ওরা দিনের আধারে ঘুমায় ওরা রাতের আলোতে হাটে, ইটের দেয়ালে মাথা রেখে ওরা হৃদয় খুলে হাসে । ওরা ভালোবাসা বিলিয়ে যায় ,ওরা কষ্ট লুকিয়ে বাচে ।
ঢাকা শহরের কিছু ভিক্ষুক আছে যারা নিজেদের ভিক্ষা করার সুবিধার্থে নিজেই ইচ্ছা করে শরীরের একটা অংশ কেটে ঘা করে রাখে তারপর ধীরে ধীরে যখন ঘা শুকাতে শুরু করে আবার খুচিয়ে ওই ঘা আগের অবস্থাতে নিয়ে যায় । চিন্তা করেছেন মানুষের কি অদ্ভুত পেশা ! আমি প্রায় এক বছর ধরে কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের সামনে এক মহিলাকে দেখি সন্ধ্যার পর , “আব্বা আমি অপারেশনের রুগী ,আমারে ২ টা ট্যাকা দিয়া যাও” এই একটি বাক্য তিনি ১ বছর থেকে বলে যাচ্ছেন । তার পাশ দিয়ে কেউ গেলেই তিনি অত্যন্ত করুন কান্নাজড়া কণ্ঠে এই বাক্য উচ্চারন করেন ।
কেউ কেউ হয়তো বিশ্বাস করে কিছু দেনও ।
ফার্মগেটে যখন প্রথম আসি তখন একদিন রাতে ভুত দেখার মতো চমকে গিয়েছিলাম । রাত ১১ টার দিকে ফুট ওভার ব্রিজ থেকে নামছি , লোকজন কমে গেছে । নেমে হাটা শুরু করেছি হঠাৎ সামনে দেখি একটা হাত পা বিহীন ধড় পড়ে আছে রাস্তার পাশে । কোন নড়াচড়া নেই ।
রাতের বেলা এমন বিভৎস দৃশ্য আমি এর আগে কখনো দেখিনি । কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম । এবং একপ্রকার তাড়াহুড়া করে চলে এসছিলাম । তাঁর কয়দিন পর একদিন দিনের বেলা আবিস্কার করি ওই ধড়টি একটি জীবন্ত মানুষ । এবং সে ওভাবে ভিক্ষা করে ।
আরেকটা বেটে শুকনা করে লোক বেড়ায় এখানে ওখানে । তারা গোটা শরীর পুড়ে গিয়ে এমন বিভৎস হয়ে গিয়েছে যেটা রাতে দুর্বল চিত্তের কেউ দেখলে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে ।
যতই রাতে চলাফেরা করছি এদের মখোমুখি হচ্ছই প্রচুর । এক মহিলা একদিন রাতে হঠাৎ ডাক দিলেন । ভদ্র পোশাক আশাক ,মনে হলো ভালো ফ্যামিলির কেউ ।
কাছে গেলাম । বললেন , “বাবা আমার বাসা নারায়ণগঞ্জ । ঢাকা আসছিলাম । রাস্তায় ছিনতাইকারী সব নিয়ে গেছে । বাসা যাওয়া ভাড়া নাই ।
সাথে আমার বাচ্চাটা সারাদিন কিছু খায় নি । বাবা আমি ভালো ফ্যামিলির মানুষ । এখন কি করি ? বাবা প্লিজ কিছু টাকা দিলে অন্তত খেতে পারতাম আর বাড়ি যেতে পারতাম” । কেন জানিনা আমার মায়া হলো , পকেটে দু শ টাকা ছিল । বের করে দিলাম ।
আমি চলে এলাম । নিজে খুব ভালো অনুভব করলাম । সত্যি করে বলছি কাউকে সাহায্য করার মতো আনন্দ অন্য কোনো খানে নেই ।
তাঁর কিছুদিন পর আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম ওই মহিলা বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের সামনে ঠিক একই ভাবে এনাকে উনাকে ডাকছে । আমি উনার কাছে গেলাম ।
জানিনা উনি আমাকে চিনতে পেরেছেন কিনা ,কিন্তু না চেনার ভাব করলেন । আমি বললাম, আন্টি মিথ্যা বলে এরকম টাকা আয় করছেন কেন ? উনি এমন একটা ভাব করলেন যেন আমার কথা শুন্তেই পান নি । আমি আর কিছু বললাম না , এদের মান সন্মান নেই । এদের সাথে কথা না বারানোই শ্রেয় ।
রাস্তায় হাটতে হাটতে মাঝে মাঝে ভাবি ঠিক এই লোক গুলোর কারনে হয়তো একদিন একজন সত্য বিপদে পড়া মহিলা চরম দুর্বিষহ অবস্থায় পড়বেন ।
কারন এরা এভাবেই মানুষের বিশ্বাস ভাঙ্গে ।
যখন ক্যাম্পাসে হাটি ,ছোট ছোট ছেলেরা চকলেট নিয়ে আসে । ওঁগুলো কিনে নেই মাঝেমাঝে । হয়তো আশেপাশে তাদের মা আছে , দেখছে সবকিছু । সত্যিকারের কিছু মানুষ আছে যাদের কথা ভাবলে তবুও মায়া এসে যায় ।
কিন্তু ছলচাতুরীর এই যুগে তারা খুব কষ্টে থাকে । কারন তারা পরিকল্পনা মত কিছু করতে পারে না ,পরিকল্পনা বিহীন ভিক্ষায় মায়া ফুটে উঠে না । বাসে কিছু মেয়ে চকলেট নিয়ে আসে , কেউ কিনে কেউ কিনে না ।
কিছু লোক ভিক্ষাও ঠিক মত করতে পারে না, তারা পরাজিত । নিজেকে শেষ বলে ধরে নেয় ।
কত লোক এভাবে রাস্তার ধারে খাবারের ওভাবে ধুঁকে ধুঁকে মারা যায় ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।