আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভিক্ষা ও খায়েশ মেটানোর রাজনীতি



-- ভিক্ষা নানারকম আছে। ভিক্ষা যে চায়, যে দেয়—তাদের মধ্যেকার সম্পর্ক সবসময়ই প্রীতিমধুর যে হয় এমনটা বিশেষ দেখা যায় না। গানেও এমনধারা আকুতি ধ্বনিত হয়েছে—না মাঙ্গি ম্যায় সোনা চান্দি মাঙ্গি দর্শন তেরি/ তেরি দুয়ারে খাড়া এক যোগী...। কেউ প্রেম ভিক্ষা চায়, কেউবা ধনদৌলত। ক্ষমাভিক্ষা, প্রাণভিক্ষার কথাও আমরা জানি।

গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য অনেকে ভিক্ষাকে পেশা হিসেবে নেয়। অচল, পঙ্গু, প্রতিবন্ধীদের তো এছাড়া উপায়ও নেই। প্রতিবন্ধীদের সব সম্ভাবনা কাজে লাগানোর ব্যাপারটি অবশ্য আমরা এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারিনি। এক শ্রেণীর লোভী মানুষ ভিখিরিদের দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করার কৌশলও রপ্ত করেছে। রমরম করে চলছে এই হীন কার্য।

বাংলা সাহিত্যের অমর প্রতিভা মাইকেল মধুসূদন দত্তের ভিক্ষা ছিল অন্যরকম। মাতৃভাষার প্রতি অমনোযোগী ছিলেন প্রথমটায়। নাক সিটকানো ভাব ছিল বাংলা ভাষা সম্পর্কে। কাব্যচর্চা করতেন ইংরিজি ভাষায়। পরে বেশ ভালোমতনই ভুল ভাঙে তাঁর।

ঢুস খেয়ে হুঁশ হয়। চৈতন্যোদয় ঘটার পরে মাতৃভাষায়ই তিনি সাহিত্যচর্চা করেন। বলা বাহুল্য কালজয়ী অবদান রাখতে সক্ষম হন। তিনি লিখেছিলেন—করিনু ভ্রমণ পরদেশে ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি। ভিখিরিদের নিয়ে সরকারও যারপরনাই বিপাকে থাকে।

সব ভিখিরিই প্রকৃত ভিখিরি নয়। তাদের মধ্যে বহুরূপী ভণ্ডও আছে। আছে প্রতারক, ফন্দিবাজ, চতুর, নালায়েক, সেয়ানা পাগল। নানা কিসিমের ভিক্ষুকদের উত্পাতে নাগরিকরা তো নিত্যদিন অতিষ্ঠ থাকেই। কোনোমতেই এ সমস্যার সম্মানজনক সমাধান করতে পারে না সরকার।

ভিখিরির হাতকে কর্মীর হাতে রূপান্তর করা হবে। হেন করা হবে, তেন করা হবে। গালভরা বুলি কতই না শুনে থাকি আমরা। কিন্তু সমস্যা যে তিমিরে ছিল, থেকে যায় সেই তিমিরেই। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভিক্ষুকের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে।

বাড়তেই থাকে। সব ভিখিরিই সারা জীবন এক পেশায় থাকতে চায় না। ভাগ্য বদল করতে চায়। হোক না তাদের সংখ্যা নগণ্য। দিনবদলের বন্যা বইছে দেশে।

ডিজিটাল মাত্রার সেই বন্যার মহা তোড়ে মাথাটাথা ঠিক রাখা দায়। পেশা বদল করতে চাওয়া কেন? না, একঘেয়ে পেশা কি সবসময় ভালো লাগে? আলুনি লাগে। চাই চোটপাট, দম্ভ, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, হুঙ্কার, যশ, অর্থবিত্ত, সমীহ—কত কী। হায় রে মানুষ, কতই না ক্ষণস্থায়ী তোমার জীবন। কচুপাতায় পানির মতন।

ওই যে বললাম, ওইসব বৈশিষ্ট্য অর্জনের নিমিত্তে কী কী করা প্রয়োজন? কোমর বেঁধে রাজনীতিতে নেমে পড়া প্রয়োজন। অনতিবিলম্বে। যদি লাইগ্যা যায়। লেগে গেলেই হলো। রাজনীতি করার টিকিট জোগাড়যন্তর করা এমন কোনো কঠিন কর্ম নয়।

