আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চলছি আমরা কোন পথে?



মনে হয় এই সেদিন শুরু হয়েছে একবিংশ শতাব্দীর তথা মিলেনিয়ামের যাত্রা। নিশ্চয় অনেকের স্মরণ আছে সেই “ওয়াই টু কে সিনড্রোমস্”, বিশ্বের কম্পিউটার সিস্টেম বন্ধ হয়ে যাবার ভয়, কেউ বা বলছিল ২০০০ সালে ধ্বংস হয়ে যাবে দুনিয়া, কত কী আতংক বিরাজ করছিল তখন সর্বত্র! শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। তবে আমরা অনুভব না করলেও এই মিলেনিয়ামের এক দশক কিন্তু চলে গেছে চোখের পলকে। সময়ের সাথে সাথে মানব জাতি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অর্জন করেছে অনেক সাফল্য। আর সে সাফল্য মানুষের বৈষয়িক জীবনে যেমন দৈনন্দিন চলাফিরা, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ইত্যাদি সকল স্তরে বয়ে এনেছে অসংখ্য কল্যাণ।

পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট ইত্যাদির মধ্যমে মুহূর্তে মধ্যে মানুষ সক্ষম হচ্ছে আদান প্রদান করতে অসংখ্য তথ্য। তবে বিজ্ঞানের এ অভূতপূর্ব সাফল্য ঘটছে এমন এক সভ্যতায় যাকে বলা যায় সেক্যুলার বস্তুতান্ত্রিক আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতা। কেউ মানতে না চাইলেও বাস্তবতা হল আধুনিক পশ্চিমা এই সভ্যতা কিন্তু খৃষ্টান সভ্যতা নয় বরং বলা যায় সেক্যুলার বস্তুতান্ত্রিক সভ্যতা। ধর্মবিহীন সমাজ গড়ার আদর্শের এ সভ্যতার প্রভাব আজ বিশ্ব জুড়ে। পশ্চিমা বিশ্বের নেতৃত্বে আমরা এমন এক সভ্যতার যাত্রা শুরু করেছি যেথায় বস্তুতান্ত্রিক চিন্তাধারার বিকাশ হচ্ছে সমাদৃত ও প্রশংসিত যার ফলে পরোপকারিতা, একে অন্যের সাহায্য সহযোগিতার স্পৃহা ও খোদা ভীতির পরিবর্তে মানুষের মনে বেড়ে চলছে দ্বৈত নীতি, নিজের জন্য ন্যায় বিচার অন্যের বেলায় হউক অবিচার, লোভ লালসার মনোবৃত্তি।

একই সাথে মানুষ হয়ে পড়ছে লাগামহীন বিলাসিতাপ্রবণ ভোগবাদী, স্বার্থবাদী ও ইগোসেন্ট্রীক। আর এটাই যেন বর্তমান সভ্যতার গর্বিত মানুষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, যে দিকে দৃষ্টি যায় দেখা যায় সবাই যেন এই একই পথের পথিক তাই দোষ দিবেন কাকে? এখন প্রশ্ন হচ্ছে অতীতের অনেক সভ্যতার যেভাবে পতন হয়েছে আধুনিক এ সভ্যতার কি পতন ঘটবে? আর সেই সাথে প্রশ্ন আসে কোন সভ্যতা ঠিকে থাকার জন্য বিজ্ঞানের সফলতাই কি যথেষ্ট? তবে এ বিষয়ে আলোচনার আগে বিজ্ঞান এবং সভ্যতা কী তা বুঝা দরকার। বিজ্ঞান ও সভ্যতা: বিজ্ঞান আর সভ্যতা অবশ্যই এক জিনিস নয়। বিজ্ঞান হচ্ছে পার্থিব বিষয়ের সত্যে উপনীত হওয়ার জন্য অনুসন্ধানী ও গবেষণালব্ধ প্রচেষ্টার ফল, আর তাই বিজ্ঞানকে বলা হয় প্রাকৃতিক বিষয়ে জানার জ্ঞান-সমৃদ্ধ সর্বোত্তম মধ্যাম। আর সভ্যতা গড়ে উঠে মানুষের জীবন দর্শন, কালচার ও ধর্মীয় মূল্যবোধে।

