আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নৃশংসতার রাজনীতি



ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরীর ওমর গনি এমইএস কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ হয়েছে। তাতে উভয় গ্রুপের ৭ জন আহত হয়েছে। গত (২২শে ডিসেম্বর ২০১০ইং) বুধবার বেলা একটার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং গণশিক্ষা মন্ত্রী আফসারুল আমীনের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ ঘটে। আহতদের মধ্যে শওকতের হাতের কবজি কেটে দিয়েছে অপর গ্রুপ।

শওকত ঐ কলেজেরই বিবিএস অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র। পুলিশ সূত্র মতে, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের ক্যাডাররা চাইনিজ কুড়াল, হাতুড়ি, হকিস্টিক, রামদা ও প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেয়। এক গ্রুপ ক্যাম্পাসের সামনের গেইটে এবং অপর গ্রুপ ভিতরে অবস্থান নেয় এবং থেমে থেমে উভয় গ্রুপ একে অপরের উপর আক্রমণ চালায়। দলমত নির্বিশেষে যে কোনো ছাত্র, যে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে ‘‘হাতের কবজি কেটে ফেলার’’ মতো নৃশংস ও বর্বর ঘটনায় কে না ব্যথিত হয়ে থাকতে পারে? বিশেষ করে যখন দেখা যায় যে, সে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন ছাত্র এবং যারা এক লোমহর্ষক ঘটনা ঘটিয়েছে, তারাও তার সহপাঠি, একই প্রতিষ্ঠানের একই সংগঠনের ছাত্র, তখন বিষয়টি আরও অধিক বেদনাদায়কই মনে হয়। কারণ, যারা নিজ দলের লোকের সাথে এরূপ নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারে অপর দলের ছাত্র হলেতো সে তার মাথাই কেটে নিয়ে যেতে দ্বিধা করতো না।

প্রশ্ন জাগে আজ যারা ছাত্র, তারা আগামী দিনের সমাজ নেতা। কিন্তু শিক্ষা জীবনেই যাদের চরিত্র এত নির্মম-নিষ্ঠুর ও পাশবিক, কর্মজীবনে তাদের থেকে সমাজ কি লাভ করবে? এবং কি আশা করতে পারে? শিক্ষাঙ্গনে, রাজনীতিতে এ চরিত্রের লোকদের প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্ব থাকলে সেই সমাজ ও সেই দেশের শিক্ষাঙ্গনের সাথে সংশ্লিষ্টদের অবস্থা কি হতে পারে, তা এ থেকেই সহজে অনুমেয়। আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ দেহের সর্বাঙ্গে আজকাল অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি, হত্যা, লুট, জবরদখল, ইভটিজিং, নারী নির্যাতন ইত্যাদি যেসব মারাত্মক জখম দেখা দিয়েছে, এসব যে এ চরিত্র ও মানসিকতার শিক্ষিতদের দ্বারাই ঘটছে, তাতে কি কোনো সন্দেহ আছে? ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ দল হিসাবে যেখানে নিজেদের মূল প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও মর্যাদা রক্ষার্থেও ছাত্র সংগঠনটির সংযত হওয়া উচিত ছিল, সেক্ষেত্রে তার বিপরীত কর্মকান্ড করার পেছনে যে প্রশ্রয়জনিত আরেকটি দিকেরই এটি পরিণাম, এ থেকে তা স্পষ্ট। কেননা, তারা মনে করে এ জাতীয় দশটি অপরাধ করলেও যখন নিজ দলীয় সরকার হবার কারণে কোনো শাস্তির আশঙ্কা থাকে না, তাই তারা যা খুশি তাই করছে। অথচ পরিতাপের বিষয় হলো, এই মহল ও তাদের সংবাদপত্রই অপর একটি আদর্শ ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন থেকে প্রচার করে আসছে যে, ওরা নাকি হাত কাটার দল।

এই নির্মম ঘটনা সেই অসত্য রাজনীতি ও অসত্য প্রচারণাকেই নগ্নভাবে তুলে ধরেছে। অপেক্ষাকৃত ছোটরা বড়দের ও পূর্বসূরিদের কাছ থেকেই শিক্ষা নেয়। আমাদের দেশে বর্তমানে যেই প্রতিশোধ- প্রতিহিংসার রাজনীতি চলছে, শিক্ষাঙ্গনে আমাদের বংশধরদের ওপর তার প্রভাব পড়াই স্বাভাবিক। সুতরাং সরকারের উচিত দেশে প্রতিহিংসার রাজনীতির বদলে গণতান্ত্রিক ও জনকল্যাণমূলক রাজনীতির অনুশীলনকে প্রাধান্য দিয়ে একই দৃষ্টিভঙ্গিতে শিক্ষাঙ্গনেও নিজেদের স্বমতের ও জাতির গোটা বংশধরদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও জনকল্যাণের ভাবধারাকে জাগিয়ে তুলতে উদ্যোগ গ্রহণ করা। আমাদের শিক্ষাঙ্গন কোনো ছাত্র সংগঠনের দ্বারাই এরূপ বর্বর আচরণে কলুষিত না হোক এবং সর্বত্র শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতা বজায় থেকে শিক্ষা পরিবেশ ফিরে আসুক, জাতি এটাই ঐকান্তিক কামনা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.