http://www.somewhereinblog.net/blog/marufk56
'ও'র উপরে আমি একটু রাগ করেছি। ওর উপর রাগ প্রকাশ করতে চাইলে আমি সাধারণত যা করি, এবারও তা-ই করলাম। মোবাইল ফোনটা এই অপশনে সেট করলাম যাতে লিস্টেড কয়েকজন ছাড়া কেউ রিং করে আমাকে পাবে না। তারা পাবে- 'ইউজার বিজি'। আমার মোবাইলে কোন রিং হবে না।
রিংটা আপনাআপনি কেটে যাবে। তবে মিসকলের লিস্ট-এ নম্বরটা থেকে যাবে। পরে আমি দেখতে পাব, কে কল করার চেষ্টা করেছিল। এই অপশনটা 'সনি এরিকসন'-এর সেট-এ আছে ( এটা মোবাইল সেট-এর বিজ্ঞাপন ভেবে নেবেন না), অন্য সেট-এ আছে কিনা জানা নেই।
তো, বরাবরের মতো বাবা-মা,রুমমেট,দুই ক্রাইম রিপোর্টার আর চীফ রিপোর্টারের নম্বরটা লিস্ট-এ রেখে ঐ অপশনটা চালু করলাম রাতে।
রাতে 'ও' ট্রাই করলো কয়েকবার, আমি ওর নম্বর দেখি আর মনে মনে প্রতিশোধের আনন্দ ফুলকি দিয়ে ওঠে। 'সরি', 'মাপ চাই' জাতীয় মেসেজের পর্ব শেষ করে 'শয়তান, ফোন ধরতে না চাইলে বন্ধ করে রাখ' টাইপের মেসেজেও আমি বিচলিত হই না। ঐ অপশনে রেখেই রাতে ঘুমাই। পরদিনও একই অবস্থা। পরিচিত অন্য কারো নম্বর দেখতে পেলে তার নম্বরটাও সাময়িকভাবে লিস্ট-এ রেখে তাকে মিসকল দেই।
অপরিচিত নম্বর হলে আর দেই না।
সকাল থেকে অপরিচিত আরেকটা নম্বর থেকে বার বার চেষ্টা করা হতে থাকে। তবে এইরকম 'অভিমান-পর্ব' সময়ে আমি অপরিচিত নম্বরে মিসকল ব্যাক করি না। যদি 'ও' হয় ফোনের অপরপ্রান্তে - আমার সাথে কথা বলার সুযোগ তো আমি 'ও'কে দেব না!
রাত এগারোটার দিকে ঐ অপরিচিত নম্বর থেকে মেসেজ আসে... 'মেসেজ পেলে ফোন কোরো। জরুরী।
ম...' আঁৎকে উঠি। 'ম' চাচা! নতুন নম্বর নিয়েছেন বোধহয়। আমার কাছে আছে পুরনোটা। তিনি তো সাধারণত আমাকে ফোন করেন না। তার ফোন করা - তা-ও সারাদিন চেষ্টা করার মানে অবশ্যই জরুরী কিছু।
তক্ষুণি চাচাকে ফোন করি। 'কোথায় ছিলে সারাদিন?'
তাকে তো আর সত্য কথাটা বলতে পারি না। বলি, 'ফোনে একটু সমস্যা হয়েছে । '
'কালকে আসতে পারবা একটু অফিসে?'
