আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নোবেল পাওয়ার বাসনা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার

জিমি কার্টার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত হোয়াইট হাউস অফিসে ছিলেন। একজন প্রেসিডেন্টকে সাধারণত পরপর দুটি নির্বাচনে রাষ্ট্র পরিচালনার রায় দেয় মার্কিন জনগণ। কিন্তু ওইবার ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটে। পরের বার নির্বাচিত হলেন রিপাবলিকান পার্টির রোনাল্ড রিগ্যান।

নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর রক্তক্ষরণকে আত্দস্থ করে জিমি কার্টার জনগণের খেদমতে নেমেছিলেন। মি. কার্টার ২০০১ সালে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখার উদ্দীপনা নিয়ে বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য এসেছিলেন।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯০১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৯৭ জন ব্যক্তি ও প্রায় ২১টি সংগঠন নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন। এদের মধ্যে তিনজন মার্কিন সিটিং প্রেসিডেন্ট ও একজন হোয়াইট হাউস ত্যাগ করার পর। ১৯০৬ সালে প্রথমবারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্ট রাশিয়া ও জাপানের মধ্যে যুদ্ধ নিষ্পত্তি ও সালিশি ব্যবস্থার জন্য, দ্বিতীয়বার উড্রো উইলসন ১৯১৯ সালে 'লিগ অব নেশন' যা পরবর্তীতে ইউনাইটেড নেশন প্রতিষ্ঠার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য, তৃতীয়বার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক পররাষ্ট্রনীতি ও জনগণের সহযোগিতামূলক কূটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে নোবেল পদক পান।

আর ওভাল অফিসের বাইরে এসে জিমি কার্টার মানব সেবায় নিয়োজিত হয়ে আন্তর্জাতিক সংঘাত, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, গণতান্ত্রিক মুক্তি অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ওপর কাজ করে ২০০২ সালের অক্টোবর মাসের ১১ তারিখে শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।

এবারে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্ম ইতিহাসের দিকে ফিরে দেখা যাক। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সালের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী অভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মোট ৯৬ দিন হরতাল, অবরোধ এবং অসহযোগ কর্মসূচি পালন করে। এর মধ্যে ৭০ দিন হরতাল, অবরোধ এবং ২৬ দিন অসহযোগ। এসব কর্মসূচিতে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের পাশাপাশি একটি লাগাতার ৯৬ ঘণ্টা, ২টি ৭২ ঘণ্টা এবং ৫টি ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকা হয়।

আর ২৬ দিনের অসহযোগ কর্মসূচির মধ্যে লাগাতার পালিত হয় ২২ দিন।

১৯৯৪ সালে ক্ষমতাসীন বিএনপি ও বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সংঘাতে গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় পশ্চিমা দেশের প্রতিনিধিরা রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে পদক্ষেপ নেয়। ওই বছর সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে কমনওয়েলথের মহাসচিব এমেকা আনিয়াওকু সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতার আয়োজন করেন। তিনি দুই দলের সঙ্গে কথা বলে ব্যাপারটি নিষ্পত্তির প্রস্তাব দেন। রাজনৈতিক কিংবা কূটনৈতিক বলি যে কারণেই হোক দুই পক্ষই এ প্রস্তাব মেনে নিতে সম্মত হয়।

কমনওয়েলথ মহাসচিব সরকার ও বিরোধী দলের কাছে তিনদফা পরিকল্পনা পেশ করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজনৈতিক সংলাপ এবং মধ্যস্ততার জন্য একজন দূত নিয়োগের ব্যাপারে দুই দলই সম্মত হয়। বিশেষ দূত হিসেবে স্যার নিনিয়ান মার্টিন স্টিফেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

স্যার নিনিয়ান মার্টিন ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকায় আসেন। সর্বদলীয় মন্ত্রিসভার প্রস্তাব নিয়ে দুই দলের সঙ্গে প্রায় ছয় সপ্তাহ আলোচনা হয়।

দুই দলই নিনিয়ানের কাছে তাদের অবস্থান পরিস্কার করে। বিএনপি তখন সাংবিধানিক কাঠামো অনুসারে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চেয়েছিল। সাংবিধানিক কাঠামোর আওতায় তখনকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এগার সদস্যের একটি মন্ত্রিসভা গঠনের কথা বলেন। যাতে সরকারি দলের পাঁচজন ও বিরোধী দলের পাঁচ মন্ত্রী থাকবেন। এসব মন্ত্রীরা পঞ্চম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত সংসদ সদস্য থেকে মনোনীত হবেন।

একজন নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যক্তি মন্ত্রিসভার অন্তর্ভুক্ত হবেন। যার হাতে স্বরাষ্ট্র, সংস্থাপন ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থাকবে।

