বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর সিঙ্গাপুরে পাচার করা ২০ লাখ ৪১ হাজার সিঙ্গাপুরী ডলার ফেরত এনেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
২০০৯ সালে দুদকের দায়ের করা এক মামলার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সোনালী ব্যাংকের রমনা কর্পোরেট শাখায় এ টাকা ফেরত আসে। সবগুলো টাকা দুর্নীতি বিরোধী কাজে ব্যয় করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানান দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। বিদেশে পাচার হওয়ার পর প্রথমবারের মতো এভাবে কোন টাকা ফেরত এলো বলে উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া আরও ৯ লাখ ৩২ হাজার মার্কিন ডলার আনার প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও জানান গোলাম রহমান।
তিনি বলেন, তারেক রহমান এবং তার বন্ধু ব্যবসয়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মানি লন্ডারিং একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
কোকো ও সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী প্রয়াত লে. কর্নেল (অব) আকবর হোসেনের ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন একটি বহুজাতিক কোম্পানি থেকে ঘুষ হিসেবে এ টাকা গ্রহণ করে সিঙ্গাপুরের ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংকে (ইউওবি) প্রেরণ করেন। এর আগে পাচার হওয়া টাকা নিজের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে রাখার দায়ে এক সিঙ্গাপুর নাগরিককে সে দেশের আদালত গেল বছরের জানুয়ারি মাসে নয় হাজার ডলার জরিমানা করে।
সূত্র জানায় ২০০৯ সালের ১৭ মার্চ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রাজধানীর কাফরুল থানায় আরাফত রহমান কোকো এবং সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী মরহুম লে. কর্নেল (অব) আকবর হোসেনের ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। মামলার বাদী হন দুদক উপ-পরিচালক মোঃ আবু সাঈদ।
মামলার এজাহারে অভিযোগ ছিল ২০০৪ সাল থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র আরাফাত রহমান কোকো ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০০৯-এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মামলার চার্জশীট প্রদান করা হয় ২০০৯ সালের নবেম্বর মাসের ১১ তারিখে। বিচার শুরু হয় ২০১০ সালের ৩০ আগস্ট।
রায় দেয়া হয় ২০১১ সালের ২৩ জুন।
রায়ে দুজনকে ছয় বছরের সশ্রম কারাদ- ও ৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আর বাজেয়াপ্ত করা হয় সিঙ্গাপুর ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংকে কোকোর পাচার করা ২০ লাখ ৪১ হাজার ১৪৩ দশমিক ৫৯ সিঙ্গাপুর ডলার এবং ৯ লাখ ৩২ হাজার ৫৭২ দশমিক ৮১ মার্কিন ডলার।
দুদকের তদন্তে দেখা যায়, সিঙ্গাপুরের নাগরিক লিম সিউ চ্যাং সিঙ্গাপুরে একটি কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করে সেখানকার ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংক (ইউওবি) লিঃ-এ একটি এ্যাকাউন্ট খোলেন। এ্যাকাউন্টের শর্ত ছিল আরাফাত রহমানের স্বাক্ষর বা লিম সিউ চ্যাং ও আরাফাত রহমানের যৌথ স্বাক্ষরেই শুধুমাত্র সেখান থেকে টাকা উঠানো যাবে। চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিঃ, ঢাকা এবং চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিঃ, চট্টগ্রাম-এর মাধ্যমে সিটি ব্যাংক এনএ, নিউইয়র্ক এবং এইচএসবিসি ব্যাংক ইউএসএ থেকে সিঙ্গাপুরের ইউওবি লিঃ-এর ওই এ্যাকাউন্টে এ অর্থ জমা করা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ কাজের ঘুষ হিসেবে এই অর্থ কোকোর এ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। এছাড়া সরকারী মোবাইল ফোন কোম্পানি টেলিটকের যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সার্ভিসের জন্যে সিমেন্স কোম্পানির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ঘুষ আদায় করেন কোকো। সিমেন্সের বাংলাদেশ এজেন্ট মোঃ জুলফিকার আলী সিঙ্গাপুরের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মাধ্যমে কোকোর ইউওবি লিঃ-এর এ্যাকাউন্টে ৩ লাখ ৩ হাজার ২৫৪ সিঙ্গাপুর ডলার বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে জমা দেন। এছাড়া বিভিন্ন এ্যাকাউন্ট থেকে তার ওই এ্যাকাউন্টে আরও কিছু অর্থ জমা হয়। কোকোর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার কারণ সম্পর্র্কে দুদক থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ নিবাসী কোন ব্যক্তির বৈদেশিক সূত্র হতে আয়ও আয়করযোগ্য।
