জন্ম ১৯৫৯ সালের ৩ অক্টোবর চট্টগ্রামের পশ্চিম বাকলিয়ায়। আদিবাস চট্টগ্রাম বাংলাদেশ চন্দনাইশ উপজেলার মোহাম্মদপুরের কাজীবাড়ি। লিখেছেন সকল শ্রেণীর পাঠকদের জন্যই, তবে নিজেকে শিশুসাহিত্যিক হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে দুই সন্তানের জনক
এখন হেমন্ত কাল। শীত আসি-আসি করছে।
উত্তর দিক থেকে বুনো হাঁসের দল ঝাঁক-ঝাঁক উড়ে যাচ্ছে দেিণ। ওদের নাম সুলঞ্চ। এসব বুনো হাঁস দেখতে খুবই সুন্দর। এদের মাথা ও ঘাড়ের রঙ পিঙ্গল। অন্যান্য হাঁসের তুলনায় শরীর লম্বাটে।
সরু গলা। লেজের মাঝখান থেকে একটি চিকন পালক বেরিয়ে গেছে আলপিনের মতো। পিঙ্গল রঙের মাথার দুপাশ দিয়ে দুটি শাদা পটি সরু থেকে মোটা হয়ে বুক বেয়ে পেটে নেমে গেছে। ডানার পাশের পালকগুলো তামাটে সবুজ। ঠোঁট আর পা সীসে রঙের।
এক কথায় অপূর্ব রূপসী পাখি সে। সূর্যের আলোতে তাদের পালকগুলো ঝিলমিল করে ওঠে।
ওরা এখন দূর দেশে পাড়ি দেবে। তার জন্য শুরু করল কঠিন প্রস্তুতি। শরীরে চর্বি জমাতে হবে।
এ জন্য রঙও পাল্টিয়ে নেয় তারা। যেন আসল রঙ ঢেকে নিয়েছে বোরখায়। পুরনো ও জীর্ণ পালকগুলো উত্তর মহাসাগরে ফেলে দিয়ে তারা নতুন বেশ ধারণ করল। তাদের মেদবহুল শরীরে বলিষ্ঠভাব প্রকট হয়ে উঠল। এই সব প্রস্তুতি তাদের হাজার-হাজার মাইল পাড়ি দেওয়ার েেত্র কাজে আসবে।
নীল ও ঝকঝকে আকাশের পথে পাড়ি দেয়ার সময় আগে-আগে চলে একটি সাহসী ও বীর হাঁস। তার পেছনে অন্যান্য হাঁস। পথে কোনো বিপদ এলেই বীর হাঁসটি সঙ্গে-সঙ্গে তার মোকাবেলা করে। অনেকটা পথ উড়ে যাবার পর তারা একটি নদীর চর বা নলখাগড়ার বন দেখে সেখানে নেমে পড়ে। কিছু সময়ের জন্য জিরিয়ে নেয়।
ফাঁকে-ফাঁকে ছোটখাটো মাছ ধরে তাদের ুধা নিবারণ করে। যখন তারা নদীর চর বা জলাশয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে থাকে, তখন পুরো এলাকাটিকে অপূর্ব মায়াময় মনে হয়। এ যেন এক ফুলের বাগান। অবশ্য এই দৃশ্য বেশি সময় ধরে থাকে না। অল্প কিছুণের মধ্যেই ফুলের মতো সুলঞ্চরা ঝাঁকে-ঝাঁকে হারিয়ে যায় মেঘের দেশে।
একদিন এক ঘটনা ঘটল। উড়তে-উড়তে সন্ধ্যা হয়ে এলে রাত কাটাবার জন্য তারা একটি জলাভূমির পাশে এসে নেমে পড়ে। সারা জলাভূমিকে দখল করে রেখেছে নলখাগড়ার ঝোপ। বিশ্রাম নেয়ার জন্য এমন জলাভূমিই তাদের প্রিয়। জলাভূমির কাছেই একটি গ্রাম।