বিজ্ঞানের সঠিক ব্যবহারের মধ্যে যেমন প্রভূত কল্যাণ নিহীত, তেমনি এর অপব্যবহার অকল্যাণকর ও সর্বনাশা ভবিষ্যতকে ত্বরান্বিত করবে বৈকি। বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা পার্থিব সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা পূরণের জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখে বটে। কিন্তু তাই বলে শুধুমাত্র বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা সাধন করতে পারা বা না পারাকে এককভাবে উন্নত মানব সভ্যতার পরিচায়ক হিসেবে গণ্য করা ঠিক নয়। উন্নত মানব সভ্যতা বলতে সামগ্রিক অর্থে অবশ্যই উন্নত মানবিক গুণাবলীর সম্মিলিত স্ফুরনকেই বোঝানো যেতে পারে। অতএব কোন এক সভ্যতাকে শুধুমাত্র তার সমকালীন বিজ্ঞানের উন্নতির মাপকাঠি দিয়ে একটি আদর্শ সভ্যতার স্বীকৃতি দেয়া যায় না।

সভ্যতার সফলতা বিচার করা উচিত মানবিক, সামাজিক ও পারস্পরিক কার্যকর্মে ন্যায় বিচার ও নৈতিকতার মানদন্ডে। সে বিবেচনায় আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতাকে আদর্শ সভ্যতা বলা যায় না। অতীতের অনেক সভ্যতা ধ্বংশ হয়ে গিয়েছে এবং তার কারণ হয়তবা আমরা জানিনা। তবে কোরআন বলে প্রাচীন সভ্যতার সবারই ধ্বংশের মূল কারণ হল খোদা-দ্রোহীতা। (সুরা কাফ ৫০:১২-১৪) আর খোদা-দ্রোহীতা যেখানে প্রবল সে সভ্যতায় ন্যায়বিচার ও সামাজিক ভারসাম্যতা থাকেনা সে হিসাবে চিন্তা করলে দেখা যায় আধুনিক বস্তুতান্ত্রিক সভ্যতা সে দিকেই যাচ্ছে।

সাম্রাজ্যবাদ ও সভ্যতা: সাম্রাজ্য বিস্তার করতে প্রয়োজন সামরিক শক্তি কিন্তু সভ্যতার বিকাশে দরকার আর্দশ চিন্তা ও মতাদর্শ বা আইডিয়ার শক্তি যা পরিচালিত হয় মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মানুষের কল্যাণে উন্নত ভবিষ্যতের আশায়। কিন্তু যখন কোন আইডিয়া বা মতাদর্শ জোরপূর্বক মানুষের উপর চাপিয়ে দিতে হয় তখনই ন্যায়বিচার বিঘ্নিত হয়। একটা বৃহত্তর সংখ্যালগু জনগুষ্ঠি যদি শান্তি ও নিরাপত্তা এবং ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয় তখন শুরু হয় সভ্যতার পতন। সভ্যতার উত্থান ও পতন: আমরা যদি অতীত সভ্যতার ইতিহাস দেখি তাহলে দেখতে পাই অতীতের সকল সভ্যতা তাদের প্রভাব বিস্তারে তথা সাফল্যেরর চূড়াতে উঠতে লেগেছে প্রচুর সময় কিন্ত পতন হয়েছে দ্রুত। তবে একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে ইসলামী সভ্যতার, যা সাফল্য অর্জন করেছে অতি অল্প সময়ে।

তখনকার দুটা পরাশক্তিকে দ্রুত পরাজিত করে ইসলামী সভ্যতার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে । বস্তুত ইসলামী সভ্যতার প্রদীপ আগের মত আলোকিত না হলেও নিভে যায়নি চিরতরে অর্থাৎ ইসলামী সভ্যতা বিলীন হয়ে যায়নি সম্পূর্ণরূপে। ইসলামি সভ্যতার উত্থান: মহানবী মোহাম্মদ (সঃ) এর নেতৃত্বে ইসলামের যাত্রা শুরু হওয়ার সাথে সাথে অতি দ্রুত বিস্তার লাভ করে চর্তুদিকে। মহানবী মোহাম্মদ (সঃ) এর মৃত্যুর পর মাত্র ২০ বছরে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে সিরিয়া, প্যালেষ্টাইন, মিসর ও পারস্য পর্যন্ত। ইসলামের স্বর্ণ যুগ সাধারণত ৭ম শতাব্দী থেকে ১৩শ শতাব্দী পর্যন্ত ছিল।

