আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্মৃতিকথা

রিয়াল সেদিন রাস্তায় হাঁটছিলাম আর দেখছিলাম রাস্তার মানুষগু্লোর চলাচল। অদূরে একটা মানুষ গুনগুন করে গান গাচ্ছে আর শিষ বাজাচ্ছে। আমি সামনে যেতেই শিষ বাজানো বন্ধ করল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম- ভাই আপনি এত করুণ সুরে কিভাবে শিষ বাজান? লোকটা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে। মনে হয় সে প্রথম বাংলা ভাষা শুনছে।

আমি তাকে ডিস্টার্ব না করে বাদাম আলার দিকে চাইলাম। এদিক ওদিক তাকাচ্ছি,একটা রিক্সা ডাকব কিনা চিন্তা করছি। রাস্তার অপর পাশে তারেকের মত একটা ছেলে মাথা নিচু করে হেঁটে যাচ্ছে। হ্যাঁ তারেকই তো। এই তারেক বলে ডাকতে লাগলাম।

তারেক ঘুরে তাকাল,অবাক হল না কেন জানি না। মনে হয় সে আগেই আমাকে দেখতে পেরেছে। এ সময় তুমি এদিকে? একটা কাজ ছিল। আমার দূর সম্পর্কের বড় ভাইয়ের বাসা এদিকে। গত রাতে এসেছিলাম।

আজকে হলে ফিরে যাচ্ছি। চল,একটু বসি কোথাও? কেন ইম্পরটেন্ট কোন কথা আছে নাকি?? ইম্পরটেন্ট কথা ছাড়া বসা যায় না বুঝি। । আমার এলাকায় আসছ আমাকে জানাবা না একবারও?? আসলে খুব তাড়া হুড়ো করে আসছি তো তাই। আচ্ছা তোমার পুরাতন কথা ফেইসবুকে লিখে আমি তো মহা ঝামেলায় পড়ে গেছি।

কি ধরনের ঝামেলা? যেই পড়ে সেই আমাকে সন্দেহ করে তারেক মনে করে। একটা বন্ধু তো কমেন্ট দিতে গিয়ে বলেই ফেলল আমিই নাকি তারেক। হা হা হা। আমাকে নানান প্রশ্ন করতেছে। কি ধরনের প্রশ্ন? একটা কথা আমকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।

তুমি সেদিন বলেছিলে ভালবাসার মানুষ টাও কিভাবে যেন অস্বীকার করে তোমাকে ছেড়ে দূরে সরে গেছে। কিন্তু তুমি তো সে ধরনের নও। আমি যতদূর তোমাকে দেখেছি,তুমি নম্র,ভদ্র একটা ছেলে। তারেক এই কথা শুনে মুচকি একটা হাসি দিল। তারেকের দিকে তাকালাম এবং তার উদ্ভ্রান্ত চুল ও দিকভ্রান্ত চেহারা দেখে আমার ঠোঁট কাটা স্বভাব মাথা চাড়া দিয়ে উঠল।

আমি ফট করে বলে ফেললাম,কিছু মনে করিও না-তোমার চেহারাও একটু গাবের মত। এতসব তুমি গোপনে গোপনে করছ তা তোমাকে দেখে আসলে বোঝা মুসকিল। ও অপ্রস্তুত হয়ে বলল-না ভাই আমি আসলে সবকিছু নিজের মত করে ভাবি তো,এজন্যই সমস্যা গুলো হয়। পরক্ষণে বুঝলাম এভাবে বলা উচিত হয় নি,তাই বললাম কিছু মনে করো না,তুমি আমাকে বড় ভাই মনে না করে যদি বন্ধু ভাবো তাহলে বলতে পার। রিয়াল ভাই,আমি আপনাকে সবসময় বন্ধুই ভাবি।