ছাড়া-ছাড়া বাড়িও আছে এখানে কয়েকটি। সবই কাঁচা বাড়ি। এমন একটি বাড়ির উঠোনে কিছু পোষা হাঁস প্যাঁকপ্যাঁক করে ডাকছিল। চমকে উঠল সুলঞ্চরা। এসব ডাক তাদের জাতভাইয়ের না? কোথায় ডাকে এরা? কয়েকটি সুলঞ্চ উড়ে গিয়ে নামল সেই বাড়ির উঠোনে।
উঠোনটি ছিল বেশ বড়। সেখানে ছিল কয়েকটি বড়-বড় গাছ এবং গৃহপালিত কিছু পশু। উঠোনের একপাশে খড়ের একটি গাদা। সেই খড়ের গাদার পেছনে গর্ত খুঁড়ে বাস করে একটি ধেড়ে ইঁদুর।
বুনো হাঁসেরা উঠোনে নামতেই চমকে উঠল পোষা হাঁসেরা।
তারা প্যাঁকপ্যাঁক করে চিৎকার করে উঠল। যখন তারা দেখল বিপদের কোনো সম্ভাবনা নেই, তখন আবার শান্ত হয়ে গেল।
এক সাহসী মোটাসোটা পোষা হাঁস মাথা দোলাতে-দোলাতে আবছা আলোয় কিছুণ ওই বুনো হাঁসদের চেহারা দেখতে লাগল। বুকে বেশ সাহস নিয়ে বলল, “বাহ্, তোমরা তো দেখতে একেবারে আমাদেরই মতো। তোমাদের বাড়ি কোথায়? মনে হয় তোমরা অনেক বেশি পরিশ্রম করো।
তোমরা এত রাতে কোথা থেকে এসেছ? যাবেইবা কোথায়?”
বুনো হাঁসেরা উত্তরে বলল, “আমাদের এখনও দু-এক হাজার মাইল পাড়ি দিতে হবে। আমরা অনেক দূরের সেই উত্তর মহাসাগর থেকে এসেছি। ”
“উত্তর মহাসাগর আবার কোথায়? সেটি কি আমাদের এই জলাভূমির মতোই বড়?”
“ইস্, কী যে বলো না তুমি! তোমার কথা শুনলে যে কারও হাসি পাবে। উত্তর মহাসাগর তোমাদের জলাভূমি থেকে ল-ল গুণ বড়। এপার-ওপার দেখা যায় না।
”
কথাটা শুনে হাসি পেল যেন পোষা হাঁসের। পোষা হাঁসেরা তো সাগর দেখেনি! সাগরের আয়তন সম্পর্কে যে তার কোনো ধারণা নেই। বুনো হাঁসের কথা বিশ্বাস না হলেও সে খুব স্বাভাবিক থাকে। সন্দেহভরা কণ্ঠে বলে, “তোমরা কি ওখানে খাবার হিসেবে নদীর শামুক, চিংড়ি এসব পাও?”
“ওখানে আছে অনেক ভালো-ভালো খাবার। আছে প্রচুর পরিমাণে মাছ।
গ্রীষ্মকালেই এসব খাবার বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু যখন ঠা-া পড়ে তখন এসব মাছের আকাল দেখা দেয়। পানি বরফে পরিণত হয়। খাবারের অভাব হয় আমাদের। তাই আমরা শীতকালটা কাটাবার জন্য দেিণ ছুটে যাই।
এভাবে আমরা প্রতি বছরই যাওয়া-আসা করি। ”
“কী বলছ এসব!” পোষা হাঁস বিশ্বাসই করতে চায় না যেন, “ইস্ কী কষ্ট তোমাদের! তোমাদের বউ-ছেলেমেয়েরাও কি এমন কষ্ট করে?”