তবে শেষ পর্যন্ত সংলাপের সাফল্য নিয়ে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। তিনি সহিংসতা ও হাঙ্গামার পথ থেকে সরে আসতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেছিলেন, যদি সবাই এ প্রস্তাব মেনে নেয় এবং তা বাস্তবায়ন করলে সহিংসতা এড়ানো যেত।

অচলাবস্থা দূর করা সম্ভব হতো। বিএনপি এ প্রস্তাব মেনে নিয়েছে বলে জানান তিনি। কিন্তু বিরোধী দল প্রস্তাব মেনে না নেওয়ায় হতাশ হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যান কমনওয়েলথ নির্বাচিত এই বিশেষ দূত। তিনি বলেছিলেন, পরস্পরের মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস দূর করে হাঙ্গামার পথ পরিহার করতে হবে।

আওয়ামী লীগ তখন স্যার নিনিয়ানের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ আনেন।

কমনওয়েলথ মহাসচিবের কাছে তারা এমন অভিযোগ তুলে চিঠি পাঠায়। নিনিয়ানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন কমনওয়েলথ মহাসচিব আনিয়াওকুর। বিদায়ের সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সহিংসতা, হাঙ্গামা দিয়ে কোনো কিছুই অর্জিত হবে না। তবে ওই বছর ২৮ অক্টোবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার কাছে একটি চিঠিতে নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার আহ্বান জানান। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারকে নীতিগতভাবে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি স্বীকার করতে হবে এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।

২ নভেম্বর বেগম জিয়া বিরোধীদলীয় নেত্রীকে আরেকটি চিঠি দেন। দুই দিন পর শেখ হাসিনা জানান, নীতিগতভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে না নিলে তিনি আলোচনায় বসবেন না।

'৯৬ সালের নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া যেখানেই নির্বাচনী সফরে যান সেখানেই হরতাল ডাকা হয়। বিরোধীদলগুলোর জাতীয় ও আঞ্চলিকভাবে ডাকা এসব কর্মসূচিতে ব্যাপক ভাঙচুর, বোমাবাজি, ককটেল নিক্ষেপ, অগি্নসংযোগ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় সহিংসতায় নিহত হন প্রায় অর্ধশত লোক, আহত হয় সহস্রাধিক।

পিকেটিং-এ অংশ নেন বিরোধীদলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের সব নেতারা। তারা এ আন্দোলনকে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

১৯৯৬ সালের ৩ জানুয়ারি শেখ হাসিনা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর জনসভায় বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ভেবেছেন রোজার মাসে হরতাল হবে না। ইচ্ছামতো ভোট চুরি করে নির্বাচন করিয়ে নেবেন। কিন্তু তিনি জানেন না রোজার মাসেও যুদ্ধ হয়েছিল।

লাগাতার ৯৬ ঘণ্টা হরতাল চলাকালে ১৯৯৫ সালের ১৮ অক্টোবর ফার্মগেটের এক সমাবেশে শেখ হাসিনা বলেন, 'এ সরকার হরতাল ছাড়া আন্দোলনের কোনো ভাষা বোঝে না। হরতালে মানুষের দুঃখ-কষ্ট হয়। কিন্তু এ ছাড়া আমাদের করারই বা কী আছে?' এদিকে লাগাতার ৯৬ ঘণ্টা হরতাল চলাকালে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়িাম সদস্য কাজী জাফর আহমদ এক সমাবেশে বলেন, '৯৬ ঘণ্টা হরতাল রাজনীতির ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। '

ইতিহাস সাক্ষী দেয়, Election Engineering বা নির্বাচন সাজানোর বিদ্যায় আওয়ামী লীগ অত্যন্ত পারদর্শী। ১৯৭৩ সালের প্রথম নির্বাচন থেকেই ফলাফল যেন তাদের পক্ষে যায় তার জন্য নির্বাচনে এমন কিছু নেই যা করা হয়নি।

সে সময় তারা দাউদকান্দি থেকে হেলিকপ্টারে করে মাঠ পর্যায়ে গণনা করতে না দিয়ে ভোটের বাঙ্ ঢাকাতে এনে পছন্দমতো করে ফলাফল প্রকাশ করেছিল। সেই নির্বাচনে জাসদের রশিদ ইঞ্জিনিয়ারকে ফেল করিয়ে খন্দকার মোশতাককে পাস করানো হয়েছিল। ভোলায় ড. আজহারউদ্দিনকে নমিনেশন সাবমিট করতে দেওয়া হয়নি। ধামরাইতে আতাউর রহমান খানকে পরাজিত করার জন্য শেখ মুজিব নিজে আতাউর রহমানের গ্রামের বাড়ি বালিয়াতে জনসভা করেছিলেন। শেখ কামাল সেখানে পেনিক সৃষ্টির লক্ষ্যে স্থায়ী অফিস করেছিলেন।

