শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের হাতে গড়া লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে প্রতিবছরের মতো জমে উঠেছে লোক ও কারুশিল্প মেলা। দেশের নানান প্রান্ত থেকে শিল্পীরা হাজির হয়েছেন তাদের ঐতিহ্যবাহী সব শিল্পকর্ম নিয়ে। পসরা সাজিয়ে বসেছেন পুরো ফাউন্ডেশনের উঠানজুড়ে।
মেলায় গেলে তাই মিলবে সোনারগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী কাঠের পুতুল আর কারুশিল্প। সেখানকার আরেক ঐতিহ্য জামদানী শাড়ি।
আছে নরসিংদীর পাটের শিকা, রংপুরের শতরঞ্জি, ঝিনাইদহের সোলা শিল্প ইত্যাদি।
আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের তৈরি তাঁতের কাপড়ও আছে মেলায়। আরও আছে রাজশাহীর শখের হাড়ি, নকশী পাখা, পটচিত্র, টেপা পুতুল। ধামরাইয়ের তামা, পিতল আর কাঁসাশিল্প।
কিশোরগঞ্জের টেরাকোটা আর টাঙ্গাইলের বাঁশের শিল্পকর্ম।
সিলেটের শীতলপাটি। নানান জায়গার মৃতশিল্প আরও কত কী!
আছে মুড়ি-মুড়কি, মিঠাই, মুড়ালি, পিঠে-পুলিসহ ঐতিহ্যবাহী নানান গ্রামীণ খাবারের আয়োজন।
মেলা প্রাঙ্গণে দেশের হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন গ্রামীণ খেলা যেমন কাবাডি, বৌচি, দাড়িয়াবান্ধা, মোরগ লড়াই ইত্যাদির আয়োজনও বেশ মজার।
লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন / বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের ভেতরে লেক। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন / বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত অবধি মেলার মঞ্চে চলে এসব গানের আসর।
লোকজ উৎসবে ঘোরার ফাঁকে ঢু মারতে পারেন লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরে। ১১টি গ্যালারিতে এ জাদুঘরে প্রায় ৪ হাজার ৩শ’রও বেশি নিদর্শন সংরক্ষিত আছে।
১নং গ্যালারিতে আছে কাঠ খোদাই ও কারুশিল্প। ২নং গ্যালারিতে বাংলার গ্রামীণ জীবযাত্রার চিত্র। ৩নং গ্যালারি সাজানো হয়েছে পটচিত্র ও মুখোশ দিয়ে।
৪নং গ্যালারিতে আছে দেশের বিভিন্ন এলাকার নৌকা। ৫নং গ্যালারিতে রয়েছে বাংলাদেশের আদিবাসী। ৬নং গ্যালারিতে আছে লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও বাংলার পোড়ামাটির শিল্প। ৭ ও ৮ নং গ্যালারিতে আছে যথাক্রমে লোহার তৈরি নিদর্শন ও তামা, কাঁসা, পিতলের তৈজশপত্র। ৯, ১০ ও ১১ নং গ্যালারিতে আছে লোকজ অলঙ্কার, বাঁশ, বেত ও শীতল পাটি।
ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ফাউন্ডেশনের সময়সূচী হল: শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। বুধ ও বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক বন্ধ।
তবে উৎসবকালীন সময়ে সপ্তাহজুড়েই খোলা থাকে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন।
প্রাচীন নগর
লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন থেকে সামান্য উত্তরে বাংলার প্রাচীন শহর পানামনগর। সোনারগাঁও এলাকার প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শনগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— খাসনগর দিঘি, দুলালপুরের নীলকুঠি, গোয়ালদি শাহী মসজিদ, আমিনপুর মঠ, দামোদরদি মঠ, পানাম নগরের আবাসিক ভবন, বড় সরদার বাড়ি প্রভৃতি।
পানামনগর। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন / বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
গোয়ালদী শাহী মসজিদ। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন / বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
প্রায় ৫ মিটার চওড়া এবং ৬০০ মিটার দীর্ঘ একটি সড়কের দু’পাশে সুরম্য কিছু স্থাপনা নিয়ে পানাম নগর গড়ে ওঠে। সড়কের উত্তর পাশে ২১টি এবং দক্ষিণ পাশে ৩১টি, মোট ৫২টি বাড়ি এই নগরের অন্যতম অকর্ষণ।
সংস্কারের অভাবে আর অদক্ষ সংস্কারের কারণে বাড়িগুলোর এখন জরাজীর্ণ।
ঢাকার গুলিস্তান থেকে বোরাক পরিবহন, সোনারগাঁও পরিবহন ইত্যাদি বাসে এসে নামতে হবে মোগরাপাড়া বাস স্টেশনে।
ভাড়া ৪০-৫০ টাকা।
এছাড়া একই জায়গা থেকে দাউদকান্দি কিংবা মেঘনাগামী যে কোনো বাসেও মোগরাপাড়া আসা যায়।
মোগরাপাড়া থেকে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের রিকশা ভাড়া ২০-২৫ টাকা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।