আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জঙ্গি আতঙ্কে দেশ

ফের জঙ্গি আতঙ্কে দেশ। রবিবার ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে আক্রমণ চালিয়ে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত জেএমবির তিন দুর্ধর্ষ জঙ্গি নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর সারা দেশে জঙ্গি আতঙ্ক দেখা দেয়। গণমাধ্যমে খবরটি প্রচার ও প্রকাশ হওয়ার পর এ আতঙ্ক আরও বেশি করে ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য পালিয়ে যাওয়ার ছয় ঘণ্টার মধ্যে জঙ্গি নেতা রাকিবকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরে 'বন্দুকযুদ্ধে' রাকিব নিহত হন। অন্য দুজনকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি র্যাব কিংবা পুলিশ। সীমান্তে বিশেষ নজরদারির পাশাপাশি দেশের কারাগারগুলোয় জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা। সারা দেশে চলছে চিরুনি অভিযান।

দুই দিন ধরে সারা দেশে মানুষের মুখে মুখে ফিরছে ফিল্মি স্টাইলে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা। এ জন্য তারা পুলিশকেই দুষছে_ জেলা পুলিশের শীর্ষ পদে থাকা কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে এমনটি ঘটেছে। জঙ্গিদের এহেন আকস্মিক ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক চলছে বলেও তারা মনে করছে।অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০০৫ সালের পর প্রতি বছর জেএমবিসহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের বহুসংখ্যক সদস্য গ্রেফতার হলেও ২০১৩ সালে জেএমবির একজন সদস্যও গ্রেফতার হননি। এ সময় হুজির ছয়জন হিযবুত তাহ্রীরের ২২ জন এবং হিজবুত তাওহীদের মাত্র তিনজন সদস্য গ্রেফতার হন। জঙ্গি দমন অভিযানের এ নাজুক পরিণতির কারণ জানতে চাইলে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহ্সান বলেন, গত বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে জঙ্গি দমনে র্যাব পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে পারেনি। বেশির ভাগ সময় কেটেছে দৈনন্দিন কাজে। তিনি বলেন, পালিয়ে যাওয়া কিংবা আত্দগোপনে থাকা কোনো জঙ্গি সদস্য গ্রেফতার এড়াতে পারবেন না। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। র্যাব সদর দফতর থেকে বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, পালিয়ে যাওয়া তিন জঙ্গির সঙ্গে অন্যান্য জঙ্গির বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ ছিল। আগের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বৃহস্পতিবার তারা চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিদের সিরিজ বোমা হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৪৫ আসামি এখনো বিভিন্ন কারাগারে বন্দী। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ রাতে শীর্ষ ছয় জঙ্গি নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, খালেদ সাইফুল্লাহ, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল ও ইফতেখার হাসান আল মামুনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হয়। ছয় জঙ্গির পর আর কারও ফাঁসি কার্যকর হয়নি। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৩৯ আসামি উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামিদের মধ্যে ১৩৫ জন খালাস ও জামিন পেয়েছেন। গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে_ নামে-বেনামে জেএমবি এখনো তৎপর। জামিন এবং খালাস পাওয়া জঙ্গিরাই নামে-বেনামে তৎপরতা চালাচ্ছেন। কারাগারে থেকে শীর্ষ জঙ্গিরা তাদের অনুসারীদের পরিচালনা করছেন। রবিবার সকালে ত্রিশালের ঘটনাও কারাগারে আটক জঙ্গিদের যোগসাজশে ঘটানো হয়েছে বলেই সংশ্লিষ্টদের ধারণা। এ অবস্থায় কারাগারের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী, হিযবুত তাহ্রীর এবং কোনো কোনো মাদ্রাসার দিকেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে- জেএমবির একসময়কার সামরিক শাখাপ্রধান সোহেল মাহফুজ সংগঠনের হাল ধরেছেন। আজও তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। বিভিন্ন সময় জঙ্গিদের নাশকতার ঘটনায় সারা দেশের বিভিন্ন থানায় ১৬১টি মামলা হয়। এর মধ্যে ৫৯টি এখনো বিচারাধীন। ১০২টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এ রায়ে ৪৫ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১১৮ জনের যাবজ্জীবন, ৯৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে; ১১৮ জন খালাস ও ৩৫ জন জামিন পেয়েছেন এবং ৫৭ জন পলাতক রয়েছেন।

গঠিত হচ্ছে কাউন্টার টেরোরিজম ব্যুরো : বাংলাদেশ থেকে জঙ্গি নির্মূলে গঠিত হচ্ছে কাউন্টার টেরোরিজম ব্যুরো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে দেশের জঙ্গি নির্মূলে সরকারকে এ ব্যুরো গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হলে প্রধানমন্ত্রী তা গঠনের অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম। গতকাল দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের জেএমবির অবস্থান সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।

মনিরুল ইসলাম আশা প্রকাশ করে বলেন, শীঘ্রই কাউন্টার টেরোরিজম ব্যুরো গঠনের কাজ শুরু হবে। এটা গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সমূলে জঙ্গি তৎপরতা বন্ধ করা সহজ হবে। তাদের কাছে তথ্য আছে উল্লেখ করে কমিশনার আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে তিনটি গ্রুপ নতুন করে জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে। এদের মধ্যে একটি গ্রুপের প্রধান কারাগারে আটক জেএমবি মূল দলের দাবিদার মাওলানা সাইদুর রহমান ও তার ছেলে শামিম। আরেকটি জাকারিয়া গ্রুপ; যার নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে জেএমবির তিন সদস্যকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। আরেকটি গ্রুপের নাম কৌশলগত কারণে এ মুহূর্তে প্রকাশ করা যাচ্ছে না বলেও তিনি জানান।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.