কি লিখি!!!
মিলির একটা বিড়াল আছে। মাঝে মাঝে মিলির ইচ্ছা করে বিড়ালটাকে বাইরে ফেলে দিয়ে আসতে। কিন্তু সেটা কখনও সম্ভব না কারণ মিলির বাবা মাহতাব সাহেব বিড়ালটি মিলির জন্মদিনে গিফট করেছিল। কোন একদিন কথাচ্ছলে মিলি তার বাবাকে বলেছিল একটা বিড়াল কিনে দেওয়ার জন্য। এইবারের জন্মদিনে মাহতাব সাহেব এই সুযোগটি ভালোভাবে কাজে লাগালেন।
মিলিকে চমকে দেওয়ার জন্য ঠিক ঠিক রাত বারোটার সময় মিলিকে বিড়াল উপহার দিলেন। বিড়াল পেয়ে মিলি একই সাথে আনন্দিত এবং ব্যাথিত হয়েছিল। মাহতাব সাহেব বিড়াল দিয়ে মেয়েকে যেভাবে চমকে দিলেন তাতে মিলি যে অনেক খুশী হয়েছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি করল বিড়ালটা। কি তার গায়ের রং আর রূপের বাহার।
মিলি চিন্তা করে পেলো না যে তার বাবার রুচি এতো খারাপ হয় কীভাবে?? কাঁটাবনে কত সুন্দর সুন্দর ,কিউট কিউট, শাদা- বাদামি- ধূসর রঙের বিড়াল দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু তার বাবা খুঁজে খুঁজে আনলেন একটা কুচকুচে কালো রঙের বিড়াল। যেটার গায়ে আবার হাল্কা সাদা সাদা ছোপ ছোপ। তবে সেটা সামান্যই। মিলি বুদ্ধিমতী মেয়ে।
সে বিড়াল নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে হৈ –হূল্লোড় করল। সে তার বাবাকে বুঝতে দেয় নি যে তার বিড়াল পছন্দ হয় নি।
সেই যে শুরু হল। গত ছয় মাস ধরে বিড়ালের যন্ত্রণায় মিলি ত্যক্ত- বিরক্ত। মিলি বিড়ালটাকে একটুও সহ্য করতে পারে না অথচ বিড়ালটা সারাক্ষণ আঠার মতো লেগে থাকে।
বাসার সবাই মিলে খেতে বসেছে তখন হয়ত দেখা যায় বিড়ালটাও টেবিলের উপর উঠে বসে আছে। অন্য কারো খাবারের উপর বিড়ালের কোন লোভ নেই। সব লোভ যেন মিলির প্লেটের উপর। খুব আগ্রহ নিয়ে চিকেনে কামড় দিতে যাবে ঐ মুহূর্তে বিড়ালটা চিকেনের সামনে মুখ নিয়ে মিয়াঁও মিয়াঁও করতে থাকে। এক অসহ্য পরিবেশ।
আর বিড়াল নিয়ে মাহতাব সাহেবের আগ্রহের কোন শেষ নেই। খুব ফুর্তি নিয়ে সব সময় বলতে থাকেন,” আহা, বিড়ালটা যে ক্রমশ মিলির ন্যাওটা হয়ে উঠছে। মিলি মা, তুই অনেক লাকি। এই রকম আর কয় জনের হয় রে!! আমার উপহার দেয়া সার্থক। “ আর মিলি হায়েনার মতো জ্বলতে থাকে।
না পারে কিছু বলিতে, না পারে কিছু সহিতে।
ঐদিন শুক্রবার ছিল। দুপুরের খাওয়াদাওয়া শেষ করে মিলিদের বাসার সবাই নিজ নিজ রুমে চলে গেল। মিলিও নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে সাথে সাথে মিনারকে ফোন দিলো। কিন্তু মিনার কল রিসিভ করল না।
আরও বেশ কয়েকবার কল দিল কিন্তু আশায় গূঁড়েবালি। আসলে হয়েছে কি, মিলির সাথে মিনারের ঝগড়া চলছিল কয়েকদিন ধরে। মিনারের রাগ তখনও পরে নাই। ধৈর্য বলেও যে কোন শব্দ ডিকশনারিতে আছে এটা ও মিলির জানা নেই। কোথায় একটু চুপচাপ থাকবে তা না, ফোনের পর ফোন দিতেই থাকল।
অতঃপর,মিলি ব্যর্থ মনোরথে গুনগুন করে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। কখন যে মিলির চোখ বন্ধ হয়ে আসলো মিলি নিজেই জানে না। কিছুক্ষণ পর মিয়াঁও মিয়াঁও শব্দে মিলির ক্ষণিকের ঘুম ভাঙল। চোখ খুলে মিলির মেজাজ পুরোই খারাপ হয়ে গেল। বিড়ালটা বিছানায় উঠে কোলবালিশের সামনে গুটিসুটি মেরে বসে আছে আর মিলির দিকে তাকিয়ে আছে।