তারপর মোটাসোটা সেই পোষা হাঁস মাথা দোলাতে লাগল। চুকচুক করতে লাগল। সঙ্গে-সঙ্গে অন্য পোষা হাঁসেরাও আপসোস করতে লাগল। যেন তারা তাদের এসব জাত ভাইদের জন্য খুবই কষ্ট পাচ্ছে।
তাড়াতাড়ি বুনো হাঁসেরা পোষা হাঁসদের দিকে তাকিয়ে আশ্বস্ত করল, “না-না, আমরা খুবই সুখে আছি। সবসময় পরিশ্রম করি আমরা। বলতে গেলে স্বাধীন ও আনন্দময় জীবন আমাদের। গ্রীষ্মকালে আমাদের দেশে আমরা ডিম পাড়ি। তা দিয়ে বাচ্চা ফুটাই।
বাচ্চারাও খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে। কারণ ওখানে খাবার অনেক। শীতকাল এলে আমরা তাদের নিয়ে দেিণর কোনো দেশে চলে যাই। ”
এ কথা বলতে-বলতে আনমনা হয়ে যায় বীর সুলঞ্চ। তার চোখে ভেসে ওঠে সবুজ একটি দেশের ছবি।
পাহাড়, সাগর, নদী, জলাশয় সবই আছে এখানে।
হঠাৎ ঘোর কাটে যেন তার। “যে কোনো নদী বা জলাশয়ের তীরে আমরা দিন কাটিয়ে দিতে পারি। যেখানে থাকি সেখানেই খাবার খুঁজে নিই। দেিণর দেশে তিন-চার মাস কাটিয়ে যখন আমরা আবার আমাদের দেশে ফিরে যাই, তখন বাচ্চারা বেশ স্বাস্থ্যবান ও জোয়ান হয়ে ওঠে।
আমাদের এক জীবনে যে কত পাহাড়-পর্বত, নদী-ঝরনা পার হতে হয়। খেতে হয় তে আর নদনদীর খাবার। এর কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। ”
সুলঞ্চ বলে চলল, “আমরা আমাদের অভিযানকে আনন্দময় করে তুলি নানাভাবে। জন্ম থেকেই আমরা সংকল্পবদ্ধ।
কোনো বাধাকেই আমরা ভয় পাই না। মৃত্যুভয় আমাদের নেই। এ কারণে জলের গভীর থেকে মেঘের দেশ পর্যন্ত আমাদের আয়ত্তে এসেছে। আমরা জলের গভীর থেকে মাছ শিকার করে খাই আর আনন্দ করার জন্য উড়ে যাই মেঘের দেশে। এর জন্য আমাদের অনেক বিপদের মুখোমুখি হতে হয়।
কখনও-কখনও শকুন বা ঈগল এসে আমাদের মধ্য থেকে কাউকে-কাউকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। কেউ-কেউ পরিশ্রান্ত হয়ে নিচে পড়ে যায়। কখনও-কখনও আমরা শকুন বা ঈগলের সঙ্গে লড়াই করি দল বেঁধে। দলবদ্ধ থাকি বলে বেশির ভাগ সময় আমরা জিতে যাই। উদ্ধার করে নিয়ে আসতে পারি বিপদে পড়া সঙ্গীদের।
আবার নিচে পড়ে যাওয়া সঙ্গীদেরও আমরা সাহায্য করতে দলবদ্ধভাবে এগিয়ে যাই। তবুও প্রতি বছর আমরা দল বেঁধে উড়ে চলি। এতে আছে অনেক সুখ আর আনন্দ। কত স্বাধীন আমরা। আমরা যদি একই জলাভূমিতে সবসময় বাস করি তাহলে অনেকেই মনের দুঃখে অসুস্থ হয়ে পড়বে।
”
এত সব কথা শুনে পোষা হাঁসেরা আরও উৎসাহের সঙ্গে মাথা নাড়তে লাগল। একটি পোষা মেয়ে-হাঁস অন্য একটি বুনো মেয়ে-হাঁসকে ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করল, “তোমরা নিজেরাই ডিমে তা দাও, সত্যি?”
