আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লোকজ গান ও আমাদের শ্রমসমাজ

আমার বাংলা বর্ণলিপি পাঠ এভাবেই শুরু। একুশের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। সৈয়দা মারহামা

আমরা আমাদের মনের ভাব প্রকাশের জন্য অনেক কিছু করে থাকি। আদিকাল থেকে আমাদের দেশের মানুষ ভাব প্রকাশ করার জন্য গান করত, গীত করত এবং সঙ্গীত সাধনা করত। এটা এক ধরণের আদি রীতি ছিলো বলা যায়।

কিন্তু এখনও তা প্রচলিত রয়েছে। আমাদের দেশের প্রায় মানুষই সঙ্গীতের ভক্ত। কেউ মরমি গান পছন্দ করে, কেউ বাউলা, আবার কেউ আধুনিক গান। আমাদের দেশের সব মানুষের মুখেই গান শুনা যায়। এর মধ্যে বেশি ভাগ মানুষই লোকগান পছন্দ করে।

লোকগান হল যা লোকের মুখে মুখে প্রচারিত। মানুষের মুখের কথা, বাক্য এবং ধ্বনি বাকশিল্প নামে নামাঙ্কিত। মানুষ মুখ দিয়ে কথা বলে। কথা দিয়ে মানুষ তার নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে। কয়েকটি অর্থবোধক শব্দ মিলে একটি বাক্য তৈরী হয়।

মানুষ এই বাক্যের মধ্যে নিজের ভাব প্রকাশ করে থাকে। যেমন কোন মানুষের বই কিনার প্রয়োজন হলে, সে বলবে ‘আমি লাইব্রেরীতে যাব। ’ এখানে তিনটি শব্দ মিলে একটি বাক্য তৈরী হয়েছে এবং মনের ভাব ফুটে উঠেছে। মানুষ ধ্বনির সাহয্যেও মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে। শিশুরা ধ্বনির মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করে থাকে।

যেমন- শিশুদের ক্ষুদা পেলে তারা কাঁদে। এই কান্নার সময় এক ধরনের ধ্বনি উচ্চারণ হয়। আর এই ধ্বনির মধ্যে প্রকাশিত হয় শিশুর মনের কথা। তাতে মা বোঝতে পারে শিশুর মনের ভাব। শব্দ তথা ভাষার অংশকে ধ্বনি বলে।

বর্ণ এক প্রকার সংক্ষেত বা চিহ্ন, ভাষা লেখার জন্য ধ্বনি প্রকাশে এটি ব্যবহৃত হয়। যে সুন্দর করে কথা বলে থাকে বলা হয়-চারুবাক। চারুবাককে সবাই পছন্দ করে। শুধু চারুবাককে নয়, যে সুন্দর করে গান গাইতে পারে থাকেও সবাই ভালোবাসে। আর গান সুন্দর হলে সবাই পছন্দ করে এবং এ গান জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

মানুষ নিজের মনের ভাব তথা সুখ-দুঃখের কথা গানের সুরে প্রকাশ করে থাকে। একটি গানে আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাবো শব্দ, বাক্য,ধ্বনি এবং সুর সবই ব্যবহার করা হয়। এসব শিল্প সম্মতভাবে যারা ব্যবহার করতে পারে তাদেরকে শিল্পি বলা হয়। অনেকে গুণ গুণ করে গান গাইলেও সে শিল্পি নয়। যে কোন জিনিস অর্জনের জন্য শ্রম ও সাধনা করতে হয়।

শিল্পী হওয়ার জন্যও একথা প্রযোজ্য। আমাদের দেশের প্রায় মানুষরনা শ্রম জীবি। তারা প্রায় শ্রমে নিয়োজিত থাকে। তারা অনেকে ইচ্ছে করলেও শিল্প সাধনায় সময় দিতে পারে না। তবে শ্রমের সময় কষ্ট ভুলতে তারা গান গেলে মনে শক্তি যোগায়।

তারা শ্রমের ফাঁকে ফাঁকে সুর তুলে কিংবা গুণগুনিয়ে গান করে থাকে। তারা শ্রমের সাথে এভাবে বিনোদন যুক্ত করে। ফলে শ্রমটা তাদের কাছে আনন্দ দায়ক হয়ে উঠে। শ্রমিক শ্রেণীর মানুষরা বেশির ভাগই লোক সঙ্গীতকে পছন্দ করে থাকে। এ গানের মধ্যে তারা তাদের নিজের আত্মার ধ্বনি অনুভব করে।

তারা এভাবে গান গেয়ে নিজের মনকে হালকা করে। শুধু শ্রমিকরা নয়, যে কোন অনুষ্ঠান বা বিয়েতেও নানা ধরনের গানের আয়োজন থাকে। তবে আমি মনে করি শ্রমিকরাই এসব গানের ভক্ত বেশি এবং তারা তাদের শ্রমজীবনের সাথে তাল মিলিয়ে গান করে। তারা এ গানগুলোকে ভক্তি করে। এ গানের সাথে সুর মিলিয়ে আজ আমাদের শ্রমসমাজ এগিয়ে যাচ্ছে।

তারা গানের মধ্যে তাদের জীবনকে খুজে পায়। তারা গানের মধ্যে তাদের সুখ-দুঃখ প্রকাশ করে মনে শান্তি আনতে পারে। আর এই শ্রমিকদের জন্যই আমাদের এদেশ টিকে আছে এবং শ্রমিকরা কঠোর শ্রম করে আমাদের দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। আর তাই শ্রমিকরা তাদের কাজে উৎসাহিত হওয়ার জন্য আনন্দে গান গেয়ে তাদের শ্রমকে আনন্দদায়ক করে তুলে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।