reaz.shahed@gmail.com
[ আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে শোনা মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাগুলো সংগ্রহ করে আর্কাইভ গঠন- ব্লগার জ্বিনের বাদশা নিয়েছেন এই অসাধারণ উদ্যোগটি। তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে আমি পোস্ট করছি আমার দাদার জীবনে ঘটে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের একটি ঘটনা; চলুন ফিরে যাই সেই সময়ে যখন নির্বিকার নৃশংসতা পথেঘাটে সস্তায় বিকোতো ]
ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় আমার দাদার বাড়ি। মুক্তিযুদ্ধের সময় দাদার বয়স প্রায় সত্তর, অস্ত্র হাতে যুদ্ধে অংশ না নিলেও বিভিন্নভাবে সাহায্য করছেন মুক্তিযোদ্ধাদের। একদিন বেরিয়েছেন বাজার করতে, সাথে প্রতিবেশী বন্ধু। বাজার করে ফিরে আসার সময় পড়ে গেলেন পাকবাহিনীর একটা ট্রাকের সামনে।
আতংকজাগানিয়া ট্রাকটা রাস্তার একধারে দাঁড়িয়ে আছে, ভেতরে প্রায় দশ-পনেরো জন খানসেনার সাথে এলাকার চিহ্নিত আলবদর বাহিনীর কয়েকজন সদস্য বসে আছে। দাদাদেরকে দেখে তাদের কোন ভাবান্তর হলোনা বলেই মনে হলো, একজন শুধু দাদার হাতে ধরা বাজারের থলেটার দিকে ইংগিত করে কিছু একটা বললো।
দাদারা ট্রাকটা পার হয়ে বেশ কিছুদুর চলে এসেছেন, এমন সময় হঠাৎ গুলির আওয়াজ; দাদা দেখলেন তার ছোটখাটো বন্ধুটি একটা ঝাঁকি খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে। দাদা বুঝতে পারছেন বন্ধুটি এখনো মারা যায়নি, বাজারের ব্যাগ ফেলে দাদা তাকে ধরে ওঠানোর চেষ্টা করলেন। কিন্ত পেছন থেকে আসা একটি কন্ঠস্বর শুনে তাকে থেমে যেতে হলো, “ঐ অরে ধরবিনা খবরদার, দেখতাছসনা স্যারেরা প্র্যাকটিস করতাছে? একটু পরে অপারেশন আছে।
” দাদা ফিরে তাকালেন; ট্রাকের ভেতর বসা এক আলবদর বলেছে কথাগুলো। এক পাকসেনা হাত দিয়ে দাদাকে ইশারা করলো সরে যেতে। তখনো পর্যন্ত দাদা বুঝে ঊঠতে পারেননি একটু পরে তার চোখের সামনে পৃথিবীর সবচেয়ে নারকীয় দৃশ্যের অবতারণা হতে চলেছে।
দাদাকে বন্দুকের ইশারায় তার বন্ধুর কাছ থেকে সরানো হলো। এবার একজন একজন করে পাকসেনা দাদার বন্ধুটিকে লক্ষ্য করে নিশানা প্র্যাকটিস করা শুরু করলো।
আলবদরগুলি হাততালি মেরে তাদেরকে উৎসাহ দিচ্ছে। তখন প্রায় দুপুরবেলা, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, যতদূর দেখা যাচ্ছে রাস্তাঘাট পুরো ফাঁকা, তার মাঝে শুধু একটি ট্রাকের ভেতর কিছু পথভ্রষ্ট মানুষ আর রাস্তায় আমার দাদা, আর হঠাৎ করেই পৃথিবীর সবচেয়ে হতভাগ্য মানুষে পরিণত হওয়া দাদার সেই বন্ধু, জীবিত না মৃত বোঝা যায়না। দুয়েকটা শকুনও কি ওড়ে আসন্ন ভোজের অপেক্ষায়? পুরো ব্যাপারটিকে কোন পরাবাস্তব জগতের দৃশ্য বলে মনে হয়।
অবশেষে একসময় শেষ হয় খানসেনাদের এই উৎসব। দাদার বন্ধুটিকে মানুষ হিসাবে আর চেনা যায়না, অনেক লাল রঙ দেয়া একটা গোল বলের মতো মনে হয়।
দাদা ভেবে পাননা কী করে তিনি এই লাল বলটিকে বাড়িতে নিয়ে যাবেন। সমাধান দেয় এক আলবদর, “অক্ষণ চইলা যা, অইটারে নিবিনা, স্যারেরা আরো প্র্যাকটিস করব পরে। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।