তাই আপনাকে সবকিছু বলি। আচ্ছা আপনার মতে ভালবাসা মানে কি? এইটা কোন প্রশ্ন করলা তুমি আমাকে? ভালবাসা আবার কি?একজনের জন্য আরেকজনের মনে যে চিন্তা ভাবনার উদয় হয় সেটাই ভালবাসা। পরস্পরের প্রতি মায়া মমতা,স্নেহ ও হ্যাঁ,অস্থিরতাও হয় কখনও কখনো। ভালবাসা শুদ্ধ বোঝা যায় যখন দেখা যায় কেউ একজন তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটি ভালবাসার মানুষের জন্য বিলিয়ে দিচ্ছে কোন প্রতিদান পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েই। কোন বইয়ে যেন পড়েছিলাম,তাই ফটাফট বলে ফেললাম।

এখন বুঝতে পারছি আমাকে আমার বন্ধুরা কেন পকপক রিয়াল,বা জ্ঞানী গাব বলত। যাই হোক আমার এই নাম আমার সাথে যায় না,এই নামের সাথে আমার বিহ্যাবিয়ার সম্পুর্ণ ১৮০ ডিগ্রি ফেজ শিফট। -আমার কাছে ভালবাসা মানে ছিল সবকিছু। আসলে ভালবাসা মানে যে কি এটা আমি জানি না,আমি শুধু জানতাম আমি অনেক বিশাল একটা মানুষ হব,আর এতে সকলের সমর্থন থাকবে,সাহায্য থাকবে,বিশ্বাস থাকবে। কেউ যদি আমাকে ছোট করে ভাবত আমি তাকে সহ্য করতে পারতাম না,তাকে এড়িয়ে চলতাম।

তার মানে এই নয় যে,আমি নিজেকে খুব বড় মনে করতাম। কিন্তু এটা আপনি বলতে পারেন আমি আ্মার নিজস্ব বিষয় গুলো নিয়ে সিরিইয়াস ছিলাম। আমি আমার মধ্যে অদৃশ্য একটা জগত বা অদৃশ্য একটা প্রাচীর তৈরি করে ফেলেছিলাম। সেখানে আমার রাজত্ব চলত,অন্য কোন মানুষের ফপরদালালি সেখানে চলত না। এটা কখনকার কথা বলছ? যখন আমি কলেজ়ে পড়ি।

তখন তুমি স্বার্থপর ছিলে। তা আপনি বলতে পারেন। বাস্তবে আমার আস্থা কম ছিল। আমার চারদিক খেলা করত অজস্র হর্ষধ্বণি,বিস্তারিত মাঠ আমায় টানত,খোলা আকাশ আমার কাছে প্রিয় ছিল,প্রিয় ছিল সবুজ ঘাসের একাকী সংগ পাওয়া। যার ফলে আমার সাধারণ জীবনের কাজগুলো হয়ে যেত এলমেলো,চিন্তা ভাবনাগু্লো তখন হয়ে পড়েছিল অসম্ভব অবাস্তবতা কেন্দ্রিক।

আমি রোদ স্পর্শ করতাম রোদের ঝাঁজ নয়,বিনম্রতায়। বৃষ্টি যদিও আমাকে এতটা স্পর্শ করত না,আমি শব্দ শুনতাম হাজার বীণার ঝংকারে। এসব কাব্যিক জিনিস আমার ভালো লাগতেছে না। কি সব বলো। এসব তো সব মানুষকেই স্পর্শ করে।

আমি আসলে আমার ভালোবাসা ব্যাখ্যা করতে চাচ্ছিলা্ম। যখন সব কিছু আমার কাছে অস্পষ্ট ও নির্বিকার,আমি যখন প্রকৃতি ও মানব মনের অদ্ভুত সম্মিলন খোঁজার চেস্টা করছি, মানুষ ও মানুষের প্রতিবিম্ব্ব ,ঠিক তখনি আমার মাথায় একটি নাম পারমানেন্টলি লেখা হয়ে গেল। কি নাম? একটা মেয়ের নাম। কে সে? আপনি তাকে চেনেন। কিন্তু আপনাকে বলছি না কারণ আমার ধারণা আপনি আপনার ফেসবুকের ফ্রেন্ডদের সাথে বিষয়টা শেয়ার করবেন।