ঐতিহাসিক হাওয়ার্ড লিখেছেন মুসলিম শিল্পী এবং বিজ্ঞানী, যুবরাজ ও শ্রমিক সবাই মিলে গড়ে তুলেন এক অন্যন্য সংস্কৃতি যা পৃথিবীর সর্বত্র সমাজকে পরোক্ষ বা প্রতেক্ষ ভাবে প্রভাবিত করে। (Howard R. Turner writes: "Muslim artists and scientists, princes and laborers together made a unique culture that has directly and indirectly influenced societies on every continent."[) ইসলামি সভ্যতার প্রভাব হরন: কম পক্ষে গত তিনশ বছর ধরে মুসলিম স্কলাররা ইসলামী সভ্যতার প্রভাব হারানোর কারণ খুঁজছেন এবং এ ব্যপারে তাদের মতামতকে দুভাগে ভাগ করা যায়: সবচেয়ে জনপ্রিয় মত হল মুসলিমরা ইসলামের আসল শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে তাদের পতন হয়েছে তাই বলা হয় “আমরা যদি খাঁটি মুসলিম হয়ে যেতে পারি তা হলে পুরানো ঐতিহ্য ও শক্তি ফিরিয়ে পাব"। দ্বিতীয় মত হল, আমাদের দূর্গতি শুরু হয়েছে পশ্চিমা শক্তির দাপটে। পশ্চিমা সাম্রাজ্য কর্তৃক মুসলিম দেশ ও সম্পদ দখল করে তাদেরকে উপনিবেশ তথা কলোনী করার কারণে। আর এ সমস্যার সমাধানে অনেকের মত হল আমরা দুনিয়াদারীর কাজকর্ম কম করে ইসলামী অধ্যাত্মিক শিক্ষায় বেশী মনযোগ দিলে আমরা আবার বিশ্ব নেতৃত্ব ফিরিয়ে পাবে।

উপরোক্ত উভয় পর্যবেক্ষণই আংশিক সঠিক। তবে ঘটনার কারণ ও প্রতিফল সর্ম্পকে স্বচ্ছ ধারণা পেতে মুসলিমরা এখনও দিশাহারা। আর এই অস্বচ্ছ ধারণার অবসান না হলে অতীতের স্বপ্নবিভোর মানসিকতা থেকে বাহির হয়ে বাস্তব ভিত্তিক ফলপ্রসু পদক্ষেপ নেয়া অসম্ভব। তাই দেখা যায় মুসলিমরা এদিকে অতীতের স্বপ্নে একধরণের নষ্টালজিয়ায় ভুগছেন অন্যদিকে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার আসল শিক্ষ্যা তথা মর্ম না বুঝে শুধুমাত্র তার বহ্যিক অনুষ্ঠানিকতা পালন করাই যতেষ্ট মনে করছেন। তাই মসজিদে মুসল্লির ভিড় কিংবা বিশ্ব ইস্তেমায় লাখ মানুষের সমাবেশ এমনকি হজের মাঠে মিলিয়ন ঊর্ধ্বে হাজীদের উপস্থিতি কোন কিছুই মুসলিম সমাজের দূর্নীতি, অসৎ কাজ, অন্যায় অবিচার বা অপরাধ দমনে, দারিদ্র বিমোচনে বা মুসলিম উম্মাহর বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে কোন কিছুতেই কাজে আসছেনা।

মুসলিম দেশ দখল এবং ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি দিয়ে মুসলিম সমাজের অনৈক্য সৃষ্টির জন্য পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে দায়ী করা হয়। কিন্তু ইসলামের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় এ সমস্যার জন্য শুধুমাত্র পশ্চিমা শক্তিকে দোষ দেয়া যায়না। নবী (সঃ) এর মৃত্যুর পর থেকেই তো মুসলিমদের মাঝে অনৈক্য এবং মারামারি শুরু হয়ে যায়। শিয়া-সুন্নী সহ বিভিন্ন মতাদর্শের মাঝে মতানৈক্য চলে আসছে সেই শুরু থেকে। একটি সংক্ষিপ্ত ঐতিহাসিক পর্যালোচনা।

