আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পঃ বৃত্তহীন (৬ষ্ঠ পর্ব)



খুব খুব পেতে ইচ্ছে করে ! কিন্তু আমি জানি সবই মায়াময়... কাছে এসে নয়, দূর থেকে এ এক ধরণের সময় যাপন । ধরো আমি তোমাকে বললাম- ''নীল, তোমার সেল নাম্বাটা দাও । আমি কথা বলব...। '' তুমি এড়িয়ে যাবে । ধরো তোমায় বললাম- ''চলো, ষোল ডিসেম্বর সারাদিন আমরা কোথাও ঘুড়ি ।

'' তুমি ওজুহাত দেখাবে দেখা না করার । যদি বলি- '' নীল, তোমার জন্য আমার মধ্যে প্রেম অনুভব করছি !'' তুমি হয়ত হেসেই কুটি কুটি হবে । আমাকে ভাববে পাগল । তাই না ? আর তাই ইচ্ছেগুলো খুন করি খুব গোপনে । আমরা যদি সতস্ফূর্ত হতাম , হয়ত সত্যি সত্যি তুমি আমার হাত ধরতে ।

অনেক গল্প ছিল তোমার সাথে... গল্পে গান ছিল । নদী ছিল... কিন্তু জানি, সবই তোমার অন্তর্জালে সময় যাপন আর কাব্য করা । দেব্ চিঠিতে কি এক অদ্ভুত রহস্যের জাল বিছিয়ে দিল ! অস্থির লাগছে আনীলার । তার চিঠি পাওয়ার কিছুক্ষণ পরই দেব্ চিঠি লিখেছে । দেব্ কি সত্যি সত্যি তার সাথে দেখা করতে চায় ? সে কি সত্যিই সিরিয়াস ? দেব্ কি তাকে ভালোবাসে ? আনীলা খুব ভালো করেই বুঝতে পারল, দেব্ আর তার মধ্যে এখন আর নিছক কাব্য খেলা অব্যাহত নেই ।

সেখানে খেলার ছলে একটু একটু করে জন্ম নিচ্ছে ভালোবাসা । এই খেলার শেষ কোথায়... সে কি লিখবে নাকি লিখবে না ! ভাবতে ভাবতেই লিখতে বসল দেব্ কে । -কয়েক দিন যবৎ দেখছি ঘর থেকে কম বের হচ্ছো । সারাক্ষণ একা ঘরে কি কর তুমি ? ক্লাসেও যাচ্ছ না... আনীলার ফুপু কখন রুমে এসেছে টের পায় নি সে। মৃদু চমকে উঠল ।

কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না । ফুপু বিছানায় বসতে বসতে বললেন- -এনি প্রোবলেম নীলা ? -নো প্রোবলেম ফুপি । এমনি...রেস্ট নিচ্ছি কয়েকদিন যাবৎ । বিষয়টি কে সহজ করার জন্য কবিতার খাতা বাড়িয়ে দিয়ে বলল- -ফুপি দেখতো এই কবিতাটা কেমন হয়েছে... কবিতা পড়া শেষ করে ফুপু বললেন- -চমৎকার হয়েছে । তুমি বরাবরই খুব ভালো লিখ ।

মিষ্টি হেসে আনীলা বলল- -লাভ ইউ ফুপি ! -লাভ ইউ সোনা । শুনেছতো, পরশু তোমার আব্বু-আম্মু আসছেন না । -ওমা ! কেন ? -দু'জনেই সরাসরি গ্রামের বাড়িতে যাবেন । -হুমম...অনেক দিন যাওয়া হয় না । তাছাড়া আব্বু-আম্মুর নাইস একটা ভ্রমণও হবে ।

-তা ঠিক... আরও কিছু টুকটাক কথা বলে ফুপু নিজের রুমের দিকে চলে গেলেন । আনীলা দেব্ কে লেখা তার চিঠিটা পোস্ট করল । সময়গুলো সময়ের পথে অবিরাম ছুটে চলেছে... অথচ মেয়েটি একা ! খুব একা... দূর থেকে তার প্রেমে হয়ত অনেকেই পড়েছে কিন্তু কাছে এসে কেউ বলেনি- এইতো আমি তোমার আমি । হাত বাড়াও... তোমার আমি কে দু'হাতে আকড়ে ধরো পরম নির্ভরতায় । কেউ বলেনি ! কেউ আসেনি... এভাবেই কেটে যায় নিষ্ঠুর সময়গুলো... মেয়েটি খুব ভীতু ! সেল নাম্বার, ১৬ ডিসেম্বরে ভালোবাসার মানুষটির হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো... এসব কিছুই হবে না তার ! দূর থেকে ভালোবাসা যায়... চোখের জল যেন এক-একটা উত্তাল ঢেউ ! তুমি কখনোই পারবেনা নীলের কাছে আসতে ।

হয়ত এখন চিঠিটি পড়ে তার জন্য কষ্ট পাবে... তুমি কি কষ্ট পাচ্ছ দেব্ ? আমি কষ্ট পাচ্ছিনা ! প্রায় সাথে সাথেই দেব্ লিখল । দু লাইনের লেখাটায় অসংখ্য কষ্টের ভাষা উঁকি দিয়ে গেল... ভালো থেকো নীল ! আজ তোমাকে খুব মিস্ করছি । ভাল থেকো তুমি ! দেব্ এভাবে কেন লিখল ভেবে পেল না সে । তার চিঠির অনুরূপে এই কথাগুলো বেমানান । দেব্ কি তাকে আর লিখবে না ? অজানা আতঙ্ক গ্রাস করতে লাগল...সে লিখল- তুমি কি চলে যাচ্ছ? জানতাম...চলে যাবে ! না !আমি কষ্ট পাচ্ছি না ! শুধু নতুন করে একটা কষ্ট পুরোনোর সাথে যোগ হল... তুমি কি আমাকে আর লিখবে না ? আমিও যে তোমাকে মিস্ করি ! তুমি কি বুঝতে পারনা ?... শোন নীল, আমি জানি তুমি খুব একা ।

আমার মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি কষ্টবিলাসি । কোন বৃত্তের মধ্যে বাঁধা পড়তে চাও না তুমি । আমি তোমাকে বুঝতে পারি নীল । আমি তোমাকে ভালোবাসি ! মনে মনে বহুবার চিৎকার করে বলেছি- '' আমি তোমার !'' কিন্তু তুমি শুনতে পাও নি । আজ বুঝলাম, তুমি আমার ডাক শুনতে পাওনা... তা না হলে তুমি ভাবতে না যে , আমি তোমাকে আর লিখব না ।

তারমানে , তুমি আমাকে চেন নি এখনো... এটুকু পড়েই থামল আনীলা । বিব্রত বোধ করছে । তার বোঝার ক্ষমতা কি কমে গেল ! মনে মনে খুব রাগ হলো নিজের ওপর । দেব্ আরো লিখেছে- আমি তোমার সব অভিমান মুছে দিতে চাই । এসো... হাত বাড়াও ।

ভয় পেয়ো না । আমি তোমার । তবে, আমাকে যদি চিনতে পারো....তবেই এসো । লাভ ইউ ! তোমাকে বুঝি বলেই হয়ত এতটা ভালোবেসে ফেলেছি । তোমাকে ছেড়ে কোনদিন যেতে পারব না আমি।

নীল, চলো ষোল ডিসেম্বর আমরা মুক্ত হই । হবে? প্রচন্ড আবেগে কাঁপতে কাঁপতে আনীলা লিখল- হবো !

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।