আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নোবেল জয়ী নাট্যকার হ্যারল্ড পিন্টার এর নোবেল বক্তৃতা থেকে..... (৪)



নোবেল জয়ী নাট্যকার হ্যারল্ড পিন্টার এর নোবেল বক্তৃতা থেকে..... (৩) ( Click This Link) এর পর থেকে..... ......... ....... যুক্তরাষ্ট্র এখন আর স্বল্পমাত্রার সংঘর্ষ নিয়ে ভাবিত না। মৌনতা অবলম্বন বা অন্য কোনো ছলচাতুরীর কারণ সে খুঁজে পায় না আর। যুক্তরাষ্ট্র এখন নির্ভয়ে এবং অন্য কারো আনুকুল্যের পরোয়া না করেই তার সমস্ত তাস দেখাতে পিছপা হচ্ছে না। সোজা কথায়, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক আইন বা বিরোধী মতামতকে তোয়াক্কা করে না যুক্তরাষ্ট্র, বরং মনে করে এরা শক্তিহীন ও অবান্তর। আর তার পিছন পিছন গলায় দড়ি বাঁধা অবস্থায় ব্যা ব্যা করতে থাকে তার নিজস্ব মেষশাবক, করুন ও অবলা গ্রেট বৃটেন।

আমাদের নৈতিক সংবেদনশীলতার কি হলো? কোনোদিন কি ছিল এরকম কিছু? এ শব্দগুলোর অর্থ কি? এরা কি সেই অপসৃয়মান শব্দের কথা মনে করায় যার নাম বিবেক? যে বিবেক শুধু আমাদের কাজেরই না, অন্যান্যদের কর্মকাণ্ডের জন্যও দায়বোধ তৈরি করে? এইসব বোধ কি এখন মৃত? গুয়ানতানামো বে'র দিকে তাকান, গত তিন বছর ধরে শ'য়ে শ'য়ে মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে কোন রকম দোষ সাব্যস্ত হওয়ার আগেই, কোনো আইনি প্রতিনিধি বা কোনো পদ্ধতি অবলম্বন ছাড়াই, বলতে গেলে এ আটক ব্যবস্থা চিরস্থায়ী। জেনেভা কনভেনশনকে পাত্তা না দিয়েই এই পুরোপুরি অবৈধ সংগঠন বজায় আছে। এটা যে সহ্য করা হচ্ছে তাই শুধু নয় বরং আন্তর্জাতিক সমাজ এ নিয়ে তেমন কিছু ভাবছেও না। আমরা কি গুয়ানতানামো বে'র বাসিন্দাদের কথা চিন্তা করি? মিডিয়া তাদের সম্পর্কে কি বলে? মাঝে মধ্যে সংবাদপত্রের ভিতরের পাতায় ছোট করে কোনো খবর উঠে আসে। বর্তমানে অনেকেই অনশন ধর্মঘট করছে, তাদের জোর করে খাওয়ানো হচ্ছে, এবং এ ব্যাপারেও কোনো কোমলতা নেই।

কোনো সিডেটিভ বা এনেসথেটিকেরও বালাই নেই। শুধু একটা নল ঢুকিয়ে দেয়া হয় জোর করে কন্ঠনালী বা নাক দিয়ে। রক্তবমি তারপর। এটাতো অত্যাচার। বৃটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি বলেছে এ নিয়ে? বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী কি বলেছে? কিছু না।

কেন নয়? কারণ যুক্তরাষ্ট্র বলেছে: গুয়ানতানামো বে'তে আমাদের আচরণের সমালোচনাকে আমাদের প্রতি বৈরিতা বলে ধরে নেয়া হবে। হয় আপানারা আমাদের সঙ্গী, নয়তো বিরোধী। তাই ব্লেয়ার চুপ হয়ে যায়। আমরা ইরাকী মানুষের জন্য এনেছি অত্যাচার, বোমা, তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম, অগুনতি হত্যাকাণ্ড, দুর্দশা, লাঞ্ছনা এবং মৃত্যু আর এর নাম দিয়েছি "মধ্যপাচ্যে গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতা"। ঠিক কি পরিমাণ মানুষ খুন করলে যুদ্ধাপরাধী ও গণহন্তারকের যোগ্যতা অর্জন করা যায়? একশো হাজার? যথেস্ট, আমি মনে করি।

তাই আন্তর্জাতিক ক্রীমিনালন কোর্টে বুশ ও ব্লেয়ারের বিচার চাওয়া একটা ন্যায্য দাবি। তবে বুশ এ ব্যাপারে চতুর। সে আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্টকে অনুমোদনই করেনি। কাজেই কোনো মার্কিন সৈন্য বা রাজনৈতিক নেতাকে যদি ডকে দাঁড়াতে হয়, বুশ আগে থেকেই নৌবাহিনী পাঠানোর হুমকি দিয়ে রেখেছে। তবে টনি ব্লেয়ার এই কোর্টকে অনুমোদন করেছে আর তাই বিচারের জন্য তাঁকে পাওয়া যাবে।

আদালত আগ্রহী হলে আমরা তাঁর ঠিকানাও জানাতে পারি। ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট, লণ্ডন। এই প্রসঙ্গে মৃত্যু অবান্তর। বুশ ও ব্লেয়ারের কেউই মৃত্যু বিষয়ে খুব চিহ্নিত না। ইরাকের বিদ্রোহ শুরু হওয়ার আগে মার্কিন বোমা ও মিসাইলে অন্তত একলাখ ইরাকী খুন হয়েছিল।

এই মানুষগুলো কেউ না, তাঁদের মৃত্যুর কোনো অস্তিত্বই নেই। তাঁরা ফাঁকা। তাঁরা যে মৃত সে রকম কোনো রেকর্ডও নেই। "আমরা মৃতদেহ গুনি না", মার্কিন সেনানায়ক টমি ফ্রাঙ্কস জানিয়েছে। দুই হাজার মার্কিনির মৃত্যু একটা লজ্জার ব্যাপার।

তাঁদের রাতের অন্ধকারে কবর দেয়া হয়। শেষকৃত্যও হয় চুপিসারে, কাউকে বিরক্ত না করে। বিকলাঙ্গরা বিছানায় পচে, কেউ সারাজীবন; তাই মৃত আর বিকলাঙ্গ সবাই পচে, তফাত শুধু কবরের ভিন্নতা। ........... (চলবে)


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.