আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিদ্যুত্ উত্পাদন চার বছর আগের চেয়েও কমেছে



দেশে বিদ্যুতের উত্পাদনে ধস নেমেছে। চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৩ হাজার ২৮৩ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন হয়েছে গত ১ ডিসেম্বর বুধবার। পর দিন বৃহস্পতিবার সান্ধ্য পিকআওয়ারে বিদ্যুত্ উত্পাদিত হয়েছে ৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট, যা প্রায় চার বছর আগে ২০০৭ সালের গোড়ার দিকের গড় বিদ্যুত্ উত্পাদনের চেয়েও কম। ২০০৬ ও ২০০৭ সালে প্রতিদিন পিকআওয়ারে বিদ্যুতের গড় উত্পাদন ছিল ৩ হাজার ৪শ’ থেকে ৩ হাজার ৭শ’ মেগাওয়াট। চার বছরে বিদ্যুতের চাহিদা যেখানে দেড় হাজার মেগাওয়াটের অধিক বেড়েছে, সেখানে বিদ্যুত্ উত্পাদনে এ ভয়াবহ ধস নামায় ঘাটতি বৃদ্ধি পেয়েছে মোটা দাগে।

কুইক রেন্টালের নামে বিনা টেন্ডারে দলীয় লোকজনকে উচ্চদরে বিদ্যুত্ কেন্দ্রের কাজ দেয়ার পরও উত্পাদন পরিস্থিতির উন্নতি না হয়ে অবনতি ঘটে চলেছে। শীতের কারণে গ্রাহকরা গরমের কষ্ট থেকে রেহাই পেলেও বিদ্যুতের ব্যাপক লোডশেডিংয়ে শিল্পকারখানায় উত্পাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে ফাইনাল পরীক্ষার্থীদের পড়ালেখা হচ্ছে বিঘ্নিত। বিদ্যুিনর্ভর সব খাতেই সৃষ্টি হচ্ছে অচলাবস্থা। বিদ্যুত্ উত্পাদনে কেন এমন ধস নেমেছে তা জানার জন্য পিডিবি’র চেয়ারম্যান এসএম আলমগীর কবিরকে তার সেল ফোনে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি।

তবে পিডিবি’র উচ্চ পর্যায়ের অপর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিনা টেন্ডারে নতুন নতুন বিদ্যুত্ কেন্দ্রের কাজ দেয়ার জন্যই সরকারি প্রধান প্রধান বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্র অচল করে দিয়ে কৃত্রিমভাবে সঙ্কটকে গভীর করা হচ্ছে কিনা, আপনারা সাংবাদিক হিসেবে তা অনুসন্ধান করতে পারেন। জানা গেছে, সরকারি খাতের বড় বড় বিদ্যুত্ কেন্দ্রগুলো অচল থাকায় চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বিদ্যুত্ উত্পাদন হচ্ছে গত কয়েক দিনে। দেশের বৃহত্তম বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্র ঘোড়াশালের ৯৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিপরীতে এখন পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২২০ মেগাওয়াট। চট্টগ্রামের রাউজানে ৪২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুত্ কেন্দ্র মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। ২৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত্ কেন্দ্রও অচল।

সিদ্ধিরগঞ্জের ২১০ ও ১০৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার দু’টি কেন্দ্রই বিকল হয়ে আছে। আশুগঞ্জের প্রায় সাড়ে ৭শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুত্ কেন্দ্রে এখন উত্পাদন হচ্ছে অর্ধেক ৩৮০ মেগাওয়াট। বেসরকারি খাতের মেঘনাঘাট ৪৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্র থেকে বৃহস্পতিবার পাওয়া গেছে ২২২ মেগাওয়াট। বাংলাদেশ বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবি’র বিদ্যুত্ উত্পাদন সংক্রান্ত তথ্য পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পিকআওয়ারে ওই বছরের সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদিত হয়েছিল। ওই মাসের গড় উত্পাদন ছিল ৩ হাজার ৬৯৭ মেগাওয়াট।

