেশে ৩ ডলার থেকে ৪ ডলার, এসবের কোটেড ভ্যালু অনেক সময়ই ৮ থেকে ১০ ডলার। প্রতি পিস হিসেবে এই মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

একটা তৈরি পোশাকে শ্রমিকের বরাদ্দ মজুরি ২৪ মেশিনের লাইন হলে , প্রতি পিস ১৭ থেকে ২৫ পয়সা। অর্থ্যাৎ শ্রমিকদের বরাদ্দ হলো ৩ ডলার নির্মাণ খরচের ১০ ভাগের এক ভাগেরও কম। রীতিমতো নির্লজ্জ শোষণ চলছে এই তৈরি পোশাক শিল্পে। তবে গার্মেন্টস মালিকদের চেহারা এবং বক্তব্য শুনলে মনে হয় তারাই বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে অর্থনৈতিক দৈন্যতা থেকে মুক্তি দিয়েছেন, নেহায়েত দয়াপরবশ হয়েই তারা এই কাজটি করছেন। বছর শেষে একজন নিয়মিত গামেন্টস কারখানার মালিক, যদি নিজের উৎপাদন ক্ষমতার ৭০ শতাংশও কাজে লাগিয়ে নিয়মিত উৎপাদন করেন, তাহলেও বছর শেষ একটা কারখানা থেকে তার লাভ থাকে ৪ থেকে ৬ কোটি টাকা।

এই কারখানায় নিয়মিত কাজ করে ২০০ থেকে ৩০০ শ্রমিক, তাদের বেতন বাবদ বরাদ্দ যদি নিয়মিত ৫০০০ করেও হয় তবে বাৎসরিক বেতন খাতে ব্যয় হয় ২ কোটি টাকারও কম। যদিও কোনো গার্মেন্টস মালিকই তার শ্রমিকদের ৫০০০ টাকা প্রতি মাসে প্রদান করেন না। মজার কথা হলো এই ৪ থেকে ৬ কোটি টাকা বাৎসরিক উপার্জনের জন্য তাকে নিজের পকেট থেকে তেমন কিছুই দিতে হচ্ছে না। যদি একটা গার্মেন্টস থেকে বাৎসরিক ১২ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানী করা হয়, তাহলে সেখান থেকে লভ্যাংশ আছে ৭ কোটি টাকা। এই লভ্যাংশ সকল খরচ বাদ দিয়ে।

এত কথা বলবার কারণ হলো, এফবিসিসিআই বৈশ্বিক মন্দা মোকাবেলা করবার জন্য ৬০০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছে সরকারের কাছে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকার তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানী হয়েছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্র প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা। বৈশ্বিক মন্দার জন্য যারা ক্রেতা তারা মোট নির্মণ মূল্যের উপরে ৫ থেকে ৭ শতাংশ রেয়াত চাইছেন। এবং গার্মেন্টস মালিকদের দাবি এই শিল্প টিকিয়ে রাখবার জন্য তাদের মোট রপ্তানী মূল্যের ১০ শতাংশ প্রদান করতে হবে বিশেষ ব্যবস্থায়।

কৈয়ের তেলে কৈ ভাজার একটা উদাহরণ হতে পারে এটা। তাদের যে চরিত্র প্রকাশিত হয় বিভিন্ন বক্তৃতায় তাতে মনে হয় তারা শ্রমিকদের মঙ্গলের কথা চিন্তা করতে করতে সন্যাসী হয়ে যাচ্ছেন প্রায়- কিন্তু শ্রমিকদের বেতন মাত্র ৫ শতাংশ বাড়াতে বললেই তারা এমন হাহাকার করেন, শুনলে মনে হবে তাদের গাঁটের পয়সা খরচ করে তারা এই ব্যবসা করছেন, এবং ব্যাংকগুলোর কোনো অবদান নেই এই ক্ষেত্রে। যদিও বাস্তব সত্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আলাদা। এরা সবাই ব্যাংকের পয়সার ব্যবসা করছেন এবং ব্যংকের পয়সা থেকেই বিলাসিতার সুযোগ পাচ্ছেন। একটা গার্মেন্টস কারখানার বাৎসরিক প্রকৃত লাভ নয়, বরং তারা রেখে ঢেকে, কর ফাঁকি দিয়েও যে পরিমাণ লভ্যাংশ ঘোষণা করে, তার ৫ শতাংশও যদি প্রতি বছর শ্রমিকদের বছর শেষে প্রদান করতো তাহলেও শ্রমিকদের বাৎসরিক মজুরির অর্ধেকের বেশী টাকা শ্রমিকরা পেতো শুধুমাত্র এই ইনক্রিমেন্ট থেকেই।

কোনো কোনো কারখানা অবশ্য শ্রমিকদের জন্য প্রতি পিসে ২৫ পয়সা লভ্যাংশ বরাদ্দ রাখে। প্রতি শ্রমিক একটা তৈরি পোশাক থেকে ২ পয়সা লাভ করেন। এবং এটাও অনেকের পীড়ার কারণ, উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। কারখানার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে।

৬০০০ কোটি টাকার যে বিশেষ বেইল আউট প্লান প্রস্তাব করা হয়েছে, এর ৪৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়ে তৈরি পোশাক শিল্প খাতে। যদিও ৭০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা থেকে বাৎসরিক লাভের পরিমাণ প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা। এরপরও তারা নিজেরা লাভের পরিমাণ একটু কমাতে আগ্রহী নয়, সরকার হয়তো এই বিশেষ প্রস্তাবটি অনুমোদন দিবে। সরকারের হাতে কোনো বিকল্প নেই। পুকুর চুরি করলেও তারাই বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানীকারক, তাদের কথার মূল্য আছে।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।