প্রতিদিন মন্ত্রীরা সেখানে যেতেন। চার দিন তাকে আটক রাখা হয়েছিল। ধামরাইতে কুখ্যাত জামাল উদ্দিনকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছিল। ভোটকেন্দ্র দখল করে সিল মেরেছিল। জার্মান টেলিভিশন টিমের তোলা ছবিতে সিল মারার পরিষ্কার ছবি থাকায় আতাউর রহমানকে বিজয়ী ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিল তৎকালীন সরকার।

১৯৭৩ সালের ৭ মার্চের নির্বাচনে সংসদে মহিলাসহ মোট আসন ছিল ৩১৫টি। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের আসন ছিল ৩০৮টি। এই স্বল্পসংখ্যক (৭টি) বিরোধীসদস্যকে তারা চিহ্নিত করতেন টাউট, দুষ্কৃতকারী, সমাজবিরোধী শক্তি বলে। সেই সময়ে দ্বিতীয় সংশোধনী বিল ১৯৭৩ রাষ্ট্রপতিকে স্বাধীন দেশে জরুরি অবস্থা জারির ক্ষমতা দেয়। স্থগিত করা হয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার।

নির্বাহী বিভাগের ওপর সংসদের নিয়ন্ত্রণ খর্ব করা হয়। কোনোরূপ কারণ দর্শানো ছাড়া কাউকে গ্রেফতার, ডিটেনশনে পাঠানোর সুযোগ তৈরি করা হয় এবং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তাতে আপিলের সুযোগ রহিত করা হয়। পুলিশ বাহিনীকে অকেজো করে গঠন করা হয় রক্ষীবাহিনী। ১৯৭৪ সালের ২৮ জানুয়ারি পাস করা হয় রক্ষীবাহিনীর বিল। এরপর সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করার জন্য পাস হলো- Printing and Publication Act 1973, Special Power Act, Emergency.

১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি এ দেশের রাজনীতির ইতিহাসে রচিত হয়েছিল এক কালো অধ্যায়ের।

ওইদিন সংসদে চতুর্থ সংশোধনী বিল পাস হয়। এর মাধ্যমে দেশের সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একদলীয় শাসন তথা বাকশাল গঠনের পথ উন্মুক্ত করা হয়। একইসঙ্গে এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু করা হয়। বিল পাসের সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতিতে পরিণত হন। মাত্র ১১ মিনিটে চতুর্থ সংশোধনী বিলটি সংসদে গৃহীত হয় এবং তা আইনে পরিণত হয়।

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিলটি নিয়ে সংসদে কোনো আলোচনা বা বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়নি। এ বিলের মাধ্যমে প্রশাসন ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধন করে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান দেশের নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধিকারী হন। এ পদক্ষেপকে তিনি তার 'দ্বিতীয় বিপ্লব'-এর সূচনা হিসেবে উল্লেখ করেন। আর এই দ্বিতীয় বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করতে রহমান এ দেশের মানুষের সব মৌলিক রাজনৈতিক অধিকার হরণ করা হয়। অবরুদ্ধ করেন মানুষের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতা।

যদিও এই মহান নেতা '৭১-এ ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে উদাত্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, 'আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, আমি এদেশের মানুষের অধিকার চাই। '

২০০১ সালের অক্টোবর মাস। ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় ঐক্যজোট জনগণের ব্যাপক সমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় অর্থাৎ সরকার গঠন করে। ওই নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি র্কাটার। জিমি কার্টার আশা প্রকাশ করেছিলেন আওয়ামী লীগ জনরায়কে মেনে নিবে এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে।

ক্ষুধা ও দরিদ্রতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজন। তিনি তার চিঠিতে উল্লেখ করেন : Bangladesh has many friends around the world who are hopeful that democracy can take hold and that the poverty and suffering of many Bangladeshi people can be alleviated through good governance, meaningful political deliberations, and sound policy-making. The Awami League is critical to this long-term process as a strong party opposition in the next Parliament and as a contender in future free and fair elections.