'জ্বি পারব। দুপুরে।
ডিউটি শেষে। '
'আচ্ছা , আস। '
কি কারণে তা আর জিজ্ঞাসা করি না। অবশ্যই জরুরী কোন কারণে, না হলে উনি যেতে বলতেন না অফিসে।
.. দুপুরে ডিউটি শেষে যাই তার অফিসে।
নতুন একটি পত্রিকার অফিস। আগেও একবার এসেছিলাম। তবে তার রুমে না। রিপোর্টিং সেকশনে, তাদের ক্রাইম রিপোর্টারের সাথে।
পারিবারিক কিছু আলাপচারিতার পর তিনি আসল কথায় এলেন, স্বাস্থ্যপাতার দায়িত্ব নিতে পারে, এরকম কাউকে খুঁজছেন তিনি।
আমি দু-একজনের নাম বললাম। কিন্তু পত্রিকা যে টাকা দেবে তাতে তারা কাজ করবেন বলে মনে হয় না। চাচাও একমত হলেন। তবে ম্যানেজমেন্ট এজন্য ঐ টাকাই বরাদ্দ রেখেছে। তাই তিনিও পুরনো,অভিজ্ঞদের পাওয়ার আশা করছেন না।
আগের দিন ডাঃ 'ক'- এর সাথেও কথা হয়েছে। তিনিও অত কমে কাজ করবেন না বলে জানিয়েছিলেন। ডাঃ 'ক' অন্য একটি নামকরা পত্রিকার সাথে যুক্ত আছেন দীর্ঘদিন ধরে।
আমি উৎফুল্ল হয়ে উঠি। এবার চাচা আসছেন আসল কথায়।
আমার একটা সাধ পূরণ হতে যাচ্ছে। মেডিক্যাল রিপোর্টার হিসেবে জনকন্ঠে আমি এর চেয়ে বেশীই পাচ্ছি। কিন্তু মেডিক্যালে থাকার সময় তো প্রায় শেষ হয়ে আসছে। ইন্টার্ণীর মাঝামাঝি সময়। কোন পত্রিকার স্বাস্থ্য পাতার দায়িত্ব নেয়ার আশা রিপোর্টিং-এর শুরু থেকেই।
পত্রিকার সাথেও থাকা হবে, আবার রিপোর্টিং-এর রেগুলার ঝামেলাটাও পোহাতে হবে না।
চাচা বললেন, 'এই জন্যই তোমাকে কাল সারাদিন ফোন করেছিলাম। যে আগে স্বাস্থ্য পাতা টেম্পরারী বেসিসে দেখতো, সে হঠাৎ করে চলে গেছে। তিনদিনের মধ্যে পরের সপ্তাহের পাতাটা বের করতে হবে। '
আমি বলতে চাইলাম, কোন ব্যাপার না, তিনদিনের মধ্যে আমি বের করতে পারব।
কিন্তু তার আগেই তার পরের কথাটা আমার সকল আশার প্রদীপ নিভিয়ে দিল - ' ডাঃ 'ক' আজকে সকালে ফোন করে বলেছেন, ঐ বেতনেই তিনি করবেন। আজকে বিকেলে তার আসার কথা। যদি না করেন, বা না আসেন.. তাহলে আমি তোমাকে জানাবো। তাহলে দুদিনের মধ্যে কিন্তু পেস্টিং-এ দিতে হবে। '
সে-ই সুযোগ আর আসেনি।
ডাঃ 'ক' শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য পাতা দেখছেন ঐ পত্রিকার। এখনও। আজও মনে হয়, আহা! হয়তো- ফোনটা খোলা থাকলে আমি ঐ দিনই চাচার সাথে দেখা করতে পারতাম ! পরদিন সকালে ডাঃ 'ক' -এর ঐ ফোন আসার আগেই আমার কাজ করার ব্যাপারটা চূড়ান্ত হয়ে যেত! শুধু একটা দিন ফোনটা ঐ অপশনে রাখার খেসারত। ....
....রিপোর্টিং ছেড়েছি অনেকদিন। কোন পত্রিকার স্বাস্থ্যপাতার দায়িত্ব আর নেয়া হয়নি।
মাঝে নাম-ডাকহীন আরেক পত্রিকার স্বাস্থ্য পাতায় পুরো দায়িত্ব পাওয়ার আশ্বাসে কিছুদিন কাজ করি। তবে চার মাস পরই সে আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় ছেড়ে দিয়ে আসি- সে আরেক কাহিনী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।