আচ্ছা তাহলে নাম বলার দরকার নেই,তুমি এমনি সে সে করে বল। রবীন্দ্রনাথের ‘সে’ নামের একটা গল্প আছে-ওখানে একজন মানুষকে সে সে করে বলে। কোন নাম থাকে না। তুমিও একদিনের জন্য রবীন্দ্রনাথ হয়ে যাও। হা হা রবীন্দ্রনাথ আবার কবর থেকে জেগে উঠবে না তো?? হাহ হাহ হা আচ্ছা আপনার কখনো কি এমন হয়েছে আপনি হাসতে চাইছেন অথচ আপনি হাসতে পারছেন না,ক্ষুধা লাগছে অথচ খেতে পারছেন না,ঘুম আসতেছে অথচ ঘুমাতে পারছেন না?? দাঁড়াও চায়ের অর্ডার দিই।

একটা পিচ্চি এদিকে আসছে,কিন্তু তার নাকের নিচ দিয়ে সুন্দর মত ঝরণা বইছে,সে আবার ঝরণা ধারাকে আকাশের দিকে তুলে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। কিছু লাগবে? আমি তার ঝরণা রোধ করার চেষ্টা না দেখেই তাকে বললাম ‘না’। তারেক বলে-দুইটা চা। আমি বলি আরে একটা,একটা । আমি খাব না।

জানেন ভাই,আমার অসুখ হয়েছিল ভয়ানক। আমার ক্ষুধা পেত কিন্তু খেতে পারতাম না,আমার ঘুম পেত,কিন্তু ঘুমাতে পারতাম না। আমার মাথায় ‘সে’ নামটা পুরোপুরি ফিট হয়ে গেল এবং মাথায় বারবার ঘুরপাক খেতে লাগল। হুমায়ূন আহমেদের একটা বই পড়েছিলাম যেখানে গল্পের নায়িকার এরকম একটা অসুখ হয়েছিল,তার মাথায় বারবার একই কথা ঘুরপাক খাইত। আমি তখন মনে করেছিলাম শালা হুমায়ূন একটা গাব-এরকম কোন রোগ থাকতে পারে না কি? আমার ওরকমই রোগ হয়েছিল।

আমি আমার একটা বন্ধুর সাহায্য নেই। বন্ধুকে বলি। ও শুনেই বলে এটা ভালোবাসা। আমি চিন্তা করি, আমি মাকে প্রচন্ড ভালোবাসি,মা একবার বাসার বাইরে গেলে বা চোখের আড়াল হলে আমি বিচলিত হয়ে পড়ি,কিন্তু আমার মায়ের নাম তো আমার মাথায় বারবার ঘুরপাক খায় না। এরপর তুমি কি ‘সে’কে বললা? না ।

আমি আমার বন্ধুর সহযোগিতায় প্রায় ছয় বছর পর কোন এক ছুতোয় বলে ফেললাম। সুযোগটা ‘সে’ই তৈরি করে দিয়েছিল। এর মধ্যে সেই গিরি-ঝরণা ওয়ালা পিচ্চি চা দিয়ে গেছে। আমি তারেককে বললাম ,তারপর সে কি না বলে দিয়েছে? হ্যাঁ,তবে আমার বুঝতে অসুবিধা হয়েছিল। তুমি আল্লাহর প্রতি অনুরক্ত কবে থেকে হলে? আমি আসলে ভালোবাসা খুঁজতে গিয়ে শুধু মানুষ নয় সব ধরনের ভালোবাসা খুঁজতাম।

একজনের সাথে আমার পরিচয় হয়,যে আমাকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। কে সে?কিভাবেই বা একজন এভাবে তোমাকে ‘তিলে তিলে শেষ হওয়া’থেকে ফিরিয়ে এনেছিল?আমি তো শুনেছি তুমি নাকি গাঁজাও খাইতা? যা শুনছেন ঠিকই শুনেছেন,এই গল্পটা চা শেষ করে বলি? আচ্ছা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।