বাংলার মাটিতে গাঁ-গঞ্জে এখন নির্বাচনী হাওয়া বইছে বেসামাল। শীতের আবহে নির্বাচনী গরম হাওয়ায় দেশ তোলপাড়। চলছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মহা তোড়জোড়। কুষ্টিয়া থেকে ব্যতিক্রমী এক প্রার্থীর খবর এসেছে। কুষ্টিয়া মিরপুর পৌরসভার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন একজন ভিক্ষুক।

তার নাম চাঁদ আলী শেখ ওরফে কাইটু ফকির। মিরপুর পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে লড়বেন তিনি। এই মর্মে মনস্থির করেছেন কাইটু ফকির সাহেব। ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত। ভালো না মন্দ, সেটা বিচার করবে সময় ও ওই এলাকার মান্যবর ভোটাররা।

কাইটু ফকির জানিয়েছেন, ৩০ বছর ধরে ভিক্ষা করে আসছেন তিনি। এই পেশায় থেকে (ভিক্ষা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই কি আদৌ পেশা? এই প্রশ্নের ফয়সালা হওয়া দরকার আগে। ) জনগণের সেবা করা যায় না। তাই জনসেবার লক্ষ্যে তিনি ওয়ার্ডবাসীর কাছে ভোটভিক্ষা করবেন। ব্যতিক্রমী এই প্রার্থী খোলাসা করে তার মনোবাঞ্ছার কথা জানিয়েছেন সাংবাদিকদের।

তার অকপট সত্যকথনের জন্য ধন্যবাদ। তিনি বলেছেন, বছর দুই আগে এই ওয়ার্ডেরই এক কাউন্সিলরের আত্মীয় তার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছিল। সে সময় তিনি বিচার চেয়েও পাননি। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে উত্সাহী হয়ে ওঠেন। নির্বাচনী অঙ্গীকারও তিনি করেছেন।

১০ টাকা কেজি চাল, বিনিপয়সায় সার, ঘরে ঘরে চাকরি, বিদ্যুত্ সমস্যার সমাধান—এমন উচ্চাভিলাষী রাঙা মোটাতাজা মুলো কি তিনি ভোটারদের নাকের ডগায় ঝুলিয়ে দিতে চাইছেন? কে জানে! তার প্রতিশ্রুতিও গালভরাই। তিনি বলছেন, নির্বাচিত হলে জনগণের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, মাদক, সন্ত্রাসমুক্ত এবং ভিক্ষুকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়কে প্রাধান্য দেবেন। কাইটু ফকির যথার্থ বলেছেন। রাজনীতি করলে প্রতিশোধ নেয়া যায় ইচ্ছামাফিক। চরিতার্থ করা যায় প্রতিহিংসা।

মনের রাগ ঝাল মেটানো যায়। তাতে নৈতিকতা, যুক্তি-বুদ্ধির বালাই না থাকলেও চলে। কুছ পরোয়া নেহি। ক্ষমতার সদ্ব্যবহার অপব্যবহার সবই করা যায়। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি ফলানো যায় অনায়াসে।

চালানো যায় দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, নানা কায়দার বাণিজ্য। তোলাবাজি, চাঁদাবাজি অনেকটাই জায়েজ করে ফেলা যায়। আইন প্রণেতা হতে পারলে বড়ই সুবিধা। আইনকে নিজের সুবিধামত মোচড়ানো যায়। জনমত, মূল্যবোধ, ঔচিত্য-অনৌচিত্যের ধার না ধারলেই হলো।

দেশ জাহান্নামে যাক, নিজের আখের গুছিয়ে নিতে পারলেই হলো। ওয়ান-ইলেভেন হলেও কিচ্ছু আসে যায় না। প্রতিপক্ষকে জোরজবরদস্তি করে উত্খাত, উচ্ছেদ, নিপীড়ন, দলন, পীড়ন করতে পারার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ আছে না? হোক সেটা স্যাডিস্টিক। নিজের গোঁ তো বহাল রইল। রাজনীতি মানেই তো হালুয়া-রুটির নিশ্চয়তা।

সেটা কাইটু ফকির বেশ ভালো করেই হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছেন। সে কারণেই তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছেন রাজনীতির মহাসমুদ্রে। সাঁতার কতটা জানেন বা না জানেন, সেটা আর মুখ্য নেই! শেষতক পরিণতি কী হবে, কারও তোয়াক্কা নেই। আমার দেশ থেেক

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।