আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আন্দোলন চলছে, আতঙ্কে মাঠে নেই বিএনপি

হামলা-মামলা, গ্রেফতার-নির্যাতন আতঙ্কে অবরোধে মাঠছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও রাজপথে নেই দায়িত্বপ্রাপ্তরা। অবরোধে জেলা, মহানগর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অধিকাংশ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাই এখন আত্দগোপনে। অবশ্য তাদের বড় একটি অংশ ঢাকায় অবস্থান করছেন। ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনও বন্ধ রেখেছেন। চতুর্থ দফা অবরোধে গত দুই দিনে রাজধানীসহ অধিকাংশ জেলায় মাঠে দেখা যায়নি দায়িত্বপ্রাপ্তদের। তৃণমূলে নিজেদের উদ্যোগেই কর্মী-সমর্থকরা অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে তাদের জামায়াত-শিবিরনির্ভরতা বাড়ছে। দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের মূলে জামায়াত-শিবিরের সম্পৃক্ততা লক্ষ্য করা গেছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের বক্তব্য হলো- হামলা-মামলা, গ্রেফতার-নির্যাতন এড়াতে কৌশলী ভূমিকার অংশ হিসেবেই আত্দগোপনে থাকতে হচ্ছে নেতাদের। হাইকমান্ড থেকেও গ্রেফতার এড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অবশ্য নীতিনির্ধারকদের এ ধরনের সিদ্ধান্তে হতাশ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। মাঠের কর্মীরা হামলা, মামলা, গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের আত্দগোপনে থাকার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধও তারা।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মিথ্যা মামলায় কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই কারারুদ্ধ। রাজধানীজুড়েই পুলিশ-র্যাব মারমুখো অবস্থানে। নেতাদের বাসায় বাসায় তল্লাশি চলছে। অবরোধে মিছিল নিয়ে মাঠে নামামাত্রই অতর্কিত গুলি করা হচ্ছে। গ্রেফতার হলে রিমান্ডে নিয়ে নেতা-কর্মীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। তারপরও রাজধানীসহ সারা দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীরা দাবি আদায়ে রাস্তায় নামছেন। অবরোধে ঢাকা থেকে সারা দেশ বিচ্ছিন্ন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আমাদের চলমান আন্দোলনে দেশবাসী সঙ্গে রয়েছেন। সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় না হলে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। বিগত অবরোধের তুলনায় সর্বশেষ দুই দিনের অবরোধে ভিন্ন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। রাজধানীতে জীবনযাত্রার মান অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। রাজপথ, নৌপথ ও রেলপথে যানবাহনও চলেছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তেমন বড় কিছু লক্ষ্য করা যায়নি। অবশ্য দেশজুড়েই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে ছিল। দুই দিনে সারা দেশের অধিকাংশ জেলায়ও বড় ধরনের কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। টানা কর্মসূচির কারণে তৃণমূলে আন্দোলনের চেইন অব কমান্ড অনেকাংশে ভেঙে পড়েছে। কেন্দ্র কিংবা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা মাঠের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখায় তাদের মধ্যে হতাশাও কাজ করছে। এ ছাড়া মাঠের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা, গ্রেফতার ও হুলিয়ার কারণে আন্দোলনে কিছুটা ভাটা পড়েছে। সূত্রে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্দেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কেন্দ্রীয় নেতা অবরোধে সারা দেশের খোঁজখরব রাখছেন। তবে ব্যক্তিগত মোবাইল বন্ধ থাকার কারণে জেলা, মহানগরসহ অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তিনি। বিভিন্ন মাধ্যমেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে অবরোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ওই নেতাকে নানা অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে চলছেন। এ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছেও অভিযোগ করা হয়েছে। এ কারণে বেগম জিয়া নিজেও মাঠের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে আন্দোলনকে চালিয়ে যাওয়ার দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সাতক্ষীরাসহ দেশের যেসব স্থানে বেশি সহিংসতা হচ্ছে তার অধিকাংশই জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সঙ্গে জামায়াত-শিবির সমর্থকরা সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছেন। অবশ্য বিএনপির তৃণমূল কর্মীরাও অবরোধে মাঠে থাকছেন। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা নেতাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। হামলা-মামলা ও গ্রেফতারে তাদের কোনো সহযোগিতা করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু খোদ রাজধানীতে নেতারা আত্দগোপনে থাকায় আন্দোলনের সফলতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। হতাশাগ্রস্ত সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের ক্ষোভ কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে মাঠের নেতারা দলের হাইকমান্ডের কাছে ইতোমধ্যে কয়েক দফা নালিশও করেছেন। জানা গেছে, সংলাপের আশা ক্ষীণ হওয়ায় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মারমুখো অবস্থানের কারণে বিএনপির স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন সম্পাদকীয়সহ নির্বাহী কমিটির অধিকাংশ নেতাই বাসায় থাকছেন না। ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে ভিন্ন মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতারাও আত্দগোপনে। এ নিয়ে জেলা পর্যায়ের কয়েক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নেতাদের তারা জানান, বিগত কর্মসূচির চেয়ে এবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেশি মারমুখো। তাই তারা গ্রেফতার এড়িয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। যোগাযোগ করা হলে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের ব্যক্তিগত ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মারমুখো অবস্থানের মধ্যেও ঢাকাসহ সারা দেশে সফলভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। ঢাকা এখন কার্যত দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তৃণমূল যুবদলের সঙ্গেও তিনি যোগাযোগ রাখছেন। আন্দোলন অব্যাহত রাখার জন্য মাঠের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এর পরও সরকারের টনক না নড়লে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানান তিনি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.