কি বলব
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গিয়ে মদ পান ও যৌনকেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটিয়েছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) পরিচালক (প্রেস) হালিম হোসেন খান। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে কোরআনখানি, মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গিয়ে মঙ্গলবার গভীর রাতে এক নারীর সঙ্গে মদ খেয়ে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায় জনতা ও পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ইফা কর্মকর্তার এ কেলেঙ্কারির ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে সরকার ও আওয়ামী লীগের সর্বস্তরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের শীর্ষ মহলের নির্দেশে এ ঘটনা তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে মদপান ও ব্যভিচার করে বঙ্গবন্ধুর মাজার অপবিত্র করার অপরাধে হালিম হোসেন খানকে গ্রেফতার ও তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সমাবেশ করে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক সামিম আফজালকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
তাকে বরখাস্ত না করা পর্যন্ত প্রেসের সব কাজ বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে কোরআনখানি, মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বুধবার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য মঙ্গলবার ঢাকা থেকে ফাউন্ডেশনের পরিচালক (প্রেস) হালিম হোসেন খানকে গোপালগঞ্জে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়। গোপালগঞ্জ সার্কিট হাউস থেকে তিনি অনুষ্ঠানের তদারকি করতে থাকেন। সার্কিট হাউসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে আমাদের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে হালিম হোসেন খান সার্কিট হাউস থেকে লুঙ্গি পরে বেরিয়ে যান।
রাত ১টার দিকে তিনি সার্কিট হাউসের পূর্ব পাশে সোহরাব হোসেন ভূঁইয়া ও গোপাল শীলের বাড়ির মাঝের বাগানে মদ্যপ অবস্থায় অসামাজিক কাজে লিপ্ত হন। বাগানে মানুষের আওয়াজ পেয়ে এমরান ভূঁইয়া ও লিটন ভূঁইয়া এগিয়ে গিয়ে আপত্তিকর অবস্থায় তাকে দেখে এলাকাবাসী ও পুলিশকে খবর দেন। লোকজনের প্রহারে হালিম হোসেন আহত হয়ে পড়লে এসআই আমিরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি মোবাইল টিম এসে তাকে উদ্ধার করে। অতিরিক্ত মদপানের কারণে এসময় তিনি ঠিকমত কথা বলতে পারছিলেন না। পুলিশের মোবাইল টিম তাকে প্রথমে আটক করলেও পরে থানার ওসির সঙ্গে কথা বলে তাকে ছেঁড়া জামা-কাপড়সহ সার্কিট হাউসে পৌঁছে দেয়।
এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বোরহানউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, তাকে প্রথমে মদ্যপ ও অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে আটক করা হলেও পরে সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ায় তাকে সার্কিট হাউসে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটি গঠন : ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক হালিম হোসেন খানের কেলেঙ্কারির ঘটনা তদন্তের জন্য সরকারের ওপরের মহলের নির্দেশে জেলা প্রশাসন তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। এডিএম মনিরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে গঠিত এ তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে গোপালগঞ্জের এনডিসি মো. সাহাদাত্ হোসেন খন্দকার আমার দেশকে বলেন, এ ধরনের লজ্জাজনক একটি ঘটনার খবর আমরাও পেয়েছি। জেলা প্রশাসক এ ঘটনা তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করে দিয়েছেন।
কমিটি রিপোর্ট দেয়ার পর তা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে প্রেরণ করা হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনে সমাবেশ : অসামাজিক কাজের মাধ্যমে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার অপবিত্র করার অপরাধে হালিম হোসেন খানকে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা গতকাল পৃথকভাবে সমাবেশ করেন। এসব সমাবেশ থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হালিম হোসেন খানকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্মকর্তা কল্যাণ সংস্থা আয়োজিত এ প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন ইসলামিক মিশনের পরিচালক সাহাদাত্ হোসেন খান, পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) আইয়ুব আলী চৌধুরী, মসজিদ মার্কেটের উপ-পরিচালক মহিউদ্দিন মজুমদার, আবু বকর সিদ্দিক, জসিম উদ্দিন প্রমুখ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল হাই মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অপর এক প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন আবদুল হক।
মুক্তিযোদ্ধা জাভেদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের এ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আজিজুল হক রনজু, খোরশেদ আলম, মহিউদ্দিন মজুমদার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, হালিম হোসেন খান এর আগে অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তার স্ত্রীকে অসামাজিক কাজের প্রস্তাব দিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ডিজির কাছে বারবার দাবি জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি। এবার তিনি বঙ্গবন্ধুর মাজারে মিলাদ মাহফিলের অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে দিয়ে মাজারকে কলঙ্কিত করেছেন। মহিলার সঙ্গে অবৈধ মেলামেশা করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা খেয়েছেন।
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে বরখাস্ত করে গ্রেফতারের দাবি জানান তারা। তারা বলেন, হালিম হোসেন খানসহ কয়েকজনের কর্মকাণ্ডে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মো. জাভেদ আলী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর মাজারে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে মদ্যপান ও অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়ে হালিম হোসেন খান ইসলাম ধর্মের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছেন। নারীঘটিত অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়ে তিনি স্থানীয় জনগণের হাতে উত্তম-মধ্যম খেয়েছেন। হালিম হোসেন খান কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন।
তার বহিষ্কার ও শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি আদায়ের জন্য ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।