আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটবেলার কবিতা ........


আমাদের ছোট নদী _________রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। পার হয়ে যায় গোরু, পার হয় গাড়ি, দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি। চিক্ চিক্ করে বালি, কোথা নাই কাদা, একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা। কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক, রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক। আর-পারে আমবন তালবন চলে, গাঁয়ের বামুন পাড়া তারি ছায়াতলে।

তীরে তীরে ছেলে মেয়ে নাইবার কালে গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে। সকালে বিকালে কভু নাওয়া হলে পরে আঁচল ছাঁকিয়া তারা ছোটো মাছ ধরে। বালি দিয়ে মাজে থালা, ঘটিগুলি মাজে, বধূরা কাপড় কেচে যায় গৃহকাজে। আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভর ভর মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর। মহাবেগে কলকল কোলাহল ওঠে, ঘোলা জলে পাকগুলি ঘুরে ঘুরে ছোটে।

দুই কূলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া, বরষার উৎসবে জেগে ওঠে পাড়া সৎপাত্র _______ সুকুমার রায় শুনতে পেলাম পোস্তা গিয়ে— তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে ? গঙ্গারামকে পাত্র পেলে ? জানতে চাও সে কেমন ছেলে ? মন্দ নয় সে পাত্র ভালো রঙ যদিও বেজায় কালো ; তার উপরে মুখের গঠন অনেকটা ঠিক পেঁচার মতন ; বিদ্যে বুদ্ধি ? বলছি মশাই— ধন্যি ছেলের অধ্যবসায় ! উনিশটিবার ম্যাট্রিকে সে ঘায়েল হয়ে থামল শেষে । বিষয় আশয় ? গরীব বেজায়— কষ্টে–সৃষ্টে দিন চলে যায় । মানুষ তো নয় ভাইগুলো তার— একটা পাগল একটা গোঁয়ার ; আরেকটি সে তৈরী ছেলে, জাল করে নোট গেছেন জেলে । কনিষ্ঠটি তবলা বাজায় যাত্রাদলে পাঁচ টাকা পায় । গঙ্গারাম তো কেবল ভোগে পিলের জ্বর আর পাণ্ডু রোগে ।

কিন্তু তারা উচ্চ ঘর, কংসরাজের বংশধর ! শ্যাম লাহিড়ী বনগ্রামের কি যেন হয় গঙ্গারামের । — যহোক, এবার পাত্র পেলে, এমন কি আর মন্দ ছেলে ? সফদার ডাক্তার ___________হোসনে আরা সফদার ডাক্তার মাথাভরা টাক তার খিদে পেলে পানি খায় চিবিয়ে, চেয়ারেতে রাতদিন বসে গোণে দুই-তিন পড়ে বই আলোটারে নিভিয়ে। ইয়া বড় গোঁফ তার, নাই যার জুড়িদার শুলে তার ভুঁড়ি ঠেকে আকাশে, নুন দিয়ে খায় পান, সারাক্ষণ গায় গান বুদ্ধিতে অতি বড় পাকা সে। রোগী এলে ঘরে তার, খুশিতে সে চারবার কষে দেয় ডন আর কুস্তি, তারপর রোগীটারে গোটা দুই চাঁটি মারে যেন তার সাথে কত দুস্তি। ম্যালেরিয় হলে কারো নাহি আর নিস্তার ধরে তারে কেঁচো দেয় গিলিয়ে, আমাশয় হলে পরে দুই হাতে কান ধরে পেটটারে ঠিক করে কিলিয়ে।

কলেরার রোগী এলে, দুপুরের রোদে ফেলে দেয় তারে কুইনিন খাইয়ে, তারপর দুই টিন পচা জলে তারপিন ঢেলে তারে দেয় শুধু নাইয়ে। ডাক্তার সফদার, নাম ডাক খুব তার নামে গাঁও থরথরি কম্প, নাম শুনে রোগী সব করে জোর কলরব পিঠটান দিয়ে দেয় লম্ফ। একদিন সককালে ঘটল কি জঞ্জাল ডাক্তার ধরে এসে পুলিশে, হাত-কড়া দিয়ে হাতে নিয়ে যায় থানাতে তারিখটা আষাঢ়ের উনিশে। ইচ্ছা ___________আহসান হাবীব মনারে মনা কোথায় যাস? বিলের ধারে কাটব ঘাস। ঘাস কি হবে? বেচব কাল, চিকন সুতোর কিনব জাল।

জাল কি হবে? নদীর বাঁকে মাছ ধরব ঝাঁকে ঝাঁকে। মাছ কি হবে? বেচব হাটে, কিনব শাড়ি পাটে পাটে। বোনকে দেব পাটের শাড়ি, মাকে দেব রঙ্গিন হাঁড়ি কাজলা দিদি _________________যতীন্দ্রমোহন বাগচী বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই মাগো, আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই? পুকুর ধারে, নেবুর গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই; মাগো, আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই ? সেদিন হতে দিদিকে আর কেনই-বা না ডাকো, দিদির কথায় আচঁল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো ? খাবার খেতে আসি যখন দিদি বলে ডাকি, তখন ও-ঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো, আমি ডাকি, - তুমি কেন চূপটি করে থাকো ? বল মা, দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে ? কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল-বিয়ে হবে ! দিদির মতন ফাঁকি দিয়ে আমিও যদি লুকোই গিয়ে - তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে রবে ? আমিও নাই দিদিও নাই কেমন মজা হবে ! ভুঁইচাঁপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল, মাড়াস নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল; ডালিম গাছের ডালের ফাঁকে বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে, দিস না তারে উড়িয়ে মা গো , ছিঁড়তে গিয়ে ফল; দিদি এসে শুনবে যখন, বলবে কী মা বল! বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই এমন সময়, মাগো, আমার কাজলা দিদি কই ? বেড়ার ধারে, পুকুর পাড়ে ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোঁপে-ঝাড়ে; নেবুর গন্ধে ঘুম আসে না -তাইতো জেগে রই; রাত হলো যে, মাগো, আমার কাজলা দিদি কই ?
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।