বেশ কয়েক বছর পরে আরেকবার ঢাকায় ঈদ করলাম। ঢাকায় ঈদ করার চিন্তা করার পর থেকেই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল ঈদের দিন বা পরের দিন কোথাও ঘুরতে যাওয়ার। ঈদের আগের দিন কাছের বড়ভাই তার বাড়ীতে ঘুরতে যাওয়ার নিমন্ত্রন জানালেন। ঈদের পরের দিন যাবেন , রাতে থেকে আবার ঢাকায় ব্যাক করবেন। অতএব সংক্ষেপে মোটামুটি ঘুরে আসতে পারবো তাই আর দেরী না করে রাজী হয়ে গেলাম।
যাত্রা শুরু সকাল ১১.৩০ টাঃ
সকাল ১১.৩০ ঢাকার রাজধানী মানে ফার্মগেট থেকে গাড়ীতে চেপে বসলাম। পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও যাদের বাড়ী তাদের বাড়ী পৌঁছতে বা ফিরতে ১৫ থেকে ২০ ঘন্টা সময় লেগে যায় । ঈদের আগেই একজন পঞ্চগড় গিয়েছে শুনলাম তার যেতে নাকি ১৯ ঘন্টা লেগেছে। তাই লম্বা সময় গাড়ীতে থাকার প্রস্ততি নিয়ে নিলাম।
বঙ্গবন্ধু সেতু পৌছার আগে ক্যামেরা বের করা হয়নি।
সেখান থেকেই শুরু ছবি তোলা কার্যক্রম।
বঙ্গবন্ধু সেতুঃ
টাঙ্গাইল পার হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু বা যমুনা সেতুতে পৌছতে প্রায় ২টা বেজে গেলো।
ঈদের পরের দিন তবুও গাড়ীর ছাদে যায়গা নেই
সামনেই বঙ্গবন্ধু সেতু, এখন থেকে ডান দিকে বঙ্গবন্ধু সেতু গলফ গ্রাউন্ড , টাঙ্গাইল
এ স্থান স্থান থেকেই শুরু সেতুর মুল রাস্তা। চমৎকার পরিবেশ। খোলা মাঠ আর আঁকাবাকা পিচ ঢালাই মসৃন পথ।
যে কারো ভালো লাগার মতো স্থান ।
বঙ্গবন্ধু সেতু
প্রথম গিয়েছিলাম ১৯৯৯ সালে এরপর যে কয়বার সেতু পার হয়েছি প্রতিবারই রাতের বেলা ঘুমঘুম চোখে কিন্তু এবার দিনের বেলা তাই সেতু আর নদীটা কিছুটা হলেও দেখা হয়েছে
যমুনায় বিশাল চর , চরের মাঝে আবার খালের তৈরী হয়েছে
যমুনার চর এখন সবুজ ঘাসে সমৃদ্ধ হয়তো এখানে ধানও উৎপাদন হয়
বড় বড় গাছ আর বাড়ী ঘরও স্থান করে নিয়েছে যমুনার চরে
সিরাজগঞ্জ পাড়ের টোল প্লাজা, টোল দিতে হলো ৫০০ টাকা
সেতুর উভয় প্রান্তেই রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমানের সুউচ্চ ম্যুরাল
সিরাজগঞ্জ প্রান্তে রয়েছে ইকো পার্ক
সিরাজগঞ্জঃ
কিছুদূর যেতেই ডান দিকে সিরাজগঞ্জ শহরে যাওয়ার রাস্তা, মাত্র ৭ কি:মি:
তারা হয়তো গাড়ীতেও স্থান পায়নি তাই পিকআপেই গন্তব্যে যাত্রা
হোটেল এরিস্টোকেট, আমাদের লাঞ্চের স্থান
করলা ভাজি, ছোট মাছ, মাছ ভর্তা , ভাত , ডাল , পানি চা বিল প্রায় ৩০০০ টাকা । খাদক আমরা ৮ জন, ঈদের গোশতের বদলে এখানে খাওয়া লসই মনে হলো
রাস্তা বিপরীতেই নির্মানাধীন ফুড ভিলেজ, এরকম অনেকগুলো ফুট ভিলেজ এখন এ এলাকার হোটেল ব্যবসা দখল করে নিয়েছে । এই রাস্তার নৈশবাসগুলোর অধিকাংশই ফুট ভিলেজে যাত্রা বিরতি দেয়।
বগুড়াঃ
ঢুকে পড়লাম বগুড়া পৌরসভায়
সাতমাথা থেকে তিন মাথার দিকে যাওয়ার পথে শহরের বিল্ডিংগুলো উপর দিয়ে লাল টুকটুক সূর্যের চমৎকার আকাশ
