ছন্নছাড়া বাঁধনহারা দস্যি একটা ছেলে ,, দিবানিশি ক্যামেরা চালায় আহার নিদ্রা ফেলে :) :)
২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাস । তখন এইচ.এস.সি পরীক্ষার জোর প্রস্তুতি নিচ্ছি ....।
এরই মাঝে হঠাৎ করে এক জনের সাথে মনে মনে মন খেলা শুরু করেছি ...
তার একটা সুন্দর নাম দিয়েছি "তারা" ... মেয়েটির নাম ছিল তামান্না ... আর আমার নাম রাকিব ..। তাই ওর নামের প্রথম আর আমার নামের প্রথম অংশ মিলিয়ে এই নাম দেওয়া ।
... কুরবানির ঈদ হয়েছিলো ডিসেম্বর মাসে ।
এবং অনেক বেশি শীতের তীব্রতা ছিল সেবার । ঈদ পালন করার জন্য শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে যায় বাবা মার কাছে ।
বড় ভাইয়া দেশের বাইরে ,,,,, আপু তার নিজের সংসারে ব্যাস্ত । বাড়িতে আমি থাকি না । তাই ঈদে মা বাবার কাছে না থাকলে তো হয় না ..।
যথারীতি ঈদের ২দিন আগেই বাড়ীতে চলে গেলাম ...
ঈদের ঠিক আগের দিন একটা ভাতিজার সাথে নদীর ধারে বসে গল্প করছি .. হঠাৎ মোবাইলে একটা কল আসলো ....
রিসিভ করা মাত্রাই কেউ একজন চাপা গলায় বললো ....
:সুমন ভাইয়া আপনি কি বাড়িতে চলে গেছেন ...??
:হ্যা .!
: এইটা বড় খালার নাম্বার .. বুঝেছেন ..??
: ও তুমি ..!!!
: কেন এখনও চিনতে পারেন নি ...??
: আরে হ্যা চিনেছি তো .. আর এই নাম্বার আমার মোবাইলে সেভ করায় আছে ।
: ও শোনেন ... একটু ব্যাক করবেন .. কথা আছে ...
: আচ্ছা করছি ..
আমি এবার ফোন দিলাম ..... রিসিভ করেই সে বললো ....
: শোনেন , আমি বা আপনি দুজনই যে কথাটা কেউ কাওকে আজ পর্যন্ত মুখে বলিনি সেটা ভেবেছিলাম ঈদের দিন বলবো ....
আপনি ঈদের দিন আসতে পারবেন না ..??
: কিছু মনে করো না .... আমি ঈদের দিন আসতে পারবো না ...। কারণ তুমি তো জানো বাড়িতে আমি ছাড়া আর তেমন কেউ নেই । তাই কুরবানির সমস্ত ঝামেলা আমাকেই পোহাতে হয় ।
আমি ঈদের পরদিন আসতে পারবো ..।
: আচ্ছা ঠিক আছে ... ছোট মামার কাছে সব বলা আছে কোথায় দেখা হবে ..... আপনি আসবেন কিন্তু ...।
:ওকে নো প্রবলেম ...
: রাখছি .........
: হ্যা রাখো ......
আমরা মেসেজে ছাড়া কেউ কাউকে নিজের মুখে জাতীয় সংগীতের দ্বিতীয় লাইনটি বলিনি ।
এবং তাকে আমি স্পর্শও করিনি ...। সুযোগ থাকা স্বত্বে ও । কারন ভাবতাম "তারা" যদি খারাপ ভাবে ....।
আর সত্যিই অনেক বেশি ভালবাসতাম মনে হয় তাই নিজের ভালবাসার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ টা একটু বেশি ছিলো ...।
ঈদের দিনও ২মিনিট কথা হলো ...। সব কিছু ফাইনাল ... আমি সকালে যেয়ে পার্কে বসে থাকবো .. ১০/১১টার দিকে ও আসবে ওর ছোট মামার সাথে ..।
পরদিন ভোর পাঁচটায় উঠে শুধু মা কে একটু মিথ্যা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখি মাত্র ২/৩ হাত দুরের মানুষও দেখা যায় না । কুয়াশা পড়ছে চরমে ..।
৫:৩০ এ রওনা হয়ে প্রায় ১০ কি.মি হেটে ৬:২০ এর দিকে স্ট্যান্ডে পৌছে একটা নসিমন না করিমন ঐ গাড়িতে চড়ে শীতে কাঁপতে কাঁপতে আমার গন্তব্যে পৌঁছালাম যখন তখন প্রায় ৮টা বাজে ।
একটা রিক্সা নিয়ে চলে গেলাম পার্কে .... পরিচিত হওয়ায় তখনই ঢুকে পড়লাম ... তারপর একটু ফ্রেস হয়ে ৯:৩০ টার দিকে একটি গোলাপ ফুলের তোড়া কিনে এনে বসে থাকলাম ...। আসার সময় এক প্যাকেট চিপসও কিনেছিলাম ..। ওটাই টুকটুক করে খাচ্ছি আর পা্র্কের দরজার দিকে তাকিয়ে আছি ..। কখন ওরা আসবে ...!!!!
তখন সাড়ে ১১ টার কিছু বেশি বাজে ... দেখলাম ওর মামা একা ঢুকছে দরজা দিয়ে .... আমার কাছে আসা মাত্রই যেন বিস্ফোরিত হলো.....
একনাগাড়ে কিছু কথা বলে গেল .... "তারা" রাতে আমার উদ্দেশ্যে চিঠি লেখার সময় ধরা পড়েছে ওর বাবার হাতে .।
তাই ওর বাবা ওকে মেরে ঘরের দরজা বন্ধ করে রেখেছে ... ওর মামাকেও নাকি দেখা করতে বলেছে ..। এই কথা গুলো বলে ... আরও একটু বকাঝকা করে
তারপর আবার চলে গেল ..... আমাকে বাড়ী চলে যাবার কথা বলে....
কি আর করা ওর মামা একা আসছে বলে ফুলের তোড়াটা লুকিয়ে রেখেছিলাম ..... তারপর ওটা ঐখানেই রেখে চলে আসি ...। ওখানে এখনও একটা স্মৃতি চিহ্ন আছে । এই তো এই ঈদের পরদিনও দেখে আসলাম.....।
আমি সারা দিন এদিক সেদিক ঘুরে রাত ৯টার দিকে বাড়ী ফিরলাম,, সারাদিন পানি আর ঐ চিপস ছাড়া আর কিছু পেটে পড়ে নি .....
এর মাঝে বাড়ীর লোকজন কয়েক শত বার ফোন দিয়েছিলো ...... আমি একটাও রিসিভ করিনি .....
তারপর বাড়ি ফিরে সবার ননস্টপ বকা খেয়ে যখন নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে আছি তখন মা রুমে ঢুকে আমার পাশে বসলে আমি মা কে ধরে অনেক কান্না করেছিলাম .....।
ছোট ছেলে তো তাই কারও বকা সহ্য হয় না ... এই ভেবে মা সান্তনা দিলো ...। গালে তুলে ভাত খইয়ে দিলো ...
ঐ দিন ঠান্ডা এবং সারা দিন না খাওয়ার কারনে গরম লেগে ব্যাপক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম ....
এর পর মাত্র ২ মাস পরেই ওর জন্ম দিনে আরও একটি গিনেস বুকে লিখে রাখার মত ঘটনা ঘটিয়েছিলাম .....
সেটা কালকে বলবো......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।