আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাষ্ট্র মনে রাখবে তার সব নাগরিকদের



বাংলাদেশের জনসংখ্যা কত তা বলা খুবই মুশকিল। জনসংখ্যার প্রকৃত হিসেব নিয়ে সরকার এবং উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে সংখ্যাগত পার্থক্য আমরা সাম্প্রতিক সময়েও লক্ষ্য করেছি। জনসংখ্যার সরকারী হিসেব অন্য যেকোনো সূত্র থেকে অধিক বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার কথা, তবে সরকারের শুমারী যে নির্ভুল তার কোনো অকাট্য প্রমান দেখাতে সরকারই ব্যর্থ। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের একটি মূল স্লোগান হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। জনসংখ্যার হিসেবটাও ডিজিটাল করতে পারলে সরকারী হিসেবকে অবহেলা করার দুঃসাহস আর কেউ দেখাবে না।

ডিজিটাল শব্দের বহুমাত্রিক অর্থ থাকলেও ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রেক্ষাপটে এর অর্থ দাড়ায় দেশের তথ্য ভান্ডার ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে রুপান্তরিত করা এবং ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করা। প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য ইলেক্ট্রনিক ফর্মাটে সরকারের হাতে থাকলে তা শুধু নির্ভুল জনসংখ্যাই বলবে না, অধিকন্ত সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পানাকেও সহযোগিতা করবে। কাজটা প্রথমে একটু মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করবে বটে, তবে একবার ডিজিটাল ডাটাবেস হয়ে গেলে তা হবে রাষ্টের মহামূল্যবান সম্পদ। শোনা যাক ডিজিটাল জনসংখ্যার কথা. গত ভোটার তালিকা করার সময় সরকার যে তালিকা করেছে তার সাথে শিশুদের যোগ করলেই হয়ে যাবে দেশের সব জনসংখ্যার হিসাব। এর সাথে আরো কিছু তথ্য যোগ করে জনসংখ্যার ডিজিটাল তথ্যভান্ডার তৈরী হতে পারে।

তথ্য ভান্ডারের মূল বৈশিষ্ঠ্যই হচ্ছে প্রত্যেক নাগরিকের একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি সংখ্যা থাকবে যা দিয়ে তাকে খুব সহজেই সনাক্ত করা যাবে। এ সংখ্যার মাঝে থাকবে নম্বর্ধারীর জন্মতারিখ। নয় ডিজিটের সংখ্যার সাথে ছয় ডিজিটের জন্মতারিখ সহ মোট পনের ডিজিটের একটি সংখ্যাই হতে পারে এই স্বতন্ত্র পরিচিতি নম্বর। প্রত্যেকের পরিচিতি নম্বরের সাথে যুক্ত থাকবে তার ছবি, ঠিকানা, পেশা, এবং চারিত্রিক ইতিহাস। থাকবে অন্তর্গমন-বহির্গমনের ইতিহাস।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে লেনদেনের ইতিহাস ইত্যাদি। এছাড়াও, এ স্বতন্ত্র পরিচিতি নম্বরের ডাটাবেজের সাথে সংযোগ থাকবে বিভিন্ন সেবা সংস্থা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিমানবন্দর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পরিসংখ্যান বুরোর। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কাউকে গ্রেফতার করলে তার পরিচিতি সংখ্যা দিয়ে ডাটাবেজ থেকে সহজেই জানতে পারবে তার অতীত সব ইতিহাস। তার আগে কতটি মামলা হয়েছে, কোথায় কবে আটক হয়েছে, তার সাজার ইতিহাস ইত্যাদি. হাসপাতাল তার পরিচিতি সংখ্যা দিয়েই জানতে পারবে পূর্বরোগের ইতিহাস, অস্ত্রপচারের ইতিহাস, গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ সেবনের ইতিহাস, ইত্যাদি। অনুরূপভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান অতি সহজেই জানতে পারবে পরিচিতি সংখ্যাধারী আগে কখনো লোন নিয়েছে কিনা, নিলে ঠিকমত ফেরত দিয়েছে কিনা, তার কর প্রদানের তথ্য ইত্যাদি।

এই পরিচিতি সংখ্যা কাজ করবে একটি মেজিক নম্বরের মত। নির্বাচন, ঋণ নেয়া বা কর প্রদানের ক্ষেত্রে মিথ্যা ঘোষণা রোধে এটি জাদুর মত কাজ করবে। কেননা, প্রতেকের সম্পত্তি রেজিস্টারের সময় তার নিজস্ব পরিচিতি সংখ্যা ব্যবহার করতে হবে যা পরে অস্বীকার করার আর সুযোগ নেই। এক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে তা অস্বীকারের সুযোগ না থাকায় ঋণ খেলাপী অনেক কমে যাবে। প্রত্যেকের সম্পত্তি তার নিজস্ব পরিচিতি সংখ্যায় নিবন্ধিত থাকায় ভুয়া মর্টগেজও ঠেকানো যাবে।

কর ফাকি দেয়ার সুযোগও কমে যাবে উল্লেখযোগ্য হারে। ফলে সরকারের আয়ও বাড়বে। শিক্ষা ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভুয়া ভর্তি আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি বিরাট সমস্যা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে কেউ তথ্য গোপন করতে পারবে না।

কারণ, তার পরিচিতি সংখ্যাই বলে দেবে অতীত শিক্ষার ইতিহাস এবং ফলাফল। অনুরূপ ভাবে ভুয়া সার্টিফিকেট ব্যবহার করে কেউ চাকুরী নিতে পারবে না। নিয়োগকারী সংস্থা ওই পরিচিতি সংখ্যার মাধ্যমে চাকুরী প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই করতে পারবে। এই জাদুর সংখ্যার উপকারিতা বর্ণনা একটি স্বল্প দৈর্ঘের লেখার মাধ্যমে ব্যক্ত করা কঠিন। উপরে উল্লেখিত ব্যবহার ছাড়াও এ সংখ্যাটি ব্যবহার করা যাবে ভিজিডি কার্ড বিতরণ, সরকারী-বেসরকারী সাহায্য বিতরণ, ইত্যাদি কাজে।

গ্রামের দুর্নীতিপরায়ণ চেয়ারমানের অবহেলার শিকার শতার্ধ করিমন বিবিকে কখনো প্রশ্ন করতে হবে না আর কত বয়স হলে বয়স্ক ভাতা পাব। এ সংখ্যাটির মাধ্যমে সরকারী পরিকল্পনায় বিবেচনা করা যাবে দেশের সকলকে। রাষ্ট্র মনে রাখতে পারবে তার সব নাগরিকদের - গোলাম মাহাবুব সরওয়ার - ভিসন ২১

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.