খুব খুব পেতে ইচ্ছে করে !
কিন্তু আমি জানি সবই মায়াময়...
কাছে এসে নয়, দূর থেকে এ এক ধরণের সময় যাপন । ধরো আমি তোমাকে বললাম- ''নীল, তোমার সেল নাম্বাটা দাও । আমি কথা বলব...। '' তুমি এড়িয়ে যাবে । ধরো তোমায় বললাম- ''চলো, ষোল ডিসেম্বর সারাদিন আমরা কোথাও ঘুড়ি ।
'' তুমি ওজুহাত দেখাবে দেখা না করার । যদি বলি- '' নীল, তোমার জন্য আমার মধ্যে প্রেম অনুভব করছি !'' তুমি হয়ত হেসেই কুটি কুটি হবে । আমাকে ভাববে পাগল । তাই না ?
আর তাই ইচ্ছেগুলো খুন করি খুব গোপনে । আমরা যদি সতস্ফূর্ত হতাম , হয়ত সত্যি সত্যি তুমি আমার হাত ধরতে ।
অনেক গল্প ছিল তোমার সাথে...
গল্পে গান ছিল । নদী ছিল...
কিন্তু জানি, সবই তোমার অন্তর্জালে সময় যাপন
আর কাব্য করা ।
দেব্ চিঠিতে কি এক অদ্ভুত রহস্যের জাল বিছিয়ে দিল ! অস্থির লাগছে আনীলার । তার চিঠি পাওয়ার কিছুক্ষণ পরই দেব্ চিঠি লিখেছে । দেব্ কি সত্যি সত্যি তার সাথে দেখা করতে চায় ? সে কি সত্যিই সিরিয়াস ? দেব্ কি তাকে ভালোবাসে ? আনীলা খুব ভালো করেই বুঝতে পারল, দেব্ আর তার মধ্যে এখন আর নিছক কাব্য খেলা অব্যাহত নেই ।
সেখানে খেলার ছলে একটু একটু করে জন্ম নিচ্ছে ভালোবাসা । এই খেলার শেষ কোথায়...
সে কি লিখবে নাকি লিখবে না ! ভাবতে ভাবতেই লিখতে বসল দেব্ কে ।
-কয়েক দিন যবৎ দেখছি ঘর থেকে কম বের হচ্ছো । সারাক্ষণ একা ঘরে কি কর তুমি ? ক্লাসেও যাচ্ছ না...
আনীলার ফুপু কখন রুমে এসেছে টের পায় নি সে। মৃদু চমকে উঠল ।
কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না । ফুপু বিছানায় বসতে বসতে বললেন-
-এনি প্রোবলেম নীলা ?
-নো প্রোবলেম ফুপি । এমনি...রেস্ট নিচ্ছি কয়েকদিন যাবৎ ।
বিষয়টি কে সহজ করার জন্য কবিতার খাতা বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
-ফুপি দেখতো এই কবিতাটা কেমন হয়েছে...
কবিতা পড়া শেষ করে ফুপু বললেন-
-চমৎকার হয়েছে । তুমি বরাবরই খুব ভালো লিখ ।
মিষ্টি হেসে আনীলা বলল-
-লাভ ইউ ফুপি !
-লাভ ইউ সোনা । শুনেছতো, পরশু তোমার আব্বু-আম্মু আসছেন না ।
-ওমা ! কেন ?
-দু'জনেই সরাসরি গ্রামের বাড়িতে যাবেন ।
-হুমম...অনেক দিন যাওয়া হয় না । তাছাড়া আব্বু-আম্মুর নাইস একটা ভ্রমণও হবে ।
-তা ঠিক...
আরও কিছু টুকটাক কথা বলে ফুপু নিজের রুমের দিকে চলে গেলেন । আনীলা দেব্ কে লেখা তার চিঠিটা পোস্ট করল ।
সময়গুলো সময়ের পথে অবিরাম ছুটে চলেছে...
অথচ মেয়েটি একা !
খুব একা...
দূর থেকে তার প্রেমে হয়ত অনেকেই পড়েছে
কিন্তু কাছে এসে কেউ বলেনি-
এইতো আমি
তোমার আমি । হাত বাড়াও...
তোমার আমি কে দু'হাতে আকড়ে ধরো পরম নির্ভরতায় ।
কেউ বলেনি ! কেউ আসেনি...
এভাবেই কেটে যায় নিষ্ঠুর সময়গুলো...
মেয়েটি খুব ভীতু !
সেল নাম্বার,
১৬ ডিসেম্বরে ভালোবাসার মানুষটির হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো...
এসব কিছুই হবে না তার !
দূর থেকে ভালোবাসা যায়...
চোখের জল যেন এক-একটা উত্তাল ঢেউ !
তুমি কখনোই পারবেনা নীলের কাছে আসতে ।
হয়ত এখন চিঠিটি পড়ে
তার জন্য কষ্ট পাবে...
তুমি কি কষ্ট পাচ্ছ দেব্ ?
আমি কষ্ট পাচ্ছিনা !
প্রায় সাথে সাথেই দেব্ লিখল । দু লাইনের লেখাটায় অসংখ্য কষ্টের ভাষা উঁকি দিয়ে গেল...
ভালো থেকো নীল !
আজ তোমাকে খুব মিস্ করছি । ভাল থেকো তুমি !
দেব্ এভাবে কেন লিখল ভেবে পেল না সে । তার চিঠির অনুরূপে এই কথাগুলো বেমানান । দেব্ কি তাকে আর লিখবে না ? অজানা আতঙ্ক গ্রাস করতে লাগল...সে লিখল-
তুমি কি চলে যাচ্ছ? জানতাম...চলে যাবে !
না !আমি কষ্ট পাচ্ছি না !
শুধু নতুন করে একটা কষ্ট পুরোনোর সাথে যোগ হল...
তুমি কি আমাকে আর লিখবে না ?
আমিও যে তোমাকে মিস্ করি ! তুমি কি বুঝতে পারনা ?...
শোন নীল, আমি জানি তুমি খুব একা ।
আমার মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি কষ্টবিলাসি । কোন বৃত্তের মধ্যে বাঁধা পড়তে চাও না তুমি ।
আমি তোমাকে বুঝতে পারি নীল । আমি তোমাকে ভালোবাসি ! মনে মনে বহুবার চিৎকার করে বলেছি- '' আমি তোমার !'' কিন্তু তুমি শুনতে পাও নি । আজ বুঝলাম, তুমি আমার ডাক শুনতে পাওনা...
তা না হলে তুমি ভাবতে না যে , আমি তোমাকে আর লিখব না ।
তারমানে , তুমি আমাকে চেন নি এখনো...
এটুকু পড়েই থামল আনীলা । বিব্রত বোধ করছে । তার বোঝার ক্ষমতা কি কমে গেল ! মনে মনে খুব রাগ হলো নিজের ওপর ।
দেব্ আরো লিখেছে-
আমি তোমার সব অভিমান মুছে দিতে চাই ।
এসো...
হাত বাড়াও ।
ভয় পেয়ো না ।
আমি তোমার । তবে, আমাকে যদি চিনতে পারো....তবেই এসো ।
লাভ ইউ !
তোমাকে বুঝি বলেই হয়ত এতটা ভালোবেসে ফেলেছি ।
তোমাকে ছেড়ে কোনদিন যেতে পারব না আমি।
নীল, চলো ষোল ডিসেম্বর আমরা মুক্ত হই ।
হবে?
প্রচন্ড আবেগে কাঁপতে কাঁপতে আনীলা লিখল-
হবো !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।