এই অবস্থা দেখে মিলির উপর যেন হায়েনা ভর করল। রাগে – দুঃখে- ক্ষোভে মিলি বিড়ালটাকে দুইহাতে ধরে আছাড় দিয়ে ফেলে দিল। বিড়ালটা পড়ল গিয়ে বারান্দায়।
কিন্তু পাঁচ- দশ মিনিট হয়ে গেল বারান্দা থেকে কোন মিয়াঁও মিয়াঁও শব্দ আসে না। মিলি প্রচণ্ড ভয় পেল।
মরে টরে গেল কিনা এইরকম আশংকা করে মিলি বারান্দায় গেল। বারান্দায় গিয়ে মিলি পুরোপুরি আক্কেলগূডূম। কোথাও কোন বিড়াল নেই বরং একটা সুন্দর একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ছেলেটার গায়ে আগের যুগের রাজা বাদশাহদের মতো জরি-চূমকী ওয়ালা পোশাক। ভয়ঙ্কর খ্যাত ।
কিছু বলার আগেই ছেলেটা বলল,” সুন্দরী, তুমি আমাকে বিড়াল থেকে মানুষে রূপ দিয়েছ। তোমার এই ঋণ আমি কখনও শোধ করতে পারব না। আমায় বিয়ে করবে সুন্দরী??“
এমন আক্কেলগূডূম অবস্থা মিলির জীবনে ও হয় নি। মিলি আমতা আমতা করে বলল,” ভাই, কি যা তা বলছেন? আপনি আমার রুমের বারান্দায় কি করেন?বাসায় কীভাবে ঢুকলেন? আর আমি আপনাকে জীবনেও দেখি নি। আমার বাবা অনেক রাগী।
যদি আপনাকে দেখে সাথে সাথে পুলিশে ধরিয়ে দেবে। "
মিলি ভেবেছিল ছেলেটা এই কথা শুনে রেগে যাবে। কিন্তু কীসের কি?? বরং আরও লজ্জা লজ্জা করে বলতে লাগলো,” সুন্দরী, তুমি আমার নতুন জীবন দিয়েছ। আমি কিরকিরখান রাজ্যের রাজকুমার। এক ডাইনি বুড়ী আমাকে জাদুবলে বিড়াল বানিয়ে দিয়েছিল।
আর বলেছিল, যদি কোন মেয়ে আমাকে আছাড় দেয় তাহলেই আমি আবার মানুষে রূপ লাভ করবো। আজ তুমি আমার এতো দিনের মনোকামনা পূরণ করেছো। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই, সুন্দরী। “
মিলির উপর আবার হায়েনা ভর করল। মিলি রাজকুমারের ভালোমানুষির সুযোগ নিয়ে বলল, “ দেখেন, আপনাকে বিয়ে করতে আমার ঠেকা পড়ে নাই।
আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। আর আপনার সেই রাজ্য- রাজত্ব আর নেই। যদি ভালো চান তাহলে এক্ষূণী চলে যান। নইলে আমার বাবা যখন আপনাকে RAB এর হাতে ধরিয়ে দেবে তখন আবার বিড়াল হয়ে যেতে ইচ্ছা করবে। RAB এর ক্রস ফায়ারের গল্প তো জীবনেও শুনেন নি।
শুনলে বিয়ের ইচ্ছা বাপ বাপ করে পালাবে। এখন ফুটেন। “
রাজকুমার,” ক্রস ফায়ার কি জিনিস? ডাইনি বুড়ীর চেয়েও কি মারাত্মক? সত্যি সত্যি এমন জিনিস পৃথিবীতে আছে নাকি?”
মিলি ব্যাপক ভাব নিয়ে বলল, “ হূম। ডাইনি বুড়ী তো আপনাকে হাজার হাজার বছর ধরে বিড়াল বানিয়ে রেখেছে। RAB এর পাল্লায় পড়লে এক ধাক্কায় পরকালে চলে যাবেন।
অনেক হয়েছে। এখন ফুটেন। “
রাজকুমার,” কিন্তু মিলি আমি যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। “
মিলি বলল, “ মহান কাজ করেছেন। কিন্তু আমার বয়ফ্রেন্ড আছে।
তাকে ছাড়া তো আমার চলবে না। “
রাজকুমার,” ঠিক আছে,সুন্দরী। আমি চলে যাচ্ছি। তুমি আমাকে বিড়াল থেকে আবার মানুষ বানালে ,তোমার উদারতা ও মহানুভবতার কথা আমার সারা জীবন মনে থাকবে!!!!“
মিলি রাজকুমারের বোকামি আর ভালোমানুষি দেখে না হেসে পারলো না। হাসিমুখে বিড়াল রাজকুমারকে বিদায় দিল।
Click This Link ( ২য় পর্ব)
Click This Link ( ৩য় পর্ব)
Click This Link ( শেষ পর্ব) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।