জিমি কার্টার তার চিঠিতে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে, শেখ হাসিনা উক্ত নির্বাচনকে মেনে নিবেন। তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হরতাল ও অবরোধসহ ধ্বংসাত্দক কোন কর্মসূচি দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কিন্তু শেখ হাসিনা সংসদ অধিবেশন বর্জন করার ঘোষণা দেওয়ার কারণে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হন। তিনি মনে করেন সংসদ অধিবেশন বর্জনের ঘোষণা শেখ হাসিনার ইতোপূর্বেকার প্রতিশ্রুতির বিপরীত।

তিনি তার চিঠিতে উল্লেখ করেন : However, Sheikh Hasina's recent vow to boycott Parliament runs counter to her August pledge and has the potential not only to destabilize this new Parliament, but also to unravel the delicate fabric of the Bangladeshi democracy. জিমি কার্টার মনে করেন শেখ হাসিনা কর্তৃক পরাজয় মেনে না নেওয়ার মানসিকতা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি স্বরূপ। তাই তিনি তার ব্যক্তিগত পরাজয়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে লিখেন : As you know, I lost a presidential election myself. I am well aware of how hard it is to accept such a defeat. It is imperative, however, that the Awami League accept the results of the election in order to strengthen Bangladesh's democratic institutions in the long-term. The party has played an important leadership role for democracy in Bangladesh, and this is a role that must continue in opposition. This is the essence of democracy. 

জিমি কার্টারের চিঠিতে আশা প্রকাশ করা হয়েছিল আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ফলাফল মেনে নিয়ে গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবেন। কিন্তু বাস্তবে কি হয়েছে শেখ হাসিনা নির্বাচনী ফলাফল মেনে না নিয়ে উল্টো সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিচারপতি সাহাবুদ্দিন, বিচারপতি লতিফুর রহমান, নির্বাচন কমিশনার এম এ সাঈদ এই তিনজনকেই বিশ্বাসঘাতক বলে গালমন্দ করেছেন। শুরু থেকেই সংসদ বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সংসদকে অকার্যকর করার চেষ্টা করেছেন।

বর্তমান সরকার গত বছরের ৩০ জুন আদালতের রায়ের অজুহাত দেখিয়ে জনমতের তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করেছে।

এর মধ্য দিয়ে আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিশ্চিতভাবে অনিশ্চয়তার পথে ধাবিত হলো এবং অতীতের মতো দেশের গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা আরও একবার হুমকির মুখে পড়ল। গত বছর ১৩ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ে সই করলেন বিচারপতিরা। যদিও ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের আগে আদালতে বক্তব্য দেওয়া আটজন অ্যামিকাস কিউরির সাতজনই মত দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে।

এ সরকার ২০০৮-এর নির্বাচনে বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে অাঁতাত করে ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে কিছুতেই আর ভরসা করতে পারছে না সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর। তাই সংবিধান সংশোধন করার মতো এত বড় ঝুঁকি নিল শুধু ক্ষমতাকে নিশ্চিত করার জন্য।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ২০১১ সালের ৮ মার্চ নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সন্তু লারমাই যোগ্য। দুজনই শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন। টিক টিক টিক, ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে, দ্রুত ধাবমান সময়, বেশি দিন নেই, মাত্র ২ মাস পর, আসছে ১১ অক্টোবর, ২০১৩ সাল, রোজ শুক্রবার সকাল ১১টায় অসলো কনফারেন্স সেন্টারে ঘোষণা হতে যাচ্ছে ২০১৩ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। এই দিনটির দিকে সারা পৃথিবী তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে আছে কে পাবে এবার শান্তিতে নোবেল!

মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ২০০১ সালে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য পরবর্তী বছরই নোবেল শান্তি পদক অর্জন করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই, ইতোমধ্যেই আপনি ১৪টি অনারারি পিএইচডি ডিগ্রি ও ১৯টি সম্মাননা অর্জন করেছেন।

আজ থেকে ১৮ বছর আগে আপনি আন্দোলন করে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সনি্নবেশিত করেছিলেন। আপনার তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি অনুসরণ করে সার্কভুক্ত দেশ পাকিস্তান অকার্যকর রাষ্ট্র হওয়ার আশঙ্কা থেকে আবারো গণতন্ত্রের পথে ঘুরে দাড়িয়েছে। কোনো একদিন আপনি বলেছিলেন, আপনার আবিষ্কৃত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মুলা বিদেশে রপ্তানি করা হবে। পাকিস্তান আপনার সে স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করেছে। আপনাকে জাতি জননেত্রী শেখ হাসিনা হিসেবে আখ্যায়িত করে, আর আজ এ দেশের শতকরা ৯০ জন আপনার প্রাণের দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল চায়।

আপনি ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্ভাবক। আপনি কোনো এক সময় বলেছিলেন, ৫৭ বছর বয়সের পর রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন। জানি না আর কত দিন আপনি রাজনীতি করবেন। জাতি আজ অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ, আপনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রবক্তা হিসেবে দলীয় গণ্ডির বাইরে এসে ২৮ অক্টোবর ২০০৬ এর মতো সংঘাত সৃষ্টি না করে, আপনার পছন্দের আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনের জন্ম না দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করে আগামী ১১ অক্টোবর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হবেন। জাতি সেই প্রতীক্ষায় রইল !

লেখক : সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী।

ই-মেইল : ehsanulhoquemilan@gmail.com

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.