আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোবারকের ধনকুবের হওয়ার রহস্য

নাজমুল ইসলাম মকবুল

ফোর্বস সাময়িকীর শীর্ষ ধনীর তালিকায় ঘুরেফিরে একই চেহারাই আসে। কখনো বিল গেটস, কখনো বা কার্লোস স্লিম হেলু। তবে এ তালিকায় কখনোই আসেনি মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের নাম। অথচ সদ্য পদত্যাগী মিসরের এই সাবেক স্বৈরশাসকের সম্পদের পরিমাণ বিশ্বস্বীকৃত শীর্ষ ধনীদের চেয়েও বেশি। মোবারক গত তিন দশক মিসরে ক্ষমতায় ছিলেন।

এই সময়ে তিনি অনেক সম্পদ অর্জন করেছেন। ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ান মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, মোবারক ও তাঁর পরিবারের মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় সাত হাজার কোটি ডলার। অথচ এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মেক্সিকোর টেলিকম ব্যবসায়ী কার্লোস স্লিম হেলুর মোট সম্পদের মূল্য প্রায় পাঁচ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। আর দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী মার্কিন সফটওয়্যার নির্মাতা বিল গেটসের সম্পদের মূল্য পাঁচ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। হেলুর টেলিকম ব্যবসা আছে আর বিল গেটসের আছে সফটওয়্যার ব্যবসা।

কিন্তু হোসনি মোবারকের তো কোনো স্বীকৃত ব্যবসা নেই। তিনি ছিলেন সামরিক কর্মকর্তা। পরে হয়েছেন রাষ্ট্রপ্রধান। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে, এত সম্পদ তিনি অর্জন করলেন কী করে? সংবিধান স্থগিত রেখে গত ৩০ বছর দেশ চালিয়েছেন মোবারক। এই সময়েই তিনি হয়েছেন কালো টাকার মালিক।

রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনিই ছিলেন মিসরের সব ক্ষমতার মালিক। ফলে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি ও উন্নয়ন প্রকল্প থেকে তিনি বড় অঙ্কের ঘুষ নিতেন। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমনেই জামালের মতে, ‘এতদিন মিসরে কোনো জবাবদিহি ছিল না। কোন স্বচ্ছতার প্রয়োজনও ছিল না। মোবারক মিসরের অর্থনীতিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন ঠিকই; কিন্তু একচেটিয়াভাবে এর সুবিধা ভোগ করেছেন তিনি।

কাজ দেওয়ার বিনিময়ে ঘুষ পেয়েছেন, লাল ফিতার দৌরাত্মের কল্যাণে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়েছেন এবং স্বজনপ্রীতি করেছেন। এটা ছিল তাঁর আয়ের সবচেয়ে বড় উত্স। ’ মোবারক মিসরের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে কাজ করেছেন ঠিকই। কিন্তু তার সুফল সাধারণ জনগণের চেয়ে তিনিই বেশি পেয়েছেন। নিজের ও তাঁর পরিবার-পরিজনের পকেট ভারী করেছেন।

মোবারককে হয়তো এখনই ক্ষমতা ছাড়তে হতো না। কিন্তু ২০০৭ সালের অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর জন্য কাল হয়েছে। তিনি ওই মন্দা সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে দেশে বেকারত্ব বেড়েছে। তরুণদের মধ্যে বেড়েছে হতাশা।

তরুণেরা তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে, রাজপথে নেমে এসেছে। সম্ভবত এটাই এই গণ-অভ্যুত্থানের আসল কারণ। মোবারকের সম্পদের সঠিক হিসাব বের করা এবং তা প্রমাণ করা বেশ কষ্টসাধ্য হবে। এটা নিশ্চিত, তাঁর টাকা আর মিসরে নেই। তিনি যে কিছুটা বিলম্ব করে পদত্যাগ করলেন, ওই সময় তিনি নিরাপদে তাঁর অর্থ অন্যত্র সরিয়েছেন।

এ সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণও হয়তো গায়েব করে দিয়েছেন। এরই মধ্যে সুইডেন সরকার জানিয়েছে, তারা অস্থায়ীভাবে মোবারক ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্ভাব্য সব সম্পদ জব্দ করেছে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, ওই অর্থ মিসরে ফিরে যাবে। ব্রিটেনেও মোবারকের বেশ কয়েকটি ব্যাংক হিসাব আছে। লন্ডন, নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলস, বেভারলি হিল, শারম আল শেখসহ অনেক স্থানে মোবারক ও তাঁর পরিবারের অনেক জমিজমা রয়েছে।

এক সময় পশ্চিমাদের প্রিয়ভাজন এই লোকটির সম্পদের প্রকৃত হিসাব আদৌ কোনো দিন জানা যাবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ আছে। ইয়াহু নিউজ ও গার্ডিয়ান অবলম্বনে সুত্র: প্রথম আলো। Click This Link

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.