গেল কয়েক বছর রমজান মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ব্যাংকগুলোতে তারল্যের ব্যাপক অভাব দেখা দিত। সে সময়গুলোতে চাঙ্গা হয় কলমানি মার্কেট (এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকের স্বল্প সময়ের ঋণ)। ঈদের বাকি সপ্তাহ খানেক। অথচ ব্যাংকগুলোতে তরল অর্থ অভাব নেই। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন এই পরিস্থিতি ব্যাংকিং খাতের জন্য কিছুটা অস্বাভাবিক। কারণ ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে পারছে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনা ভালো হওয়ায় এটা হয়েছে। যা স্বাভাবিক। মানুষ এখন ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত। দেশ জুড়ে চলছে কেনা-কাটা। নগদ টাকার জন্য ব্যাংকগুলোতেও গ্রাহকের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। কিন্তু এর প্রভাব পড়ছে না কলমানি মার্কেটে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকে টাকার আকাল নেই। তাই কলমানি মার্কেটেও মরা ভাব। ঈদের আগে নগদ টাকার চাহিদা বাড়ে। এ সময় শিল্পসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠান বেতন ও বোনাসের জন্য বড় অঙ্কের টাকা নেয় ব্যাংকগুলো থেকে। এ ছাড়া ব্যক্তি খাতেও চাহিদা মেটাতে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা নেওয়া হয়। এ কারণে প্রতি ঈদের আগে নগদ টাকার বাড়তি চাপ সামলাতে হিমশিম খায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ফলে কলমানি মার্কেট সুদের হার চড়তে থাকে। এবার ভিন্ন চিত্র। গ্রাহকের চাহিদা থাকলেও ব্যাংকের হাতে রয়েছে অঢেল টাকা। বিনিয়োগ না হওয়ায় অন্তত ৭২ হাজার কোটি টাকার তারল্য জমে আছে ব্যাংকগুলোতে। আর ওই তারল্য দিয়েই নগদ টাকার চাহিদা মেটাচ্ছে ব্যাংকগুলো। ২০১০ সালের ১৯ ডিসেম্বর ছিল মুদ্রাবাজারে নগদ টাকার সংকটের নজিরবিহীন দিন। ওইদিন ১৯০ শতাংশ সুদে কলমানি মার্কেট থেকে টাকা ধার করতে হয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে। নগদ টাকার এ রমরমা কারবার চলেছে পরের বছরও। তবে গত বছর থেকেই পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। আমানত টানতে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গুনলেও কলমানি লেনদেন হয়েছে ৭ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে। আর ঈদের আগে তা ১৮ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। এবার কলমানি মার্কেটে সুদের হার সাড়ে আট শতাংশের বেশি ওঠেনি। তবে তাও ব্যাংক থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লেনদেনে সাড়ে আট শতাংশে পেঁৗছেছে। আন্তঃব্যাংকিংয়ে তা সাড়ে সাত শতাংশ ছিল। গত এক সপ্তাহের কলমানি মার্কেটের লেনদেন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বেসরকারি ব্যাংকগুলো বড় আকারের কোনো লেনদেনে অংশ নেয়নি। সরকারি ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে তার কাছাকাছি দিয়েছেও। গত সপ্তাহে কলমানি মার্কেট থেকে বেশি ধার করেছে রূপালী ব্যাংক। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী, সোনালী ব্যাংক তিন হাজার কোটি টাকা ধার করলেও ধার দিয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে জনতা ব্যাংক কলমানি মার্কেট থেকে কোনো টাকা ধার করেনি।
টাকার চাহিদা বাড়লেও ব্যাংকগুলোর কলমানি মার্কেটে না যাওয়ার কারণ অতিরিক্ত তারল্য। সাম্প্রতিককালে ব্যাংকিং খাতে যে পরিমাণ আমানত জমা হয়েছে সে পরিমাণ বিনিয়োগ হয়নি। ফলে অঢেল টাকা জমে গেছে ব্যাংকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে চলতি বছরের জুনের মাঝামাঝি সময়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে ২০ শতাংশ, অথচ বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে মাত্র সাত দশমিক ২ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে ২২ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ঋণ বেড়েছে ১৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ১৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ, ঋণ বেড়েছে ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। বিদেশি মালিকানার ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে ১৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ঋণ বেড়েছে ৯ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের অপর এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের ৭২ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। বিনিয়োগ না হওয়ায় ব্যাংকে অতিরিক্ত তারল্য জমে যাওয়ার কারণেই এবার কলমানি মার্কেটে তেজিভাব নেই। এ ব্যাপারে বিআইবিএম-এর সাবেক প্রফেসর ড. আর এম দেবনাথ বলেন, আমানত বাড়লেও বাড়ছে না ব্যাংকিং খাতে ঋণ। বড় ধরনের বিনিয়োগেও যাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। এ অবস্থায় নিজেদের টাকা দিয়েই চাহিদা সামলাতে সক্ষম হচ্ছে অধিকাংশ ব্যাংক। কলমানি মার্কেটে যেতে হচ্ছে না।
তবে তহবিল ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকগুলোর দক্ষতা বাড়ার কারণেই কলমানি মার্কেটে সুদের হার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা অতিরিক্ত তারল্য কিছুটা ভূমিকা রাখছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা এখন অনেক ভালো হয়েছে। সঙ্গত কারণে বাজারে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায় না।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।