“আমরা না দিলে ঈগল এসে তা দেবে? তোমার এ কথায় আমার খুব আশ্চর্য লাগছে। ” বুনো মেয়ে-হাঁস একটু অসন্তোষের সুরে উত্তর দিল।
“কিন্তু ব্যাপারটি তো খুবই ঝামেলার। ” অন্য পোষা মেয়ে-হাঁস সহানুভূতির সুরে বলল, “আমাদের মা-বাবা, দাদা-দাদিদের কাছে শুনেছি, আমাদের পূর্বপুরুষেরা কয়েক হাজার বছর আগে নিজেরাই এ কাজটা করতেন।
কিন্তু দিনবদলের সঙ্গে-সঙ্গে তা দেয়ার মতো এসব ঝামেলার কাজ আমরা ছেড়ে দিয়েছি। আমরা নদীর তীরে বা জলাশয়ে খেলা করতে-করতে যেখানে খুশি সেখানে ডিম পাড়ি। কে তা দিচ্ছে না দিচ্ছে এসব আমাদের দেখার বিষয় নয়। এভাবে প্রতি বছর কত ডিম পাড়ি তার হিসাব আমরা রাখি না। আমরা জানি মানুষেরা আমাদের হয়ে তার যতœ নেবে।
মুরগিরাও আমাদের ডিমে তা দেয়। বাচ্চা ফোটার পর অবশ্য বাচ্চাদের দেখাশোনা আমরা করি। অল্প সময়ের মধ্যেই বাচ্চারা ‘মা...মা’ করে ডেকে-ডেকে আমাদের কাছে চলে আসে, আমাদের ঘিরে ধরে। আমাদের পে মা হওয়াটা এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু তোমরা এখনও অনেক কষ্ট করছ।
”
একটি পোষা বাচ্চা-হাঁস দেখতে কমবয়সি একটি বুনো হাঁসকে জিজ্ঞাসা করল, “জন্মাবার পরই কি তোমাদের এত দূর পথ পাড়ি দিতে হয়? এ কাজ তো খুব কঠিন। ”
তরুণ বুনো হাঁসটি অবাক হয়ে পোষা বাচ্চা-হাঁসকে দেখতে লাগল। “কঠিন হবে কেন? আমরা তো এসব অনেক দিন ধরে অভ্যাস করি। জন্ম থেকে আমাদের ডানা এমন যে শুধু ডানাটা নাড়ালেই স্বাভাবিকভাবেই আমরা আকাশে উড়তে পারি। পৃথিবীর প্রতিটি পাখির ডানা আছে তো ওড়ার জন্যই।
”
পোষা বাচ্চা-হাঁস বলল, কিন্তু আমাদের ডানা আমরা অত সহজে নাড়াই না। এত কষ্ট করার দরকার কী! কেবল আনন্দের সময় হলেই আমরা আমাদের ডানা নাড়াই। এই যেমন ধরো, কর্তা যখন খাবার নিয়ে আমাদের কাছে আসে, তখন আমরা ডানা নেড়ে ঝাঁপাঝাঁপি করে ছুটে আসি। মাঝে-মধ্যে জলকেলি করার সময়ও আমরা ডানা নাড়ি। আমরা অবশ্য জানি যে ডানা হলো ওড়ার জন্য।
তাই আমরা কখনও-কখনও পাড় থেকে জলে নামার সময় উড়েই যাই। উড়তে-উড়তে পানিতে পড়ি। কিন্তু তোমাদের মতো অনেক উঁচুতে, মেঘের দেশে ওড়ার মতো শক্তি ও সাহস কোনোটাই আমাদের নেই। ”
এসব কথা শুনে বুনো হাঁসের আফসোসের সীমা থাকে না। প্রায় করুণার সুরে বলল, “হায়! এমন জীবন কোনো জীবনই নয়।
এ কেমন জীবন তোমাদের!”
সাহসী পোষা হাঁস প্রতিবাদের সুরে বলল, আমাদের জীবন খুব সুখের। আমরা কেবল খাইদাই আর আনন্দ করি। সময় হলেই ঘুমাই। দেখো না, আমাদের স্বাস্থ্য কেমন গাট্টাগোট্টা! তেলতেলে! তোমরা বুনো হাঁসেরা এখনও সভ্য হওনি। আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন সম্পর্কে তোমাদের কোনো ধারণাই নেই।
সারা বছর দূর-দূরান্তে ঘুরে বেড়িয়ে নিজেদের কান্ত করে ফেলো। খোরাকির জন্য সমস্ত সময় ব্যয় করো। তাকিয়ে দ্যাখো, মানুষেরা আমাদের জন্য কী চমৎকার করে স্থায়ী ঘর বানিয়ে দিয়েছে। একটু সামনে গেলেই জলাশয়। থাকা-খাওয়ার কোনো চিন্তাই নেই আমাদের।
আমরা জানি যারা আমাদের পোষেন তারা সময় মতো রান্না করা ভাত আর ধানের তুষ নিয়ে আসবেন। আমরা এও জানি, কোথায় গেলে শস্যের দানা, নদীর শামুক, ছোট-ছোট মাছ পাব। ”
