এখন আর প্রতিহত নয়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সর্বনিম্ন ভোটার উপস্থিতির মাধ্যমে ইতিহাসের 'কলঙ্কিত অধ্যায়' দেখতে চায় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কালিমা মুছতে শেষ মুহূর্তে এসে সরকারকে এ ধরনের সুযোগ দিতে চায় দলটি। দেশি-বিদেশি নানা চাপ সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থেকে সরে না দাঁড়ানোয় বিএনপির নীতিনির্ধারক মহলে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনকে 'একতরফা ও অবৈধ' আখ্যা দিয়ে ভোটারদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে এরই মধ্যে ১৮-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। আজ ও আগামীকাল ভোটের দিন এ ধরনের প্রচারণা চালানো হবে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। নির্বাচনের তিন দিন আগে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, 'একটি নির্বাচিত সরকার হিসেবে আমরা গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার শপথ নিয়েছিলাম। তাই, সাংবিধানিকভাবেই ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।' সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর এই শেষ ভাষণে বিএনপি স্পষ্ট ধারণা নিয়েছে, যে কোনো মূল্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারি নির্বাচন করবেই। তাই এ নির্বাচনে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায় না তারা। দলটি মনে করে, '৯৬-এর ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিএনপিকে অনেক অপবাদ সইতে হয়েছে। ওই নির্বাচন 'অগণতান্ত্রিক' ছিল বলেও বলা হয়। এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও সে পথে হাঁটছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সপদে থেকে নির্বাচনকালীন সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন, তাই বিএনপিও আটঘাট বেঁধে তা প্রতিহত করা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপি মনে করে, প্রধান বিরোধী দলসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। এ নিয়ে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে বিদেশি দাতা সংস্থাসহ বিভিন্ন মহল থেকে বিধিনিষেধ জারি হতে পারে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশ, দাতা সংস্থা দশম জাতীয় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের 'ফরেন পলিসি' নামক একটি সাময়িকী যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে এমন দশটি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশ গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পেঁৗছে গেছে। তাই নির্বাচনের পর এ সুযোগকে কাজে লাগাতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবে বিএনপি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু একতরফা নির্বাচন করতে অনড় অবস্থানে রয়েছেন, তাই বিএনপি ভোট প্রতিহত করবে না। তবে ভোটারদের 'অবৈধ নির্বাচনে' নিরুৎসাহিত করার ব্যাপারে কাজ করে যাবে। এর মাধ্যমে বিএনপির '৯৬-এর ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের ইতিহাস ছাপিয়ে নতুন এক কলঙ্কিত ইতিহাস রচিত হবে। এতে আওয়ামী লীগ নিজেদের সবচেয়ে গণতান্ত্রিক দল দাবি করার ইতিহাস থেকেও সরে যাবে। তবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে চলমান অবরোধ ভোটের দিন পর্যন্ত অব্যাহত রাখবে বিএনপি। দুই-এক দিনের মধ্যে নতুন কর্মসূচিরও ঘোষণা হতে পারে। তবে বড় ধরনের কোনো সহিংসতায় জড়াবে না দলটি। ভোটের দিন আওয়ামী লীগ যাতে কারচুপি করে ভোটার উপস্থিতির সংখ্যা না বাড়াতে পারে সে ক্ষেত্রেও বিএনপি জোট কাজ করে যাবে। এরই মধ্যে এ নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা দল ও জোটের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। বিএনপির মধ্যমসারির এক নেতা জানান, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলেও সরকার বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না। তাদের যথাশীঘ্রই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতেই হবে। নইলে সরকারকে চরম মাশুল দিতে হবে। দুই-এক মাসের মধ্যে একাদশ নির্বাচন হবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিএনপি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।