ঈদ আনন্দ নেই ১৫ ভিআইপির। এ তালিকায় জোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপি, গোয়েন্দা সংস্থার পদস্থ কর্মকর্তা, বিরোধী রাজনীতিকসহ এবার নতুন করে যোগ হয়েছে সরকারি দলের আলোচিত এমপি গোলাম মাওলা রনির নাম। এসব ভিআইপি পরিবার-পরিজন থেকে দূরে, কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যে নিঃসঙ্গ ঈদ কাটাবেন। সেখানেই ঈদের নামাজ পড়বেন এবং কারাবন্দীদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন। তাদের স্ত্রী-সন্তানদের ঈদের খুশি এবারও ভেসে যাবে চোখের জলে। তারা আজ এবং ঈদের দিন কারাগারে গিয়ে স্বামী ও বাবাদের সঙ্গে দেখা করবেন। এদিকে সাধারণ বন্দীদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান গান-বাজনা বাতিল করা হয়েছে। জঙ্গি তৎপরতার কারণে এটি বাতিল করা হয় বলে কারা সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানসহ আলোচিত বেশ কটি মামলায় আটক রয়েছেন একসময়ের প্রতাপশালী আলোচিত ভিআইপি। সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় কারাগারে রয়েছেন সরকারি দলের আলোচিত এমপি গোলাম মাওলা রনি। তিনি গত মাসে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে কারাগারে। যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াতের শীর্ষ নেতারা এবার ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দী জামায়াতের এসব নেতা ঈদ করবেন তাদের নির্ধারিত সেলের ভেতর। তবে জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম ঈদ করছেন প্রিজন সেলে। এ ছাড়া কারাগারে ঈদ করবেন আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এমপি গোলাম মাওলা রনি প্রথমবারের মতো কারাগারে ঈদ করলেও জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের এটি টানা ১৩ এবং সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ১২ ও সাবেক এমপি নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর ৯ ঈদ।
কারাসূত্র জানায়, কারাবন্দী অন্য ভিআইপির মধ্যে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, এমপি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াত নেতাদের মধ্যে সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সাবেক এমপি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা। এ ছাড়া কারাগারে রয়েছেন ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইর সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইর সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, জামায়াত নেতা মাওলানা আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ।
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে গ্রেফতার করা হয় বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ঈদের দিন কারাগারে তার স্ত্রী ও চার সন্তান দেখা করবেন বলে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে। তিনি রয়েছেন কাশিমপুর-১ কারাগারে। ঢাকা কারাগারে অন্তরীণ থাকা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর সঙ্গে আজ তার স্ত্রী ও মেয়েরা সাক্ষাৎ করবেন বলে জানা গেছে। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু গত ৮টি ঈদ কারাগারে কাটিয়েছেন। ঈদের দিন সকালে তার স্ত্রী, সন্তান ও মা কারাগারে সাক্ষাৎ করতে যাবেন বলে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে।
বন্দীদের গান-বাজনা বাতিল : সাধারণ বন্দীদের জন্য এবার কোনো গান-বাজনার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। জঙ্গি তৎপরতার কারণে এটি বাতিল করা হয় বলে কারাসূত্র জানায়। জানা গেছে, ঈদের দিন বন্দীদের বিশেষ খাবার সরবরাহ করা হবে। তবে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দীদের জন্য পৃথক কোনো ব্যবস্থা থাকবে না। শীর্ষ কারা কর্মকর্তা ও সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিরা বন্দীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। ঈদ উপলক্ষে কারাগারের নিরাপত্তাব্যবস্থাও বাড়ানো হবে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ফরমান আলী জানান, কারাবিধি অনুযায়ী ঈদের দিন সাধারণ বন্দীরা যতটুকু সুযোগ-সুবিধা পান, ডিভিশনপ্রাপ্তরাও সেই সুযোগ পাবেন। ডিটেনশনপ্রাপ্ত বন্দী ছাড়া অন্যদের সেদিন আত্দীয়স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হবে। বাসাবাড়ি থেকে পাঠানো খাবারও কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হবে। কারাসূত্র জানিয়েছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ধারণক্ষমতা ২ হাজার ৬৮২ জনের। এর বিপরীতে বন্দী থাকছেন প্রায় ৭ হাজার। গতকাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী ছিলেন ছয়জন। ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে ছয়টি। শুরু হবে সকাল ৬টা থেকে। এর মধ্যে ভিআইপি বন্দীদের জন্য ২৬ নাম্বার সেলের বারান্দায়, বৃদ্ধ ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জন্য জলসিঁড়ি সেলের সামনে এবং যমুনা সেলের সামনে সাধারণ বন্দীদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের দিন সব বন্দীর জন্য সকালে সেমাই-মুড়ি, দুপুরে সাদা ভাত-মাছ-সবজি, রাতে পোলাও, গরু/খাসির মাংস, সঙ্গে কোমল পানীয় ও পান-সুপারির ব্যবস্থা রাখছে কারা কর্তৃপক্ষ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।