সব কথা যেন মনোযোগ সহকারে শুনতে লাগল বুনো হাঁসের দল। পোষা হাঁসেরা বলে চলল, “আমরা জানি আকাশে উড়তে গেলে ঈগলেরা আমাদের আক্রমণ করতে পারে। কাজেই আমরা আকাশে উড়তে যাব কোন্ দুঃখে? আমাদের জন্য যেটা ভালো আমরা সেটাই করব।
আমরা জোর করে বলতে পারি এই জলাভূমির মতো বড় ও সুন্দর জলাভূমি পৃথিবীর বুকে আর নেই। আমাদের বাবা, দাদা, দাদার বাবা সবাই এখানে বড় হয়েছেন। বংশ-পরম্পরা আমরা এই জলাভূমিকেই সবচেয়ে ভালো জায়গা বলে মনে করে আসছি। তোমরা যে বড়-বড় নদীর কথা বলছ, পাহাড়-পর্বতের কথা বলছ তা কোথাও আছে বলে আমরা বিশ্বাসই করি না। আমাদের স্বাস্থ্য দেখলে বুঝা যায় আসলে কারা সুখী।
”
পোষা হাঁসগুলো বেশ নাদুস-নুদুস। তাদের শরীর থেকে মেদ যেন ফেটে পড়ে। অনেক হাঁটতে হয় বলে তাদের পা-গুলোও মোটামুটি বড়। অনবরত নাড়াবার জন্য হতে পারে তাদের পেছনের অংশও বেশি বড়। অন্যদিকে বুনো হাঁসেরা অনবরত উড়ে বেড়ায় বলে তাদের ডানাগুলো খুবই মজবুত।
তাছাড়া প্রায়ই নিজেদের শরীর দিয়ে ঝড়-বৃষ্টি আর তুষারের সঙ্গে লড়াই করতে হয় বলে তাদের পেটের মাংসপেশিও খুব শক্ত। এভাবে শুধু নিজেরা তুলনা করলে তো হবে না, মীমাংসার প্রয়োজন।
শেষে বুনো হাঁস আর পোষা হাঁস মিলে ঠিক করল তারা সালিশের কাছে যাবে। তখন পোষা হাঁসেরা বলল, “এখন অনেক রাত হয়ে গেছে, সালিশ খুঁজতে বাইরে যাওয়া সহজ হবে না। আমাদের এই উঠোনেই থাকে কুকুর।
তার খুব বুদ্ধি। পেট পুরে খায় আর শুয়ে-শুয়ে ধ্যান করে। তাকে ধ্যান করতে হয় বলে বাড়িও পাহারা দেয় না। সারারাত ধ্যান করে। ভোর হলে ধ্যান ছাড়ে।
খাবার খায়। সে খুব মোটা বলেই ভালোভাবেই জানে সুখ কী? যে কারও চেয়ে সে ভালো সালিশ করতে পারবে। ”
পৃথিবীতে কুকুর নামে যে এক চিন্তাশীল জীব আছে এ কথা শুনে বুনো হাঁসেরা অবাক হয়ে গেল। কয়েক জনের চোখ কপালে উঠল নাকি মাথায় উঠল বোঝা গেল না। তাই তারা কুকুরের সঙ্গে দেখা করতে যেতে রাজি হলো।
কর্তার বাড়ির বারান্দায় ধ্যানে থাকা কুকুরের ঘরে আসল সবাই। পোষা হাঁসেরা জাগিয়ে তুলল তাকে। তারপর তাদের আসার উদ্দেশ্য বলল।
কুকুর চোখ ডলতে-ডলতে হেঁড়ে গলায় বলল, “এখন আমার ঘুমোবার সময়। এত কষ্ট করে তোমরা যখন আমার কাছে এসেছ, তাহলে বলি, সুখ মানে সময়মতো বেশি-বেশি খাওয়া আর বিশ্রাম।
সেদিক থেকে তুলনা করলে তোমাদের দুই ুদলের মধ্যে আমার পুরনো প্রতিবেশী পোষা হাঁসেরাই সবচেয়ে সুখী। তাদের কখনও ভারী তুষারপাত, প্রচ- বাতাস, কান্তি আর শকুন-ঈগলের মুখোমুখি হতে হয় না। আমার মনে হয় এই যুক্তিটা বোঝা খুবই সহজ। ” বলে মোটা কুকুর আবার ঝিমুতে লাগল।
পোষা হাঁসেরা খুব খুশি মোটা কুকুরের কথা শুনে।
এত সুন্দর যুক্তি একমাত্র জ্ঞানী লোকেরাই দিতে পারে। সাহসী পোষা হাঁস হঠাৎ দেখল, ডান দিকে অন্ধকার ভেদ করে একটি নীল আলোকরশ্মি তার দিকে এগিয়ে আসছে। এ ছিল আসলে বেড়ালের চোখ। ‘ম্যাঁও-ম্যাঁও’ করে দুবার ডেকে বেড়ালটা সামনে এসে বলল, “তোমরা যে কী সব কাজ করো না! শেষ পর্যন্ত আমাকে নাক গলাতে আসতে হলো তোমাদের কাজে। আমি আবার কথা বলি কম।
আচ্ছা বলো তো, তোমরা কোন্ রুচিতে ওই হাবাগোবা কুকুরটাকে সালিশ মেনেছ। যে কুকুর বাড়ির সীমানার বাইরে যায় না, চোর আসলে টের পায় না, আলসেমির কারণে ঘেউ-ঘেউ করে না তাকে কি সালিশ মানা যায়? তার তো বাইরের জগৎ সম্পর্কে কোনো ধারণা-ই নেই। ”
খুব বিরক্ত হলো যেন পোষা হাঁসেরা, “তোমার আর কিছু বলার আছে?”
