খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর প্রতিষ্ঠান ফেয়ারহিল কনসাল্টিং প্রাইভেট লিমিটেডের নামে পাচার করা অর্থ বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিতে বলেছে সিঙ্গাপুরের আদালত।
মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের নিম্ন আদালতে শুনানি শেষে বিচারক এই আদেশ দেন। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানির সময় উপস্থিত ছিলেন।
এমন এক সময়ে আদালতের এই আদেশ এলো, যখন কোকোর মা, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন।
মাহবুবে আলম টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সিঙ্গাপুরের অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ওই অর্থ ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশের দাবির পক্ষে শুনানিতে অংশ নেয়।
আদালতের আদেশে কোকোর পাচার করা ঠিক কতো টাকা বাংলাদেশ ফেরত পাচ্ছে তা ফেয়ারহিলের নথিপত্র পর্যালোচনার পর স্পষ্ট হবে বলে অ্যটর্নি জেনারেল জানান।
এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত বছর ২২ নভেম্বর জানায়, দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে কোকোর পাচার করা ২০ লাখ ৪১ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার (প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা) তারা দেশে ফিরিয়ে এনেছে।
পরে এ টাকার লভ্যাংশ বাবদ আরো ২৩ হাজার ৮০০ সিঙ্গাপুরি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৫ লাখ টাকা) দুদকের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়।
দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান সে সময় জানিয়েছিলেন, কোকোর পাচার করা আরো ৯ লাখ ৩৬ হাজার মার্কিন ডলার ফেরত আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
এর আগে কোকোর পাচার করা অর্থ নিজের অ্যাকাউন্টে রাখার দায়ে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে সিঙ্গাপুরি ব্যবসায়ী লিম সিউ চেংকে ৯ হাজার ডলার জরিমানা করে দেশটির আদালত।
এই সিউ চেংয়ের সহায়তা নিয়েই সিঙ্গাপুরে ফেয়ারহিল কনসাল্টিং প্রাইভেট লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন কোকো। সিঙ্গাপুরি নাগরিক সিউ চেংয় ছিলেন ওই কোম্পানির নমিনি ডিরেক্টর ও শেয়ার হোল্ডার।
সে সময় সিঙ্গাপুরের দৈনিক স্ট্রেটস টাইমসের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মামলার তদন্তের বরাত দিয়ে বলা হয়, ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে আরাফাত রহমান কোকো জাস ট্রেডিং অ্যান্ড কনসালটিংয়ের সঙ্গে যৌথ ব্যবসা খোলার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর সিঙ্গাপুরের ইউনাইটেড ওভারসিস ব্যাংকে (ইউওবি) জাস ট্রেডিংয়ের নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, যার পরিচালনাকারী ছিলেন কোকো ও লিম সিও চেং।
এর এক বছর পর কোকো সিঙ্গাপুরে ফেয়ারহিল কনসালটিং নামের দ্বিতীয় কম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।
ইউনাইটেড ওভারসিস ব্যাংকে এ কোম্পানির নামেও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, যা পরিচালিত হয় লিম সিও চেংয়ের স্বাক্ষরে।
২০০৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের অজুহাত দেখিয়ে লিমকে কম্পানি দুটি বন্ধ করে দিতে বলেন কোকো। সে সময় কোকো ফেয়ারহিলের অ্যাকাউন্টে থাকা ৯ লাখ ৬৭৭ আমেরিকান ডলার (১২ লাখ সিঙ্গাপুরি ডলার) ও জাসের অ্যাকাউন্টে থাকা ২০ লাখ ১৩ হাজার ৪৬৭ আমেরিকান ডলার সিও চেংয়ের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতে বলেছিলেন। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে সিঙ্গাপুর সরকার ওই দুটি অ্যাকাউন্টই ফ্রিজ করে রাখে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ‘ঘুষ’ হিসেবে নেয়া অর্থ পাচারের জন্য আরাফাতের ছয় বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।
সেই সঙ্গে জরিমানা হয়েছে ১৯ কোটি টাকা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তারের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি নিয়ে চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে পাড়ি জমানো আরাফাত আর ফেরেননি। তার অনুপস্থিতিতেই সাজার রায় হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।