সপ্তাহের শেষ দিনে এসে সরকার ২১টি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার দিনক্ষণ নতুনভাবে বেঁধে দিয়েছে। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কোনো কোম্পানি আসতে ব্যর্থ হলে সেসব কোম্পানির প্রধানদের পদত্যাগ করতে হবে বলেও উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী।
শেয়ার ছাড়ার এ উদ্যোগকে বাজার বিশ্লেষকেরা স্বাগত জানালেও সিদ্ধান্তটি সময়মতো কতখানি বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে দ্বিধা রয়ে গেছে।
এমনকি এ সিদ্ধান্ত কতটুকু সময়োচিত হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাঁরা বলছেন, বাজার এমনতিই তারল্যসংকটে ভুগছে।
এ অবস্থায় জোগানের চেয়ে চাহিদা সৃষ্টি করা বেশি জরুরি। তাই চাহিদা না বাড়িয়ে জোগান বাড়ানো হলে বাজার নতুন করে চাপে পড়তে পারে।
সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার কম দামে কাউকে পাইয়ে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতেই এ সময় বেছে নেওয়া হয়েছে কি না, সে প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।
তবে ভিন্ন বক্তব্যও রয়েছে। বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, সরকারের শেয়ার এলে বাজারে নতুন গতি সঞ্চার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কারণ, এসব শেয়ার নতুন অনেক বিনিয়োগকারীকে আকৃষ্ট করবে।
যোগাযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আহমেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, এসব শেয়ার বিক্রির সময় অতিমূল্য আশা করা সরকারের ঠিক হবে না। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী শেয়ার বিক্রি অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ, থেমে থেমে বিক্রির উদ্যোগ বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এতে বিদ্যমান সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ারধারীরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হবেন—এ প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কম দামে পেলে তারা তো নতুন করে কিনে গড় মূল্য কমিয়ে আনার সুযোগ পাবে।
যেহেতু সরকারি কোম্পানিগুলোর আয় তুলনামূলক ভালো, তাই বলা যায়, শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরাই লাভবান হবেন।
এদিকে গত সপ্তাহেই টানা দরপতনের মধ্যে একটু আশার আলো হয়ে দেখা দিয়েছিল গত মঙ্গলবার বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে।
এদিন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাজার শিগগিরই স্থিতিশীল হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
তাঁর এ ইঙ্গিতের ভিত্তি কী, তা পরিষ্কার না হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কথাটির ওপর আস্থা রেখেছিলেন। সেদিনের মূল্যসূচকে মূলত এরই প্রভাব পড়েছিল।
কিন্তু কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে একই মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেন ভিন্ন কথা। তাঁর মতে, সূচক তিন-চার হাজার পয়েন্টের ঘরে নামলে অনেক বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যদিও তাঁর এ বক্তব্যের সঙ্গে বাজার বিশ্লেষকদের কেউই একমত নন।
তার পরও বক্তব্যটি বিনিয়োগকারীদের আস্থায় ফাটল ধরাতে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মুখ থেকে দুই ধরনের বক্তব্য আসায় বিনিয়োগকারীরা কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
টানা দরপতনে যখন পুরো বাজার আস্থার সংকটে ভুগছে, তখন এ ধরনের বক্তব্য বাজার সম্পর্কে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নতুন করে দ্বিধায় ফেলে দেয় তাঁদের।
এ কারণে যেসব বিনিয়োগকারী অব্যাহত দরপতনে শেয়ারের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে চলে এসেছে বলে বিনিয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তাঁরা আবার হাত গুটিয়ে ফেলেন। ফলে গত সপ্তাহের শেষ দুই দিন মূল্যসূচক কমার সঙ্গে সঙ্গে শেয়ারের লেনদেনও উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়।
বাজার পরিস্থিতি: ডিএসইতে গত সপ্তাহের শুরুতে সূচক ছিল সাত হাজার ১২৫ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট, শেষ দিনে যা ছয় হাজার ৫২৭ পয়েন্টে নেমে আসে। পাঁচ কর্মদিবসে সূচক কমেছে ৫৯৮ পয়েন্ট বা ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
আর লেনদেনের পরিমাণ চার হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা থেকে নেমে এসেছে তিন হাজার ৩৩৯ কোটি টাকায়। লেনদেন কমার হার প্রায় ২৭ শতাংশ।
ডিএসইতে গত সপ্তাহে ২৬৫টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বাড়ার তালিকায় ছিল মাত্র ১২টি কোম্পানি। কমার তালিকায় ছিল ২৫০টি।
লেনদেনের শীর্ষ ১০: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে গত সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষে ছিল: এনবিএল, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), গ্রামীণফোন, বেক্সিমকো, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস, তিতাস গ্যাস, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, সাউথইস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও এবি ব্যাংক।
দাম বাড়ার শীর্ষ ১০: জেমিনি সি ফুড, ফিনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, সপ্তম আইসিবি মিউচুয়াল ফান্ড, তৃতীয় আইসিবি মিউচুয়াল ফান্ড, স্টাইলক্র্যাফট, অষ্টম আইসিবি মিউচুয়াল ফান্ড, পঞ্চম আইসিবি মিউচুয়াল ফান্ড, ব্যাংক এশিয়া, আইবিবিএলপি বন্ড, দ্বিতীয় আইসিবি মিউচুয়াল ফান্ড।
দাম কমার শীর্ষ ১০: সমতা লেদার, সাফকো স্পিনিংস, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, রূপালী ইন্স্যুরেন্স, সিএমসি কামাল, তাল্লু স্পিনিং, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, সোনারগাঁও টেক্সটাইলস, দুলা মিয়া কটন ও সাভার রিফ্যাক্টরিজ।
উৎস:প্রথমআলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।