“আমি আবার কথা বলি কম। তবু বলতে হচ্ছে, বাড়ির ছাদ থেকে শুরু করে আশপাশের সমস্ত জঙ্গল আমার চেনা। তোমাদের সেই গাপুসগুপুস কুকুরের চাইতে আমি অনেক বেশি জানি।
জ্ঞান-গরিমা আমারই বেশি। এক সময় আমি ছিলাম পোষা বেড়াল। একদিন মনিবের মার খেয়ে মনের দুঃখে জঙ্গলে চলে গেলাম। বলতে পারো এখন আমি বুনো বেড়াল। ”
“তোমার কিচ্ছা-কাহিনী শুনতে চাই না।
আসল কথা বলো। ”
“আমি আবার কথা বলি কম। আমার মতে, পোষা বেড়ালের খাবারের কোনো চিন্তা নেই। মনিব এটা-সেটা সব সময় দেয়। কিন্তু যেভাবে লাঠিপেটা করে তাতে পোষা হয়ে থাকার চেয়ে বুনো হয়ে থাকা অনেক ভালো।
আর তোমরা তো দেখেছই, মানুষ যখন আমাদের ঘাড় ধরে উপরে তোলে তখন ব্যাপারটা কেমন অপমানজনক হয়। জঙ্গলে খাবার-দাবার খুব কম। আমাদের প্রধান খাবার মাছ আর ইঁদুর খুব একটি পাওয়া যায় না। এর জন্য আমাদের কষ্ট করে, নানা জায়গায় ঘোরাফেরা করে খাবার খেতে হয়। এই যেমন ধরো, আমি আজ এখানে এসেছি মাছ আর ইঁদুরের খোঁজে।
কাল সকালে আবার চলে যাব জঙ্গলে। কিন্তু একটি কথা সত্যি, আমি জঙ্গলে অনেক ভালো আছি। জঙ্গলে সুখ আর স্বাধীনতা দুই-ই আছে। ”
“এসব বলে তুমি কী বোঝাতে চাচ্ছ?”