ইসলামী শিক্ষা থেকে দুরে সরে যাওয়ার প্রবণাতা এক ধরনে মুসলিমদের মাঝে শুরু হয় রাসুল (সঃ) মৃত্যুর পরই (৬৩২)। মদীনার থেকে বেশী দূরে নয় এমন অনেক গোত্রের লোকেরা প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করে বসে যাদেরকে অতি শক্ত হস্তে দমন করতে হয়েছিল ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বক্করকে (রাঃ) এবং অনেক প্রচেষ্টার পর শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী গোত্র বা কাবিলাদেরকে বশে আনা সম্ভব হয়েছিল। দ্বিতীয় খালিফা হযরত ওমর (রাঃ) দশ বছর শাসন করার পরই আততায়ীর হাতে প্রান হারান। ৩য় খালিফার শাসন কালে তার সরকারের অব্যবস্থাপনার অভিযোগে আততায়ীর হাতে নিহত হন। ৪র্থ খালিফা হযরত আলী (রাঃ) সঙ্গে বিভিন্ন মতবিরোধের কারনে মহা নবীর (সঃ) বেশ কিছু সাহাবীদের সাথে গৃহযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয় আর শেষ পর্যন্ত উগ্রপন্থী খারেজাইটদের হাতে তাঁকেও প্রাণ দিতে হয়।

তাদের অভিযোগ ছিল হযরত আলী (রাঃ) আপোষ করায় নাকি আল্লাহর আাইন ভঙ্গ করেছেন। তবে এত উত্তেজনা ও বিবাদ ভাজনের মাঝেও সিরিয়া, পেলেস্টাইন, মিশর এবং পার্সীয়া সহ বিভিন্ন দিকে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে নবী মোহাম্মদ (সঃ) এর মৃত্যুর মাত্র ২০ বছরের মধ্যে। ৬৬১ খৃঃ মু'য়াবিয়া যিনি হযরত আলী (রাঃ) বিপরীতে খেলাফতের প্রতিযোগী ছিলেন ৫ম খালিফা হন এবং তিনি বাইজানটাইন ও পারস্য সাম্রাজ্যের কলাকৌশল অনুসরণ করে ইসলামী সাম্রাজ্যকে সুসংহত করেন। তাঁর অনুপযুক্ত পুত্র ইয়াজীদকে তিনি খালিফা মনোনীত করার মধ্যামে খালিফা নির্বাচনে ইসলামের প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে উত্তরাধীকারি ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন এবং সেই উত্তরাধীকারি প্রথা চালু করে উমাইয়া ডাইনেষ্টি শুরু করলেন। এদিকে ইয়াজিদের প্রশাসনকে অবৈধ ঘোষণা করে মদীনা থেকে আলী রাঃ পুত্র হুসেইন ২০ বছর পর শুরু করেন ইসলামের ২য় গৃহ যুদ্ধ।

কিন্তু ইয়াজিদের সৈন্য বাহিনী উমাইয়া বংশের কাছে ক্ষমতা কব্জা করে রাখার উদ্দেশ্যে হুসেইনকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে নিহত করে। তখন থেকে শুরু হয় শিয়া সুন্নীর রাজনৈতিক বিভেদ ও বিদ্বেষ। হজরত হুসেনের ছেলে জয়নুল অবেদিন অসুস্থতার কারণে যুদ্ধে যোগ দেন নাই তাই বেঁচে যান। তার পর ৭৫০ খৃঃ সালে আব্দুল আব্বাস শিয়াদের সাহায্য সমর্থনে দীর্ঘ ৯০ বৎসরের উমাইয়া বংশের খেলাফত শাসনের ইতি ঘটান। আব্বাসিয়ারা তাদের রাজত্ব মজবুত করতে দ্রুত উমাইয়া বংশের সবাইকে হত্যা করে।

