নোবেল জয়ী নাট্যকার হ্যারল্ড পিন্টার এর নোবেল বক্তৃতা থেকে..... (৫) ( Click This Link) এর পর থেকে.......
...........
আমি আগেও বলেছি যে যুক্তরাষ্ট্র এখন তার তুরুপের তাস দেখানোর ব্যাপারেও দিলখোলা। মার্কিন ঘোষিত নীতিরই এখন সর্বাঙ্গীন আধিপত্য। এই নাম আমি দিই-নি, তারাই দিয়েছে। 'সর্বাঙ্গীন আধিপত্য' মানে ভূমি, সমুদ্র, বাতাস, মহাশূণ্য এবং আর সব সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ। ১৩২ টি দেশে ৭০২টি সামরিক স্থাপনা আমেরিকার অধিকৃত।
আমেরিকার কাছে আছে ৮০০০ সক্রিয় এবং ক্ষেপনযোগ্য পারমাণবিক অস্ত্র। এর মধ্যে ২০০০টি আছে 'হেয়ার ট্রিগার এলার্ট' এ। বিপদসংকেতের ১৫ মিনিটের মধ্যেই নিক্ষেপ করা যাবে এদের। আরো উন্নত পারমাণবিক ব্যবস্থা তৈরি করছে তারা যা বঙ্কার বাস্টার্স হিসেবে পরিচিত। কার দিকে তাক করে আছে তারা? ওসামা বিন লাদেন? আপনি? আমি? জো ডকস? চীন? প্যারিস? কে জানে? আমরা জানি এই শিশুসুলভ পাগলামি- পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার এবং সংরক্ষণ হলো বর্তমান মার্কিন রাজনৈতিক দর্শনের কেন্দ্রে।
যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ লক্ষ মানুষ সরকারের এই সমস্ত কর্মকাণ্ডে রাগান্বিত, লজ্জিত, ক্লান্ত কিন্তু তাঁরা তো এখনও রাজনৈতিক বাহিনীর অংশ নয়। যে বাড়তে থাকা ভয়, উদ্বেগ আর অনিশ্চয়তা পরিলক্ষিত হচ্ছে মার্কিনিদের মধ্যে, তা হ্রাস হওয়ার সম্ভাবনা কম।
আমি জানি প্রেসিডেন্ট বুশের বক্তৃতা লিখে দেয়ার জন্য দক্ষ লিখিয়েরা আছেন, তবুও আমি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে এই পদটি গ্রহণ করতে চাই। আমার প্রস্তাব নিচের বক্তৃতাটি তিনি জাতির উদ্দেশ্যে বলবেন। আমি তাঁকে দেখতে পাই- ভারাক্রান্ত, গম্ভীর, সযত্নে পরিপাটি চুল, বিজয়ী, আন্তরিক, তেরচা হাসি, তবুও চিত্তাকর্ষক, পুরুষোচিতঃ
"খোদা ভাল।
খোদা মহান। খোদা ভাল। আমার খোদা ভাল।
বিন লাদেনের খোদা খারাপ। সেই একজন খারাপ খোদা।
সাদ্দামের খোদা খারাপ, তবে সাদ্দামের তো খোদা ছিল না। সেই ছিল বর্বর।
আমরা তো বর্বর না। আমরা মানুষের মুণ্ডু কাটি না। আমরা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।
খোদাও তাই করেন।
আমি বর্বর নই। আমি গণতান্ত্রিকভাবে মনোনীত সরকার এক স্বাধীনতাপ্রেমী গণতন্ত্রের। আমরা খুব দয়ালু সমাজ। আমরা খুব আদর করে বিদ্যুতায়ন করি, মারাত্মক ইনজেকশন দেই।
আমরা এক মহান জাতি।
আমি স্বৈরাচারি নই। সে স্বৈরাচারি। আমি বর্বর নই। সে বর্বর।
আর সেও বর্বর। তারা সবাই বর্বর।
আমার আছে নৈতিক কর্তৃত্ব। এই যে পাকানো ঘুষি দেখতে পাও? এটাই আমার নৈতিক কর্তৃত্ব। খবরদার ভুলবে না"।
...........
আমরা যখন আয়নায় আমাদের প্রতিচ্ছবি দেখি, আমরা ভাবি আমাদের মুখোমুখি প্রতিবিম্বটি নির্ভুল। অথচ এক মিলিমিটার সরলেই ছবিটা বদলে যায়। আমরা আসলে দেখতে থাকি এক অনিঃশেষ প্রতিবিম্ব। কিন্তু মাঝে মাঝে লেখককে আয়না ভাঙ্গতে হয়- কারণ আয়নার অপর পাশ থেকেই সত্য আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আমার বিশ্বাস ব্যাপক এই বিরুদ্ধাচরণ সত্ত্বেও নাগরিক হিসাবে অনঢ় অবিচলতায় দৃঢ়তার সাথে সত্যের অনুসন্ধান এবং আমাদের জীবন ও সমাজে তাকে সংজ্ঞায়িত করা আমাদের দায়িত্ব।
অবশ্য কর্তব্য।
এই দৃঢ়তা আমাদের রাজনৈতিক জীবনে যুক্ত না হলে আর কোনোদিনই আমরা ফিরে পাব না যা প্রায় হারিয়েছি- মানুষের সম্মান।
(সমাপ্ত)
[সংক্ষেপিত, যারা পুরো বক্তৃতাটি পড়তে চান, তারা নিচের বইটি সংগ্রহ করে পড়বেনঃ
"নোবেল ভাষণ
বাক থেকে পামুক
পাঁচ মহাদেশের দশ সাহিত্যরথী"
ভূমিকা ও সম্পাদনাঃ হায়াত মামুদ,
আলোচ্য বক্তৃতার শিরোনামঃ "শিল্প, সত্য ও রাজনীতি", অনুবাদ করেছেনঃ লুনা রুশদী]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।