“আমি আবার কথা বলি কম। এই যেমন ধরো এখন আমার কষ্ট হচ্ছে।
কিন্তু শেয়ালের মতো যেদিন আমি তৎপর হতে শিখব, সেদিন আর কোনো কষ্ট থাকবে না। আমার জীবনযাত্রা আরও সহজ হয়ে যাবে। আমি খুব ভালোভাবেই জানি পোষা হাঁসের পূর্বপুরুষরা কীভাবে মারা পড়েছে। মানুষ কীভাবে জবাই করে-করে তাদের খেয়েছে আমি তা জানি। আমি সব সময় তাদের উপর নজর রাখতাম।
তাদের এই কষ্ট দেখে আমি কেঁদেছি। আমার মনে হয়, বুনো হাঁসেরা পোষা হাঁসদের চেয়ে অনেক সুখী। ”
কথা বলতে ইঁদুরদের কিচিমিচি শুনতে পেল বুনো বেড়াল। আর সঙ্গে-সঙ্গে তাদের ধরার জন্য দৌড় দিল।
পোষা হাঁসেরা উত্তেজিত হয়ে উঠল।
বুনো বেড়ালের কথা যেন তাদের কাছে ফেলনা মনে হলো না। ছুটে গেল তারা কুকুরের কাছে। এরই মধ্যে কুকুর গেছে ঘুমিয়ে। আবার কোনো-কোনো হাঁস মনে করল কুকুর ধ্যানে আছে। পোষা হাঁসেরা ব্যর্থ হলো কুকুরের সঙ্গে সাাতে।
কী আর করে। নিজেরা-নিজেরা প্যাঁকপ্যাঁক করে চিৎকার করতে লাগল। চিৎকার শুনে ধেড়ে ইঁদুর বেরিয়ে এলো তার বাসা থেকে।
কথা হলো পোষা হাঁস আর ধেড়ে ইঁদুরের মধ্যে। সব কথা শুনে ইঁদুর বলল যে সে নিজেই এই সালিশ করবে।
একটু চিন্তায় পড়ে গেল ইঁদুর।
ধেঁড়ে ইঁদুরকে মাঝখানে রেখে পোষা হাঁস আর সুলঞ্চরা গোল হয়ে দাঁড়াল। ধেড়ে ইঁদুর সামনের পা দিয়ে ধীরে-ধীরে তার দাড়ি ঠিক করছে। তারপর গম্ভীর হয়ে বলতে লাগল, “আমরা ইঁদুরেরা সবসময় নিজের চার হাত-পা দিয়ে মাটি খুঁড়ি। এতে আমরা বেশ আনন্দ পাই।
যারা কাজ করে তারা জানে কাজের আনন্দ কেমন। বুনো হাঁসেরা বছরের পর বছর দেশ থেকে দেশান্তরে উড়ে বেড়ায়। নিজেরাই নিজেদের খাবার সংগ্রহ করে। নিজের কাজ নিজে করার কী যে আনন্দ তা বুনো হাঁসেরা জানে। কিন্তু একটি কথা মনে রাখা ভালো, সবারই উচিত যে কোনো বিপদকে এড়িয়ে চলা।
এই যেমন ধরো, আমার কানে কোনো শব্দ এলেই হুট করে ঢুকে পড়ি গর্তে। এভাবে নিজেকে রা করি আমি। অবশ্য সবার জীবনে সুখ আর দুঃখ পাশাপাশি থাকে। যারা অভিযান প্রিয় তাদের অতিক্রম করতে হয় বিপদের পর বিপদ। এদিক দিয়ে বিচার করলে পোষা হাঁসদের জীবনে বিপদ কমই আসে।
তাই আমার মতে পোষা হাঁসেরাই বেশি সুখী। ”
ধেড়ে ইঁদুরের কথা শুনে রেগে গেল বুনো হাঁসের দল। গম্ভীর হয়ে গেল নেতা সুলঞ্চ। আর পোষা হাঁসদের খুশি দেখে কে?
“ধেড়ে ইঁদুরের কথা তোমরা শুনো না। ”
“কে? কে বলে কথা?’ সবাই এদিক-ওদিক তাকাতে লাগল।
একটি পোষা হাঁসের ছানা ঠিকই দেখে ফেলেছে। একটি ছোট্ট পাখি গাছের ডালে বসে-বসে এদিকে তাকিয়ে আছে। হাঁসের ছানা তার বাবাকে ইশারা করল গাছের দিকে তাকাতে। বাবা-হাঁস ছোট্ট পাখিকে ল করে বলল, “তুমিই কি কথা বলেছ?”
“আমি নয় তো কি ভূত এসে বলেছে?”
“কেন, ইঁদুরের বিচার তোমার পছন্দ হয়নি?”
“ওই ধেড়ে ইঁদুর সুখের মানে বোঝে? ও তো একটি কাপুরুষ। ”
“তার মানে তুমি কী বলতে চাচ্ছ?” পোষা বাবা-হাঁস বলল।
“আমার বিচারে বুনো হাঁসেরাই সুখী। বুনোদের পাশাপাশি পোষা হাঁসদের দেখলে আমার মায়া হয়। ”
ছোট্ট পাখির কথা শুনে পোষা হাঁসেরা চেঁচামেচি শুরু করে দিল। উঠোনের বুড়ো বটগাছ তখন কথা বলে উঠল, “তোমরা কী নিয়ে এত ঝগড়া করছ?”
