ঈদের পর হরতাল- এই আতঙ্কে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তোলার হিড়িক পড়েছে। ঈদ সামনে রেখে গতকাল শেষ কর্মদিবসে ব্যাংকগুলোয় ছিল উপচেপড়া ভিড়। রাজধানীর বেশির ভাগ ব্যাংকের শাখায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দেখা গেছে গ্রাহকদের লাইন। নগদ টাকা তুলে নিতে অনেককে এটিএম বুথেও লাইন দিতে দেখা গেছে। তবে অতিরিক্ত তারল্য থাকায় গ্রাহকদের টাকা দিতে কোনো ব্যাংককে সমস্যায় পড়তে হয়নি। উল্টো সরকারি ব্যাংকগুলো কলমানি মার্কেটে টাকা ধার দিয়েছে। গতকাল চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক স্বল্পমেয়াদে ২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা ধার দেয়।
সোনালী ব্যাংকের জিএম হাসান ইকবাল বলেন, ঈদের আগে ব্যাংকগুলোয় এ ধরনের ভিড় স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এবার একটু বেশিই মনে হচ্ছে। এর কারণ ঈদের পর পরই টানা হরতাল। পরে প্রয়োজন পড়তে পারে এই ভেবে এ মুহূর্তে যাদের দরকার নেই তারাও টাকা তুলে রাখছেন। আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। শুক্রবার ঈদ হলে শনিবার শেষ হবে সরকারি ছুটি। সে ক্ষেত্রে রবিবার থেকে অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা খোলা থাকবে। আর শনিবার ঈদ হলে পর দিন সোমবার থেকে সরকারি কর্মদিবস শুরু হবে। ছুটির এ হিসাবের বাইরেও রয়েছে রাজনৈতিক হিসাব। দলের নিবন্ধন বাতিল নিয়ে ঈদের পর ১৩ ও ১৪ আগস্ট দুই দিনের হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলামী। পর দিন ১৫ আগস্টের ছুটি। এ পরিস্থিতিতে সচেতন গ্রাহকরা এ সময় টাকার জন্য যাতে বেকায়দায় না পড়েন সে জন্য আগেভাগেই টাকা তুলে রাখছেন। তবে এর বাইরেও রয়েছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটাসহ প্রয়োজনীয় কাজকর্ম। সে জন্যও টাকা দরকার। ফলে গতকাল ব্যাংকগুলোয় লক্ষ্য করার মতো ভিড় ছিল গ্রাহকের। মতিঝিল থেকে কারওয়ান বাজার, গুলশান কিংবা বনানী, মিরপুর অথবা ধানমন্ডি_ রাজধানীর সব এলাকার ব্যাংকে একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গেটের সামনে গ্রাহকের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। বসুন্ধরা এলাকার একটি ব্যাংকের সামনে দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়ানো মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, তিনি দুই ঘণ্টা ধরে লাইনে আছেন। অন্য কাজে ডাক পড়ায় স্ত্রীকে ফোন দিয়েছেন তার জায়গায় দাঁড়িয়ে যেন টাকা তুলে নেন ব্যাংক থেকে। বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত এই গ্রাহকের মতো যাদের এত বেশি তাড়া নেই তারা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেই টাকা তুলে বাড়ি ফিরেছেন। বেসরকারি এনসিসি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, তাদের মতিঝিল শাখায় দুপুর পর্যন্ত গ্রাহকদের লাইন ছিল। তবে ভিড় থাকলেও টাকা সরবরাহ করতে কোনো সমস্যা হয়নি। ওই কর্মকর্তা বলেন, ঈদের আগে অতিরিক্ত টাকার জোগান দেওয়া ব্যাংকগুলোর জন্য এখন আর নতুন ঘটনা নয়। কয়েক বছর ধরেই ঈদের আগে টাকার বাড়তি চাহিদা ভালোভাবে সামাল দিয়ে আসছে ব্যাংকগুলো। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের হাতে থাকা অতিরিক্ত তারল্য সহায়ক ভূমিকা রাখছে বলে জানান তিনি। এদিকে নগদ টাকার চাহিদা থাকলেও গতকাল কলমানি মার্কেটে সুদের হার ছিল স্বাভাবিক। স্বল্পসময়ের এই লেনদেনে বেশির ভাগ ব্যাংকই ধার দিয়েছে টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে তাতে দেখা যায় সরকারি চার ব্যাংক ২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা ধার দিয়েছে কলমানি মার্কেটে। বিপরীতে এ ব্যাংকগুলো কোনো ঋণ নেয়নি। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক একাই ১ হাজার ২২৫ কোটি এবং রূপালী ব্যাংক ১ হাজার ৯০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। অন্যদিকে ঋণ নিয়েছে এমন ব্যাংকগুলো হচ্ছে সাউথ ইস্ট, ন্যাশনাল, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।