ষড় ঋতুর বৈচিত্রময় দেশ আমাদের বাংলাদেশ। শীতকাল হচ্ছে একটি ঋতু। এই ঋতুতে বিভিন্ন বিদেশী অতিথি পাখির সমাগম ঘটে। ফলে পাখিদের কল কাকুলিতে যেন মন ভরে ওঠে। ঠিক এ সময় দেশের উত্তরবঙ্গের মঙ্গা পীড়িত এলাকার মানুষেরা কনকনে শীতের তীব্রতায় অস্থির।
নেই শীত নিবারণের জন্য গরম কাপড়। একদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম উর্ধ্বগতি অন্যদিকে তেমন কাজ-কাম নেই।
বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমের মাধ্যম এ ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ করছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের সাধারণ কৃষক, দিনমজুর ও সুবিধাবঞ্চিত ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীরা কনকনে শীতে অতি কষ্টে জীবন কাটাচ্ছে। বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নীলফামারী, গাইবান্দা, কুড়িগ্রাম, নওগাঁ, বগুড়া, নাটোর ও রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার জনপদ কনকনে শীতে কুঁকড়ে গেছে।
সেই সাথে কোন কোন স্থানে বইছে হাল শৈত্যপ্রবাহ।
শীতের কারণে শীতকালীন অসুখ-বিসুখ জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশির ভাগই আক্রান্ত হচ্ছে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ মানুষেরা। অর্থাভাবে ওষুধ কিনতে পারছে না। যদিও শীতের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা কম তবুও কনকনে শীতে মানুষের ভোগামিত্মর শেষ নেই। গবাদি পশু, হাঁস-মুরগী মারা যাচ্ছে।
কিছু পোল্ট্রি খামার বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
একটি কথা বলতে হয় যে, উত্তরবঙ্গের প্রায় সাড়ে ৫ কোটি বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে যারা বেশি দুর্দশায় ভূগছে। ল্যাথারিজম রোগীর সংখ্যা আবার প্রায় ৫০ হাজার। ওরা শীতকালে আধমরা হয়ে যায়। কোন কোন স্থানে বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মৌসুমী ফসল তেমন ঘরে তুলতে পারে নি কৃষকরা।
অথচ কৃষি ফসলই হচ্ছে তাদের একমাত্র সম্বল। সে জন্য গরম কাপড় কিনতে পারছে না। অন্যদিকে তাদের আবাসন ব্যবস্থাও শীত নিবারণের উপযুক্ত নয়।
উত্তরবঙ্গে প্রতি বছর কনকনে শীতের তীব্রতা লক্ষ্য করা যায়। আরো দু’ মাস বাকি থাকতেই এ বছর অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি শীতের তীব্রতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বিভিন্ন স্থানে সরকারের পাশাপাশি কিছু বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও শিল্পপতিরা শীত বস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। দেশের গণমাধ্যম বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করায় সকল গণমাধ্যমকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
উত্তরবঙ্গের তীতার্ত মানুষের জন্য আমাদের করণীয় রয়েছে। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো:
1. উত্তরবঙ্গের মঙ্গাপীড়িত শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পুরনো কাপড়-চোপড় সংগ্রহ অভিযান শুরু করা যেতে পারে।
এ ব্যাপারে গ্রাম-গঞ্জে কমিটি গঠন করা দরকার;
2. দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহে শীতার্ত মানুষকে বাঁচানোর জন্য একটি তহবিল গঠন করা যেতে পারে;
3. বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসী বাঙালি ভাই ও বোনেরা সম্মিলিতভাবে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে পারে;
4. বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের অনুমতি সাপেক্ষে একদিনের বেতন কর্তন করা অর্থ দিয়ে শীতার্ত মানুষের জন্য সহযোগিতা করা যেতে পারে;
5. মফস্বল এলাকার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া সমূহ এই ব্যাপারে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশের ধনাঢ্য মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।
পরিশেষে দেশী, বিদেশী প্রবাসী, ধনাঢ্য এবং শিল্পপতিসহ সকল শ্রেণীর পেশাজীবী মানুষের নিকট আমার আকুল আবেদন। একটি পুরাতন জামা কাপড় হলেও শীতার্ত মানুষের জন্য প্রদান করুন। তারা খুবই অসহায়। এখনও প্রায় ২ মাস বাকী শীতের আমেজ শেষ হতে।
ওদের পাশে আমরা না দাঁড়ালে তারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে প্রাণ হারাবে। মানুষ মানুষের জন্য এ মানবিকতাকে সামনে রেখে সামর্থ অনুযায়ী আমরা শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই।
লেখক-
আজমাল হোসেন মামুন
()
উন্নয়নকর্মী ও সাংবাদিক,
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।