কোনও একদিন বছর গেলে শুনি কোথাও সে বৃক্ষ হতে চেয়ে চেয়ে হয়েছেও, আমি ঘাস, ঘাসই রয়ে গেছি, ফুল ফোটাই, দিনভর আকাশ দেখি, বাঁচি।
হাত
আবার আমি তোমার হাতে রাখবো বলে হাত
গুছিয়ে নিয়ে জীবনখানি উজান ডিঙি বেয়ে
এসেছি সেই উঠোনটিতে গভীর করে রাত
দেখছ না কি চাঁদের নীচে দাঁড়িয়ে কাঁদি দুঃখবতী মেয়ে !
আঙুলগুলো কাঁপছে দেখ, হাত বাড়াবে কখন ?
কুয়াশা ভিজে শরীরখানা পাথর হয়ে গেলে ?
হাত ছাড়িয়ে নিয়েছিলাম বর্ষা ছিল তখন,
তখন তুমি ছিঁড়ে খেতে আস্ত কোনও নারী নাগাল পেলে।
শীতের ভারে ন্যুব্জ বাহু স্পর্শ করে দেখি
ভালবাসার মন মরেছে, শরীর জবুথবু,
যেদিকে যাই, সেদিকে এত ভীষণ লাগে মেকি।
এখনও তুমি তেমন আছ। বয়স গেল, বছর গেল, তবু।
নিজের কাঁধে নিজের হাত নিজেই রেখে বলি :
এসেছিলাম পাশের বাড়ি, এবার তবে চলি।
তসলিমা নাসরিন
“আয় কষ্ট ঝেঁপে, জীবন দেব মেপে”
এই অসাধরাণ কবিতাটিতে হাত হচ্ছে নির্ভরতার প্রতীক। জীবনের একটা সময়ে অন্যের হাত নিজেকে পরম স্বস্তি দেয়। আরেকটা সময়ে নিজের হাতই নিজেকে স্বস্তি দেয়। একটা সময়ে যে অন্যের হাতের স্পর্শ চায়, আরেকটা সময়ে, যখন সে অনেক অভিজ্ঞ, যখন সে বোঝে মানুষ সত্যিই একা, তখন সে নিজের হাতকেই বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট মনে করে।
নারীর জীবনে ভালোবাসা বদলায়। নারী কখনো কখনো প্রতারককে ছেড়ে চলে যায়। তারপর নিজেই কষ্ট পায়। তার ভালোবাসা তাকেই অনুশোচনা গ্রস্ত করে। একদিন সেই ভালোবাসাও মরে যায়।
তার অভিজ্ঞতা দিনে দিনে বাড়ে। সে বুঝতে পারে যে সে কোনো ভুল করেনি। ভুল যা করার, সেই প্রতারক পুরুষটিই করেছে।
তবুও একদিন আবার সে ফিরে যায়। এইভেবে, হয়তো সে এতদিনে আমার অভাবে অনুশোচনায় পাল্টে গেছে।
এইভেবে, তার একাকীত্ব হয়তো লাঘব করবে এখন একাকীত্বে ভোগা আগের সেই প্রতারক পুরুষটিই।
কিন্তু পুরুষ আবারো তার শরীরের দিকে হাত বাড়ায়। কারণ, সে নারী বলতে বোঝে নারীর শরীরকেই। সে মনে করে নারীর শরীর তাকে ভোগ করার জন্য নিয়ামক হিসেবে দেয়া হয়েছে। তখন নারী সত্যি সত্যি একা হয়ে যায়।
সে নিজেই নিজের ওপর নির্ভর করতে শেখে। পুরুষ ছাড়াও বেঁচে থাকতে শেখে। নিজের কাঁধে অন্যের হাত নয়, অন্যের স্বান্তনা নয়, অন্যের ‘পরে নির্ভরতা নয়, নিজের হাত, নিজের স্বান্তনা, নিজের ‘পরে নির্ভরতা রাখে সে। মেনে নেয় জীবনের নিয়মকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।