পরের মাস অক্টোবরে গড় উত্পাদন হয়েছে ৩ হাজার ৫০৭ মেগাওয়াট। ২০০৭ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে বিদ্যুতের গড় উত্পাদন ছিল যথাক্রমে ৩ হাজার ৩২১ ও ৩ হাজার ৩১৫ মেগাওয়াট। ২০০৮ সালে মাসওয়ারি বিদ্যুতের গড় উত্পাদন ছিল জানুয়ারিতে ৩ হাজার ৩৯৯ মেগাওয়াট, ফেব্রুয়ারিতে ৩ হাজার ৫২৯ মেগাওয়াট, মার্চে ৩ হাজার ৭৮৩ মেগাওয়াট, এপ্রিলে ৩ হাজার ৬৩৯ মেগাওয়াট, মে’তে ৩ হাজার ৪২৩ মেগাওয়াট, জুনে ৩ হাজার ৩৬৬ মেগাওয়াট, জুলাইতে ৩ হাজার ৪০১ মেগাওয়াট, আগস্টে ৩ হাজার ৪৩৬ মেগাওয়াট, সেপ্টেম্বরে ৩ হাজার ৮০৪ মেগাওয়াট, অক্টোবরে ৩ হাজার ৭৭৭ মেগাওয়াট, নভেম্বরে ৩ হাজার ৬৯৫ মেগাওয়াট এবং ডিসেম্বরে ৩ হাজার ৬৪৭ মেগাওয়াট। প্রতিদিন পিকআওয়ারে উল্লেখিত পরিমাণ বিদ্যুত্ উত্পাদন হয়েছিল। ২০০৯ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ বছরও পূর্ববর্তী বছরের মতো গড় উত্পাদন ৩ হাজার ৫শ’ মেগাওয়াট থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে ওঠানামা করেছে।

২০০৯ সালের জানুয়ারিতে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের মাসে প্রতিদিন গড় উত্পাদন ছিল ৩ হাজার ৫২৫ মেগাওয়াট। পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে ৩ হাজার ৩৮৫ মেগাওয়াট, মার্চে ৩ হাজার ৬১৬ মেগাওয়াট, এপ্রিলে ৩ হাজার ৭৫৩ মেগাওয়াট, মে’তে ৩ হাজার ৭৭৪ মেগাওয়াট, জুনে ৩ হাজার ৮৪৭ মেগাওয়াট, জুলাইতে ৩ হাজার ৯৫৬ মেগাওয়াট, আগস্টে ৩ হাজার ৯৬৮ মেগাওয়াট, সেপ্টেম্বরে ৪ হাজার ৭৯ মেগাওয়াট, অক্টোবরে ৩ হাজার ৯২৬ মেগাওয়াট, নভেম্বরে ৩ হাজার ৭৫৪ মেগাওয়াট এবং ডিসেম্বরে ৩ হাজার ৭৭৫ মেগাওয়াট। চলতি ২০১০ সালের মার্চ পর্যন্ত বিদ্যুতের উত্পাদন ৪ হাজার মেগাওয়াটের কোটা ছুঁতে পারেনি। জানুয়ারি মাসে প্রতিদিন পিকআওয়ারে বিদ্যুতের গড় উত্পাদন ছিল ৩ হাজার ৬৭৯ মেগাওয়াট। ফেব্রুয়ারিতে গড় উত্পাদন হয় ৩ হাজার ৭৬৮ মেগাওয়াট।

মার্চে ৩ হাজার ৯৯০ মেগাওয়াট। এপ্রিলের দিকে বিগত চারদলীয় জোট ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার কয়েকটি রেন্টাল বিদ্যুত্ কেন্দ্র গ্রিডে যুক্ত হলে উত্পাদন ৪ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করে। এপ্রিলে ৪ হাজার ১৩৯ মেগাওয়াট, মে’তে ৪ হাজার ৭২ মেগাওয়াট, জুনে ৪ হাজার ৭৬ মেগাওয়াট, জুলাইতে ৪ হাজার ৫৫ মেগাওয়াট, আগস্টে ৪ হাজার ৩২২ মেগাওয়াট, সেপ্টেম্বরে ৪ হাজার ৩৫১ মেগাওয়াট, অক্টোবরে ৪ হাজার ৭২ মেগাওয়াট এবং নভেম্বরে ৩ হাজার ৬৯২ মেগাওয়াট। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পুরো নভেম্বর মাসে বিদ্যুতের উত্পাদন কোনোদিনই ৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হতে পারেনি। ৩ হাজার ৩শ’ থেকে ৩ হাজার ৮শ’ মেগাওয়াটের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এ মাসের উত্পাদন।

২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সান্ধ্য পিকআওয়ারে বিদ্যুত্ উত্পাদন হয় ৩ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াট। একই তারিখে দিবা পিকআওয়ারে উত্পাদন হয়েছে ২ হাজার ৯৩৫ মেগাওয়াট। ২ ডিসেম্বর পিডিবি’র হিসাবে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুত্ ঘাটতি ছিল ১ হাজার ১শ’ মেগাওয়াট। চাহিদা ৪ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াট দেখিয়ে এ ঘাটতি প্রদর্শন করা হয়েছে। বাস্তবে বিদ্যুতের বর্তমান চাহিদা কমপক্ষে সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট।

কয়েক দিন আগে বিদ্যুত্ মন্ত্রণালয়ের প্রেস ব্রিফিংয়েও সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার কথা স্বীকার করা হয়েছে। শীতের কারণে চাহিদা কিছুটা কমলেও তা ৫ হাজার মেগাওয়াটের ওপরে রয়েছে বলে পিডিবি কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছেন। সুত্র: আমার দেশ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.