জিয়া উদ্যানের পূর্ব পাশের সিগন্যালে বিমানটার মতো একটি বিমান , মোড়ের নামটি স্মরন করতে পারছি না
উত্তরবঙ্গে যাওয়ার পথে সর্বশেষ সিএনজি স্টেশন টিএমএসএস।
আপনার গাড়ী সিএনজি চালিত হলে অবশ্যই থামাতে হবে
এ স্থানের নাম মোকামতলা। সোজা গেলে রংপুর আর বামে জয়পুরহাট, স্প্রিড ব্রেকার আছে অতএব দেখে পথ চলবেন
বগুড়া থেকে গাইবান্ধা হয়ে রংপুর এরপর দিনাজপুর । মাঝখানের লম্বা রাস্তা কিন্তু বগুড়া পার হতেই সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে তাই অন্ধকারে আর কোন ছবি তোলা সম্ভব হয়নি আর হালকা পাতলা ঘুম তো আছেই।
ঠাকুরগাঁওঃ
চাঁদ নয় যেন ঝলসানো রুটি। উজ্জল জোৎস্নার আলোতে চারিদিক আলোকিত সারা রাত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছিলো।
গাড়ী থেকে নেমেই চাঁদের ছবিটি তুলেছিলাম। পৌছতে রাত প্রায় পৌনে বারোটা। রাতের খাবার আর ফ্রেস হয়ে ঘুমাতে প্রায় ১ টা বেজে গিয়েছিলো। সকালে উঠে বাহির হলাম অনেক দিন আগে থেকে শুনা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ২০০ বছরের ঐতিহাসিক আমগাছটি দেখার উদ্দেশ্যে। পথে দেখলাম ঠাকুরগাঁও শহর।
মুক্তিযুদ্ধ স্মরনে ভাস্কর্য
ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
জেলা পরিষদ , ঠাকুরগাঁও
ঠাকুরগাঁও সরকারী বালক উচ্চবিদ্যালয়, বিশাল মাঠ দেখে ক্রিকেট খেলে আসতে ইচ্ছে করছিলো। এরকম বিশাল বিশাল মাঠ দেখা গিয়েছে অনেক জায়গাতেই। কিছু মাঠ ঢাকায় নিয়ে আসতে পারলে ঢাকার ছেলেরা খেলতে পারতো।
ঐতিহাসিক আমগাছের যাত্রা পথেঃ
চারিদিকে সবুজের সমারোহ । আগের চেয়ে ফলন কমে গেলেও আঁখ ক্ষেত দেখা যায় পথে পথে
চারিদিকে সবুজের সমারোহ , সোনা ধান যেন বিস্তৃর্ন মাঠে বিছিয়ে রাখা হয়েছে
একদিকে ঢাকা অন্যদিকে পঞ্চগড়, সোনালী ধান ভরা মাঠের বুক চিড়ে এগিয়ে গেছে সামনের দিকে
ছায়াঘেরা পিছ ঢালা গ্রাম্য পথ, নিজের গ্রামের অস্তিস্ত খুজে পেয়েছিলাম
এলাকার ছেলেরা রাস্তায় খেলায় মত্ত।
গাড়ী আসায় রাস্তা ছেড়ে দাঁড়িয়েছে
শান্ত দীঘি। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকলেও যেন ক্লান্তি আসবে না
এলাকার শহীদ মিনারের সামনে ভ্যান চালকেরা ভাড়ার অপেক্ষায় প্রখর রৌদ্রে অপেক্ষা করছে
ঐতিহাসিক আমগাছঃ
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আমগাছ
মুল গাছটি
একটু দূর থেকে গাছটি এরকম দেখা যায়
গাছের কান্ড, কেউ কেউ ডাল পালায় উঠছে ছবির পোজ দেয়ার জন্য
গাছের চারদিকে এভাবেই এর ডালপালাগুলো ছড়িয়ে আছে
আশে পাশে কিছু বসার স্থানও তৈরী করা হয়েছে , প্রবেশ পথটিতে চারপাশটা টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে বসানো হয়েছে টিকেট কাউন্টার, টিকেটের মূল্য ১০ টাকা
গাছের বিস্তারিত এখানেঃ
বিসমিল্লাহির রহমানির বাহীম