কিন্তু কোকো তার বিদেশী ব্যাংকের আয় আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করেননি। তার সম্পদ বিবরণীতেও তার উল্লেখ নেই। আবার যে সব সূত্রে কোকোর এ্যাকাউন্টে অর্থ জমা হয়েছে, তার সঙ্গে কোকোর কোন ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল না। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হওয়ার কারণেই বিদেশী কোম্পানিগুলো তাকে অর্থ দিতে বাধ্য হয়েছে। তাই অবৈধ উপায়ে ও কৌশলে বিদেশে অর্থ প্রেরণের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে এই মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
এদিকে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা অর্থ রাখা এবং এ বিষয়ে দুর্নীতি তদন্তকারী কর্তৃপক্ষকে না জানানোর অপরাধে সিঙ্গাপুরের আদালত ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশটিতে কোকোর সহযোগী লিম সিও চেংয়েকে (৬৩) অর্থদ- দিয়েছিল। এর কারণে টাকা ফেরত আনা সহজ হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ওই সময়ে দেশটির স্ট্রেটস টাইমস পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত কোকোর সহযোগী লিম সিও চেংয়ে আরাফাত রহমান কোকোর আদেশ অনুযায়ী তাঁর পাচার করা মুদ্রা ব্যাংকে লিম সিও নিজ এ্যাকাউন্টে রেখেছিলেন। একই সঙ্গে অপরাধমূলকভাবে পাচার হওয়া ওই টাকার বিষয়টি তিনি গোপন করেন এবং তা পুলিশ অথবা দুর্নীতি তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ করাপ্ট প্র্যাকটিস ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোকে জানাননি। এ অপরাধে তাঁকে ৯ হাজার ডলার জরিমানা করা হয়।
আয়কর ফাঁকির মামলা দুই নম্বর বিশেষ জজ আদালতে
কোর্ট রিপোর্টার জানান, বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর আয়কর ফাঁকির মামলা দুই নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বদলি করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোঃ জহুরুল হক এ বদলির আদেশ দিয়ে আগামী ১৩ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ঠিক করেছেন।
এদিন মামলায় এনবিআরের ডেপুটি কর কমিশনার মহিদুল ইসলাম সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসলেও তার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়নি। গত ১১ নবেম্বর মামলাটি দুজন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। এরা হলেন, বাদী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) উপ-কর কমিশনার শাহীন আক্তার হাসেন ও যুগ্ম কম কমিশনার সামিহা আক্তার।
২০১০ সালের ১ মার্চ একই আদালতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মামলাটি দায়ের করে। অভিযোগ করা হয়, আয়কর নথিতে ব্যয় ও বিনিয়োগ বাবদ ৫২ লাখ ৩৯ হাজার ২২৬ টাকার তথ্য গোপন এবং এই টাকার ওপর প্রযোজ্য আয়কর ফাঁকির অভিযোগে কোকোর বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হয়।
তারেকের মামলার সাক্ষ্য পিছিয়েছে
কোর্ট রিপোর্টার জানান, বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা অর্থ পাচার মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়েছে। বৃহস্পতিবার আসামি মামুনের পক্ষে করা সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ মোঃ মোজাম্মেল হোসেইন আগামী ২৯ নবেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের নতুন দিন ধার্য করেছেন।
আসামি মামুনের পক্ষে সময় আবেদন করেন ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম।
আবেদনে তিনি বলেন, আপনার (বিচারক) এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে। তা শুনানির কার্যতালিকার দুই নম্বরের আছে। সকালে এ্যাটর্নি জেনারেল ওই মামলায় সময় চাওয়ায় তা আগামী সোমবার শুনানির জন্য ধার্য হয়েছে। তাই এ পর্যায়ে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ না করে সময় মঞ্জুর করা আবশ্যক। এ সময় বিচারক দুদকের আইনজীবী আনিসুল হকের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনিও এ্যাটর্নি জেনারেলের সময় নেয়ার সত্যতা স্বীকার করে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় দেয়ার পক্ষে মত দেন।
টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের কাজ পাইয়ে নির্মাণ কনস্ট্র্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের মালিক খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে গিয়াসউদ্দিন আল মামুন ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা নেন। সিঙ্গাপুরে এই টাকা লেনদেন হয়। এরপর মামুন ওই অর্থ সিঙ্গাপুরের ক্যাপিটাল স্ট্রিটের সিটি ব্যাংক এনএতে তার নামের ব্যাংক হিসাবে জমা করেন। এই টাকার মধ্যে তারেক রহমান তিন কোটি ৭৮ লাখ টাকা খরচ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।