ডাক্তার যেদিন জানালেন চার মাস বেড রেস্ট আর তারপর যাবতীয় ভ্রমণ নিষিদ্ধ, শুধুই বাসায় থেকে বিশ্রাম নিতে হবে পুরো নয়মাস সেদিন সামনের দিনগুলি নিয়ে কোনও ভাবনাই মাথায় আসেনি। মনে হলো এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাভাবিক ব্যাপার। এমনই তো হবার কথা। পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ উপহার পেতে হলে এইটুকু কষ্ট সহ্য তো করতেই হবে। এবার আর কোন ভুল নয়।
স্কুল থেকে এক বছর ছুটি পেতেও তেমন ঝামেলা হলনা। অতঃপর শুরু হল আমার অপেক্ষার পালা।
প্রথম চারমাস শুধুই বিছানা সঙ্গী। টিভি দেখতে অসহ্য লাগত। বই পড়লে গা গুলিয়ে উঠত।
সময় কাটত শুধু ঘরের ছাদ আর দরজা জানালার পর্দার ভাঁজে চোখ রেখে। কিন্তু তবু কি সময় কাটত? এ যেন জোর করে ঠেলে ঠেলে সময় পার করে দেয়া। এর মাঝে আরও বেশি অসুস্হ হয়ে হসপিটালেও যেতে হল দুবার। তবুও যেন সময় যায়না। মাঝে মাঝে মনে হয় এ বছরই যেন নয় মাস অনেক বেশি সময় নিয়ে যাচ্ছে।
আমার প্রিয় ক্ষেত্রগুলো যেমন সামু,ফেসবুক এগুলো থেকেও অনেক দুরে চলে গেলাম কারণ কম্পিউটারের সামনে বসলে মাথা ঘুরতে থাকে। এত কস্টের মাঝেও শান্তির পরশ পেতাম তখনই যখন চোখ বুজলেই একটি স্বর্গীয় হাসি দেখতে পেতাম। জানিনা সে কেমন হবে। কি রুপেই বা সে আসবে আমার কাছে। সে কি হবে আমার আদরের রাজপুত্র নাকি আহ্লাদী কোন রাজকন্যা।
কেমন হবে সে দেখতে? ছোট্ট ছোট্ট পা দিয়ে যখন সে লাথি মারত বুঝতাম বেশ দস্যিই হবে আমার দেবদূত অথবা পরীটা। এ এক অদ্ভুত অনুভূতি যা ভাষায় প্রকাশ করা যায়না।
অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হল। আমার এই ছোট্ট ঘর আলো করে এল আমার রাজকন্যা, আমার ছোট্ট পরী। আধো ঘুম আধো জাগরণের মাঝে যখন ওকে প্রথম দেখি সে অনুভূতি প্রকাশ করার চেস্টাই আর করছিনা।
কোন মা ই বা কবে পেরেছে তার প্রথম মা হবার অনুভূতি যথার্থভাবে কলমে ফুটিয়ে তুলতে? আমিও পারব না। শুধু এটাই জানি আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহারটি এখন আমার কোলে।
আমার মত একজন অতি ক্ষুদ্র মানুষ কে এত সুখ দেওয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার সীমা নেই। শুধু ভয় হয় এই ইভ টিজিং এর সমাজে আমার মেয়েটাকে আমি সব ধরনের বিপদ থেকে আগলে রাখতে পারব তো? দেখতে দেখতে পাঁচ মাসে পা দিল আমার রুপকথা। এভাবেই একদিন পায়ে পায়ে পাঁচ,দশ,পনের,বিশ করে এগিয়ে যাবে সে।
তখনও কি সমাজটা এরকমই থাকবে? একটুও কি পাল্টাবে না? জানিনা।
এই পাঁচ মাসের মত ওর বাঁকি জীবনটাও যেন এমনই আদর এমনই যত্নে কেটে যায়,সবরকম অনিস্ট থেকে ও যেন নিজেকে রক্ষা করতে পারে সৃষ্টিকর্তার কাছে এখন এটাই আমার একমাত্র চাওয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।