আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভ্যালেন্টাইন বোন



[এই লেখাটি আমার খুব প্রিয় একজন ব্লগার শূণ্য উপত্যকার রুচি। লেখাটির কমেন্ট হিসেবে লিখছিলাম। অনেক বড় হয়ে যাওয়ায় আলাদা পোস্ট আকারে প্রকাশ করলাম। মূল লেখাটি এখানে] ভাই, শিওর, পোড়াপুড়িতে আপ্নি আমার কাছে নিল-এ হারবেন। কপালটাও এত্তো খারাপ,দাদার দিকের বোনগুলা অনেক বড় ।

নানার দিকে একটা খালাত বোন আছে,সেটাও থাকে আমেরিকা। ওটাকে আমি যত ভালোবাসি, তত ভালো জীবনে আর কাউকে বাসি নাই। যখন ছোট ছিল, তখন অনেক ন্যাওটা ছিল। কিন্তু ওই যে, কপালে সুখ থাকে না বেশি দিন। বড় হইয়া এখন আমেরিকান হইয়া গেছে।

এখন আম্রা হইলাম ওর 'কাজিন'। আমার বড় ভাইও মাত্র দেড় বছরের বড়, একটা ভাতিজির আশাও দুরাশা। শেষ ভরসা বলতে এখন আমি নিজেই! টিউশনি করানোর সময় কত ফ্রেন্ড ছাত্রীকে দিব্যি গার্লফ্রেন্ড বানায় ফেললো, আর আমি বানাইলাম ছোট বোন। এক অদ্ভুত সমাজে বাস করি আমরা। ছাত্রীর সাথে প্রেম করলে সবাই বলে, "ছিঃ ছিঃ,তোর ছোট বোনের মতন একটা মেয়ে...কি নিচ মানসিকতার পশু রে বাবা..."।

আর ছোট বোন বানালে সবাই চোখ সরু করে বলে, "কচি মাইয়া দেখলেই ছোট বোন পাতাইতে মন চায়? প্রেম করার মতলব, না বাবাজি?" কিন্তু কেউ বুঝলো না কেন এই আক্রার বাজারে দিনের পর দিন লস খেয়ে খেয়ে,গাঁটের পয়সা ফেলে নোটস কপি করে,বই , জন্মদিনে কাউকে স্নিকারসের প্যাকেট; কাউকে বা প্রিয় কিটক্যাটের বক্স কিনে দিয়ে, সপ্তাহে ৩ দিনের জায়গায় মাসে ১৫/১৬ দিন করে এই নিচ মানসিকতার ছাপ ফেলে চলেছি। নাহ, লাভ হয় নাই। কেউ বিরক্ত হয়ে বলেছে, ভাইয়া আপ্নার ফটোকপির মাঝখান দিয়ে মাঝখান দিয়ে পাতা নাই; ত্রিকোনোমিতি অনুশীলনী ৪ এর ২৭ নাম্বার প্রমানটা করেন দেখি পারলে। কেউবা ইলিশ মাছের মত নিস্পৃহভাবে পিথাগোরাসের বিকল্প প্রমান জানতে চেয়েছে। ক্লাস নাইন-টেনএ পড়ার সময় এক বিয়ের অনুষ্ঠানে এক বন্ধুর সাথে দেখা, সাথে তার পিচ্চি ছোট বোনটাও ছিল।

অল্প সময়ের মধ্যেই পিচ্চির সাথে খাতির করে ফেললাম। আম্মাকে বললাম, সুন্দর না এইটা? চল এইটাকে বাসায় নিয়ে যাই। শুনে আম্মা কি বুঝল আল্লাই মালুম, ফুপুর সাথে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে বলল, আগে পাশ করে চাকরি-বাকরি কিছু কর, তারপর না হয় দেখা যাবে!এখনো মনে আছে, এইটা শুনে আশে-পাশে যাওবা দু-একটা মেয়ে ছিলো যাদের দিকে একটু উকি-ঝুঁকি মারছিলাম, তাদের চোখে একটা বোনসুলভ কোমল হাসি ফুটিয়া উঠিল। টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা। এর মধ্যেই দেখছি কামালটা মোবাইলে একটু পর পর তার ছোট বোনের সাথে কথা বলছে।

ওর বোন বেচারা মাইগ্রেনের জন্য মেট্রিক পরীক্ষার প্রিপারেশান ভালোভাবে নিতে পারে নাই। কামাল তাই ফোনেই তাকে ইন্সট্রাকশান দিচ্ছিলো। ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করেই তাকে আবার খুলনায় দৌড়াতে হবে বোনকে পড়াতে। কথায় কথায় বললাম যে এইবার ছুটিতে খুলনা যাওয়া যায়। সেখানে এম্নিতেই ক্লাসের অনেক বন্ধুর বাড়ি , তার উপর নেইম ডিপার্টমেন্ট এর ট্যুর আছে, সেখানেও কিছু বন্ধু আছে।

কামালও খুশি হয়ে উঠলো, খুলনায় কি কি করা যাবে তার একটা লম্বা লিস্টি দিয়ে বসলো। "হুম, তোর ছোট বোনকেও দেখা যাবে"। শুনেই কামালের মুখ কালো হয়ে গেলো, সরু চোখে ফুটে উঠলো সেই বিশেষ দৃষ্টি, যার কথা আগেই বলেছি। আমেরিকার বোনের কাছে ফিরে যাই। তখন ওর বয়স বছর নয়।

বাংলাদেশে এসেছে, আমিও যথারীতি এক মূহুর্তের জন্যও ওকে কাছছাড়া করছি না। এর মধ্যেই এলো ভ্যালেন্টাইন্স ডে। বাসার সবাই মজা করে রাফার কাছে জানতে চাইলো ওর কোন ছেলেকে ভালো লাগে কিনা, আজকে কাকে সে ভ্যালেন্টাইন বানাতে চায়? রাফা এক মূহুর্ত ভাবলো; তারপর আমার হাত ধরে বলল, র‍্যাফানকে। (রাফা আমার অনেক ছোট হলেও আমাকে নাম ধরেই ডাকে,আর আমার রাফফান নামটাকে খুব সুন্দর করে বলে র‍্যাফান)। সামনে আসছে ১৪ই ফেব্রুয়ারি।

সাত-সাগর তের নদীর ওপারে আমার বোনটা আমার কথা ভাববে কিনা জানি না। তাতে কি। এতোগুলো বছর ধরে যে আমার ভ্যালেন্টাইন, এটুকু ছাড় তো তাকে দেয়াই যায়। ভালো থাকিস ভ্যালেন্টাইন বোন।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।