আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুক্তির মাতাল অশ্বে ট্রানজিট



গৌরচন্দ্রিকা ছাড়াই দাবি করছি, ট্রানজিট এখন যুক্তির মাতাল অশ্বে চড়ে বসে আছে। কেউ এটাকে যুক্তি দিয়ে 'জায়েজ' বানাচ্ছেন, কেউ বা বানাচ্ছেন 'নাজায়েজ'। মধ্যপন্থীরা বেশ নিরাপদ দূরত্বে থেকে নসিহত করছেন, ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বেশ কিছু জাতীয় ইস্যুর সমাধান না হওয়ার আগে ট্রানজিট দেয়া ঠিক হবে না। আবার সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এক শ্রেণীর সুশীল (এরা আবার স্বার্থের ডালে ডালে বাদুরের মতো ঝুলে থাকে) পণ্ডিতী দেখিয়ে দাবি করছেন, 'আরে ভাই ট্রানজিট হলো অর্থনৈতিক ইস্যু। এটার গায়ে রাজনীতির লেবেল সেঁটে দেয়া মোটেও ঠিক হচ্ছে না'।

অন্যদিকে তাত্ত্বিকরা বলছেন, 'কেন বেহুদাই ট্রানজিট ট্রানজিট করছেন? ভারত তো ট্রানজিটের ব্যানারে করিডরই চাচ্ছে?' বাস্তবতা হচ্ছে, ট্রানজিট হচ্ছে বহুমুখী জটিল ইস্যু। এবং ভারত যা চাইছে তা মোটেও ট্রানজিট নয়, ঢাহা করিডর। দেশ বিভাগের প্রাক্কালেই মোহাম্মদ আলী জিন্না প্রস্তাবিত পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সড়ক পথে সরাসরি সংযোগের জন্য করিডর চেয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস নেতারা এটা অনুমোদন করেননি। সম্প্রতি রাশিয়া তার ভূখণ্ড কালিনানগ্রাদে যেতে লিথুয়ানিয়ার কাছে করিডর চায়।

কিন্তু পায়নি। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ নেপালকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেয়। কিন্তু নেপাল করিডর চাইলেও ভারত নিরাপত্তার অজুহাত তুলে তা দিতে রাজি হয়নি। একটি বা একাধিক দেশের উপর দিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি দেশে পণ্য আনা-নেয়ার অনুমোদিত রুটই হলো ট্রানজিট (ভারত তো অন্য কোনো দেশে যাচ্ছে না। এ কারণে এটা করিডর)।

যেমন জার্মানি ও অস্ট্রিয়া সুইজারল্যান্ডের ভেতর দিয়ে ইতালিতে পণ্য পাঠাচ্ছে ট্রানজিট চুক্তির আওতায়। যাহোক, প্রশ্ন হচ্ছে ট্রানজিট কি শুধু অর্থূনৈতিক চুক্তি? মোটেও না। কারণ রাজনৈতিক সম্পর্কের উপরই অর্থনৈতিক চুক্তি বহুলাংশে নির্ভর করে। ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো অর্থনৈতিক সম্পর্ক না থাকার মূল কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক সম্পর্কের অনুপস্থিতি। আর অবিশ্বাস ও সন্দেহ থাকলে রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে না।

হয়তো চাপিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু টেকসই হয় না। সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ, ছিটমহল বিনিময় বিরোধ, সীমান্ত বিরোধ, বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি, আন্তঃসীমান্ত নদীর পানিবন্টন ও ব্যবস্থাপনা ইস্যুর সমাধান ছাড়া ভারতের সঙ্গে টেকসই অর্থনৈতিক সম্পর্ক কিভাবে গড়ে উঠতে পারে, তা কেউ জানে না। আমার বিশ্বাস ভারত গুজরাল ডকট্রিনকে শ্রদ্ধা জানালে এসব সমস্যার সমাধান কঠিন কিছু নয়। স্রেফ বিগ ব্রাদারসুলভ আচরণ দেখাতে ৩৩০০ কিলোমিটার জুড়ে মানবাধিকার বিরোধী কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণ, টিপাইমুখ বাঁধ তৈরি, পরিবেশ বিনাশী আন্তঃনদী সংযোগের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের এজেন্ডায় জিইয়ে রাখা দেশটিকে শর্তহীন ভাবে ট্রানজিট দিলে দেশ নতুন সঙ্কটে পা দেবে কিনা, তা আগে ভাবা উচিত নয় কি? তা ছাড়া ট্রানজিটের সম্ভাব্য লাভ-ক্ষতি নিয়ে সরকার এখনো কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জরিপ বা গবেষণাও চালায়নি।

সরকার এটা করতে চায় বলেও মনে হচ্ছে না। কারণ জরিপ অথবা গবেষণা চালাতে গেলে চুক্তির শর্তগুলো আগে প্রকাশ করতে হবে। ২০০৭ সালে নয়া দিল্লিতে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে ড. মনমোহন সিং 'ফুল রিজিওনাল কানেক্টিভিটি' তত্ত্ব আওড়িয়ে ছিলেন। এজন্য সাধুবাদও পেয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা আমাদেরকে কি বলছে?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.