তবে ৭৫৬ সালে বেঁচে যাওয়া উমাইয়া বংশের উত্তরসুরীরা সুদূর স্পেইনে গিয়ে পাল্টা আরেক সাম্রাজ্য প্রতিষ্টায় সমর্থ হয়। ইসলাম বিস্তারের কারণ কী? তাই স্বভাবতই প্রশ্ন আসে মুসলিম নেতৃত্বে বা লিডারশীপের মাঝে বিদ্যমান এত ক্ষমতার লড়াই, বিভেদ বিভক্তি ও হানা হানি সত্ত্বেও ইসলাম এত দ্রুত সর্বত্র কীভাবে প্রসার লাভ করল? এর উত্তরে হয়তবা বলতে পারেন সবই আল্লাহর ইচ্ছা! কথা হল সবকিছুই যদি আল্লাহর ইচ্ছা হয় তাহলে আমাদের প্রচেষ্টা আর ভাবনা কীসের? সে যাক, একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল ইসলাম সব সময় বিজিত দেশের জন মানুষের কাছে একটি উদার, সহনশীল, ন্যায় ও সাম্যের (egalitarian religion of tolerance and liberation) ধর্ম হিসাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। পরাজিত বাইজানটাইন ও পারস্য সাম্যাজ্যে শাসকদের অত্যাচার ও অবিচারের পরিবর্তে জনগণ ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় মুক্তি ও শান্তির বার্তা পেয়েছে। পরবর্তি সময়ে ভারতীয় সমাজে বিদ্যমান উঁচু-নীচু জাতিভেদ তথা ক্লাস সিষ্টেম এবং শাসক গুষ্টির সীমাহীন অন্যায় অবিচারের সামনে যখন ইসলামের ন্যায় বিচার ও সাম্যের বাণী কোটি কোটি মানুষকে আকৃষ্ট করে। পরাজিত রাজ্যের মানুষের জিবন, ধর্ম ও সম্পদ মুসলিম শাসকদের কাছে নিরাপদ ছিল তা নাহলে আটশ বছরের ঊর্ধে মুসলিম শাসিত ভারতবর্ষে এখনও হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ট জনসংখ্যা থাকার কথা ছিলনা।

নতুন মুসলিম শাসিত দেশের অমুসলিমদেরকে রাষ্ট্রের স্বার্থে যুদ্ধে যেতে হতনা, জাকাত দিতে হতনা যার পরিবর্তে অমুসলিমদেরকে (আরবি ভাষায় জিম্মি বলা হয়) জিজিয়া (তথা নিরাপত্তার ট্যাক্স) যা পূর্ববর্তী অমুসলিম শাসকদের একতরফা ধার্য্যকৃত খাজনা ও উচ্চ হারের ট্যাক্স থেকে অনকে কম ছিল। যার ফলে নব্য প্রজারা তাদের জীবন, সহায় সম্পত্তি, ধর্ম ও সাংষ্কৃতিক আচার আচরণের নিরাপত্তা পায় মুসলিম শাসন আমলে। এদিকে মুসলিমরা স্থানীয় অনেক সাংস্কৃতি স্বানন্দে গ্রহণ করে পারস্পারিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নজীর স্থাপন করে। আব্বাসি খিলাফতের সময়ে মুলিমরা ৭ম থেকে ১৩ শতাব্দী পর্যন্ত ছিল মুসলিমদের স্বর্ণ যুগ ইউরোপ তখন ছিল অন্ধকার তথা ডার্ক এইজে। সে যুগে মুসলিম সমাজ জ্ঞান-বিজ্ঞানে ও বিভিন্ন শিল্পকলায় প্রভুত অগ্রগামী হতে পেরেছিল এজন্য যে তখনকার ইসলামী স্কলাররা খোলা মনে বিভিন্ন প্রাচীন সূত্র যেমন গ্রীক ইত্যাদি থেকে জ্ঞান আহরণে কোন প্রকার কার্পণ্য করেন নাই।

তখনকার একজন বৈজ্ঞানিক নিজেকে মুসলিম না বলে নাস্তিক প্রমানের প্রয়োজন মনে করেননি যেভাবে বর্তমান যুগের কিছু সংখ্যক বৈজ্ঞানিক এবং তাদের অন্ধ অনুসারী তথাকথিত বুদ্ধিজিবীরা করে থাকেন। উপসংহারে একথা বলা যায় মুসলিমরা ইসলামী সভ্যতার পুনঃজাগরণে আসলেই বর্তমান সভ্যতাকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। তবে তা হতে পারে যদি অমরা আবার ইসলামকে একটি প্রগিতশীল,শান্তিপূর্ন জীবন ব্যবস্থা হিসাবে মানুষের কাছে পৌছাতে পারি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.