গাছ লাগান পরিবেশ বাচান
প্রাচীন সূর্যপুরী ঐতিহ্যবাহী আমগাছ
আনুমানিক বয়স ২০০ বছর
গ্রামঃ হরিনমারী(নয়াপাড়া) ডাকঃ হরিনমারী হাট
উপজেলাঃ বালিয়াডাঙ্গী জেলাঃ ঠাকুরগাঁও
গাছের মালিকঃ সাইদুর রহমান মোল্লা ও নূর ইসলাম
মোবাইলঃ ০১৭৩৭ ৭৯৬১১০
সতর্কবানীঃ গাছ বাচান ও নিজে বাচুন ১. গাছের উপরে জুতা পড়ে উঠলে ২. গাছের ডাল ভাঙ্গলে ৩. গাছে বলপেনে লিখা/বসার সিটে লিখা ৪. টেবিলের উপরে বসা ৫. কাউকে দেখে উপহাস করা ৬. গাছের নিজে ময়লা আবর্জনা ফেলা
উপরোক্ত সতর্কবানীর মধ্যে কেউ পড়লে তার জরিমানা কমপক্ষে ৫০০ টাকা
(পরিচর্যায়ঃ মোঃ জয়নাল আবেদীন ) আদেশক্রমেঃ গাছ মালিক
দিনাজপুর, ফুলবাড়ী কয়লা খনিঃ
দুপুরের দিকে ঠাকুরগাঁও থেকে রওয়ানা হলাম। দিনাজপুর পার্বতীপুর , ফুলবাড়ী , বিরামপুর , ঘোড়াঘাট হয়ে এগিয়ে গেল আমাদের গাড়ী।
বীরগঞ্জ থানা, এখানে আমাদের সাথে ঢাকায় আসার জন্য আরেকজন যোগ হলো
দিনাজপুরের ঐতিহ্য ধান আর চাল , চোখ জুড়ানো সোনালী ধানের ক্ষেত । চোখে না দেখলে যা অপূর্নতাই রয়ে যেত।
বছরে ৪টি ফসল হয় এসব মাঠে। বাড়ী ঘর এলাকা মানুষের চেহারা আর আচার আচরণ দেখে অধিকাংশ মানুষকে স্বচ্ছল মনে হলো। অন্তত ৪ জন মেয়েকে দেখেছি যারা সাইকেল চালাচ্ছে। যা অন্য যেকোন এলাকা চেয়ে বেশী মনে হলো।
বড় একটি বেইলি ব্রীজ দিয়ে চলছিলাম পাশে তাকিয়ে মনে হলো কখনো এখানে বড় নদী ছিলো যা শুকিয়ে বালুর প্রান্তর হয়েছে আর নদীর হয়েছে ছোট্ট খাল
ফুলবাড়ী পাওয়ার ষ্টেশনের মুল ফটক
পুরো কয়লা ঘনি ও পাওয়ার ষ্টেশন জুড়ে এরকম একটি পথ তৈরী করা হয়েছে হয়তো কয়লা বা কয়লা দ্বারা উৎপাদিত শক্তি পরিবহনের পথ এটি।
ফুলবাড়ী কয়লা খনি । এখান থেকেই উত্তোলন করা হয় কয়লা পরে তা বিশুদ্ধ করে বিদ্যুৎ তৈরীর কাজে ব্যবহৃত হয়
উত্তোলনকৃত কয়লার পাহাড় তৈরী করা হয়েছে, কাছে যেতে পারলে ভালো লাগতো
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে , চাঁদমামা পূর্ব আকাশে হাসি দিয়েছে
লম্বালম্বি দিনাজপুর জেলা পার হতে অনেক সময় লেগেছে। পার্বতীপুর, ফুলবাড়ী , বিরামপুর , ঘোড়াঘাট ইত্যাদি হয়ে গাইবান্দা পলাশবাড়ী অতপর গন্তব্য বগুড়া। বগুড়া শহর হয়ে সোজা ঢাকার উদ্দেশ্যে। পথে শুধু ড্রাইভার সহ আমরা দুজন এককাপ করে কফি পান করে তাজা হয়েছি আর বাকী যাত্রীরা লম্বা ঘুম।
আবারো যমুনা ব্রীজ পাড় হলাম রাতে।
গাড়ীর অন্যান্যরা ঘুমালেও পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে ড্রাইভারের সাথে আবারো হেলপারের ভূমিকায় অবতীর্ন হলাম। আবারো লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে বাসায় এসে পৌছলাম রাত ১২.১৫ টায়।
অনেক ছবি দিয়ে ফেলালাম এবার কেমন হয়েছে ব্লগার বন্ধুগন বলবেন। লম্বা পথটাকেই ধরে রাখার জন্যই এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।