আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে নিলেন জয়

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর নিজ জেলা রংপুরে প্রথম সফরে রোববার এসব প্রতিশ্রুতি দেন সজীব ওয়াজেদ।

বিকেলে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে এক জনসভায় তিনি বলেন, “২০২১ সালের অনেক আগেই বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হবে। উত্তরবঙ্গও এ থেকে পিছিয়ে থাকবে না।

“আমি সজীব ওয়াজেদ জয়, উত্তরবঙ্গকে দেখে রাখবো, যাতে উন্নয়ন হয়, যাতে অভাব না থাকে। ”

জয়ের এ বক্তব্যের পর জিলা স্কুল মাঠ ভর্তি হাজার হাজার জনতা বিপুল করতালি দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন।

ঢাকা থেকে বিমানযোগে সৈয়দপুর এবং সেখান থেকে সড়ক পথে দুপুর দেড়টায় রংপুর সার্কিট হাউসে পৌঁছান জয়। সেখানে বিশ্রাম নিয়ে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা ও মুজিব কোট পরে জনসভাস্থলে পৌঁছান তিনি।

জয় পৌঁছানোর আগেই রংপুর বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষ জড়ো হতে শুরু করেন জিলা স্কুল মাঠে।

জয়ের বক্তব্য দেয়ার আগে আওয়ামী লীগের উত্তরবঙ্গের কয়েক নেতা তাদের বক্তব্যে রংপুরে গ্যাস সংযোগ দেয়ার দাবি তোলেন। উপস্থিত জনতাও হাত উঁচিয়ে, করতালির মাধ্যমে তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানান।

রংপুর-৪ আসনের সাংসদ ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি টিপু মুন্সী বলেন, “এ অঞ্চল কৃষিভিত্তিক অঞ্চল। এখানে যদি গ্যাস আসে তাহলে এখানে শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে, লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া এ অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য যমুনা নদীর ওপর রেললাইনসহ আরেকটি সেতু করতে হবে। ”

রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু বলেন, “এখানে গ্যাস সংযোগ দিতে হবে এবং রংপুরে ড. ওয়াজেদ মিয়ার নামে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে হবে। ”

অবশ্য রংপুরের মানুষের গ্যাস সংযোগের দাবির বিষয়ে মঞ্চে কিছু বলতে রাজি হননি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।

তিনি বলেন, “২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমরা। সেই বিদ্যুৎ কতটা পৌঁছেছে সেটাই দেখতে এসেছি। গ্যাসের কথা বলবেন সজীব ওয়াজেদ জয়। ”

এরপর জয় বক্তব্য দিতে এসে শুরুতেই বলেন, “আমি পীরগঞ্জের সন্তান।

“অনেকদিন আগে আমি এখানে (জিলা স্কুল মাঠে) এসেছিলাম।

তখন কিছু ওয়াদা দিয়েছিলাম। রংপুরকে বিভাগ ও সিটি করপোরেশন করবো, এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে। সেইসব ওয়াদা আমরা পূরণ করেছি। ”

উত্তরবঙ্গে উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, “আজ আমি আরো কিছু ওয়াদা করবো। প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেব।

ওয়াদা করছি, উত্তবঙ্গে আমি গ্যাস এনে দেব। উত্তরবঙ্গে বাণিজ্য আনতে চাই, কারখানা আনতে চাই, কর্মসংস্থান আনতে চাই। ”

তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গে আগে মানুষ মঙ্গায় প্রাণ হারাতো। বিএনপির সময় প্রতি বছর মঙ্গা হতো। অঅমরা বলেছিলাম, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে মঙ্গা মুছে ফেলা হবে।

সেটা আমরা করেছি, মঙ্গা বলে এখন আর কিছু নেই। ”

তথ্য প্রযুক্তিবিদ জয় বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গত পাঁচ বছর দেশের মানুষের জন্য কাজ করে গেছে। আগে ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা’ লোডশেডিং হতো। এখন বিদ্যুতের অভাব নেই।

“আমরা বলেছিলাম।

পাঁচ বছরেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। আমরা সফল হয়েছি। ”

এসময় জয় উপস্থিত নারী-পুরষদের মধ্যে যাদের মোবাইল ফোন আছে তাদের হাত তুলতে আহ্বান জানালে জনসভায় উপস্থিত প্রায় সবাই হাত তোলেন।

জয় বলেন, “প্রতিটা ইউনিয়নে আমরা তথ্য কেন্দ্র বানিয়েছি। সেখানে মানুষ বিভিন্ন ধরনের সেবা পাচ্ছে।

প্রতি বছর বিনামূল্যে আমরা কোটি কোটি টাকার বই দিচ্ছি, বিশ্বের কোনো সরকার এটা পারেনি। গ্রামে গ্রামে স্বাস্থ্য কেন্দ্র বানাচ্ছি। ”

এরপর আবার রংপুরের প্রসঙ্গে ফিরে এসে তিনি বলেন, “আমি খোঁজ নিয়ে দেখলাম, এই রংপুর মেডিকেল কলেজে হৃদরোসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে মানুষ, আগে যে সেবার জন্য ঢাকায় যেতে হতো। ”

প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয় বলেন, “বিএনপির সময় সারের দাবি করার জন্য কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এখন কোথাও সারের অভাব নেই।

আগে এ অঞ্চলে দেখেছি, স্কুল-কলেজ ব্রিজ খুব কম ছিল। এখন অনেক দেখছি। আগে এ এলাকায় আসার সময় দেখতাম, ফসলের মাঠ শুকিয়ে ফেটে গেছে। কিন্তু আজ পানি আছে, ফসল আছে। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার কৃষককে বিদ্যুৎ দিয়েছে।

জনসভায় বক্তৃতার এক ফাঁকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও সমালোচনা করেন জয়।

তিনি বলেন, “বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে খুব বলে যাচ্ছেন। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা করছেন। কিন্তু এটা বলছেন না, এই যে উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে-সেই আইন তিনি বাতিল করেছিলেন।

“উপজেলা হোক এটা তিনি চাননি, এখন বড় বড় কথা বলছেন।

গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগের সহিংসতার প্রসঙ্গ টেনে জয় বলেন, “নির্বাচনের আগে আন্দোলনের নামে গান পাউডার দিয়ে, পেট্রোল ঢেলে, আগুন লাগিয়ে মানুষ হত্যা করেছেন, নির্বাচনের দিন সন্ত্রাস করেছেন।

“রংপুর, নীলফামারিতে ভোটকেন্দ্রে হামলা করেছিল, কয়েকশ স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছিল, তারপরও আপনারা (জনতা) ভোট দিতে গিয়েছিলেন। এজন্য আপনাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। ”

জনসভায় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, হুইপ ইকবালুর রহিম, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক প্রমুখ বক্তব্য দেন।  

প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন জানান, জনসভা শেষে  দাদার বাড়ি পীরগঞ্জের লালদীঘি ফতেপুর গ্রামে যান জয়।

সেখানে তিনি তার বাবা এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করবেন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নেবেন। রাতে থাকবেন পৈত্রিক বাড়ি জয় সদনে।

সোমবার বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে রংপুরে বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দেবেন জয়। সোমবারই তার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।

গত ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে পীরগঞ্জে জনসভা ও পথ সভায় অংশ নিয়েছিলেন জয়।

শেখ হাসিনা ওই আসন থেকে নির্বাচিতও হন।    

অবশ্য প্রধানমন্ত্রী পরে গোপালগঞ্জের আসনটি রেখে রংপুরের আসনটি ছেড়ে দেন, যেখানে উপ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।   


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.