পোষা হাঁস আর বুনো হাঁসের দল বুড়ো বটগাছটাকে সব কথা খুলে বলল। সব কথা শুনে বটগাছ একটু চিন্তা করতে লাগল।
এক ঝলক হাওয়া এসে বুড়ো বটগাছের ডালপালা নাড়িয়ে দিল। তারপর পাতা কাঁপিয়ে-কাঁপিয়ে, ডালপালা দুলিয়ে-দুলিয়ে বটগাছ বলল, “যারা আরাম করার বদলে পরিশ্রম করে, বিপদের মোকাবেলা করে সাহসের সঙ্গে তাদের জীবন সবচেয়ে সুখের। আমি আরামপ্রিয় প্রভাতি ফুল আর শীতের ভয়ে কাবু হয়ে যাওয়া ঘাস দেখেছি। খুব সহজেই তাদের মৃত্যু হয়। আর আমি? বছরের পর বছর ধরে এখানে দাঁড়িয়ে আছি।
কত ঝড়-বাতাস আমার উপর দিয়ে যায়। এত সব বিপদ আমার কিছুই করতে পারে না। কারণ আমার শেকড় মাটির নিচে অনেক গভীরে পোতা আছে। এ কারণে আমার শরীর অনেক শক্ত। ঝড়-বাতাস, খরা-কুয়াশা থেকে শুরু করে সমস্ত দুর্যোগ কাটাতে পারছি আমি।
জীবনের প্রতি সঠিক মনোভাব বুনো হাঁসদের আছে। এই মনোভাব তাদের সুখী করেছে। ”
বুনো হাঁসের দল মাথা নেড়ে সায় দিল।
বুড়ো বটগাছের বুকে গজিয়ে ওঠা এক পরগাছা কথা বলে উঠল, “আমার মনে হয় পোষা হাঁসেরাই বেশি সুখী। সুখী জীবনের জন্য কারও সাহসী ও পরিশ্রমী হওয়ার প্রয়োজন নেই।
আমি তো সাহসী নই। পরিশ্রম করাও আমার পছন্দ নয়। কিন্তু আমি বুদ্ধিমান, আমি অন্য কোথাও জন্মাই না, খালি এই গাছের গায়েই জন্মাই। গাছ মাটির গভীরে কয়েক হাত তার শিকড় নিয়ে যায়। আমি তার গায়ে শুধু এক কড়ে আঙুল সমান শিকড় গেড়ে থাকি।
বুড়ো বটগাছ যতদিন বাঁচবে আমিও ততদিন বাঁচব। সূর্য আমাকে তাপে দগ্ধ করতে পারে না। প্রচ- বাতাস আমাকে ফেলে দিতে পারে না। একটু বুদ্ধি থাকলেই আরামের জীবন কাটানো যায়। পোষা হাঁসদেরও খুব বুদ্ধি আছে।
তাদের জীবন কত আরামের! মৃত্যুর কথা যদি বলো, তবে বলতে হবে পোষা হাঁসেরা যেমন চিরকাল বাঁচবে না, সে রকম বুনো হাঁসেরাও অমর নয়। বুড়ো বটগাছের যখন মৃত্যু হবে তখন আমারও হবে মৃত্যু। কিন্তু তা এখনও অনেক দেরি। ” কথাগুলো শেষ করে পরগাছা কেমন বাজেভাবে হেসে উঠল।
তার হাসি দেখে বুড়ো বটগাছ রেগে গেল।
হাসি থামাল পরগাছা।
সালিশ করতে-করতে ভোর হয়ে এলো। জেগে উঠতে শুরু করল মানুষজন। হাঁসদের বিতর্কের কোনো মীমাংসা হলো না।
যেসব বুনো হাঁস নলখাগড়ার জলাভূমিতে বিশ্রাম নিচ্ছিল তারা দল বেঁধে উড়তে শুরু করল।
উঠোনে এসে পড়া হাঁস কয়েকটিও তাদের সঙ্গে উড়ে গেল।
পোষা হাঁসেরা তাদের বাধা দেয়ার জন্য ভাঙা গলায় চিৎকার করে বলতে লাগল, “যেও না, আমরা কত সুখী আর নিশ্চিন্ত সে বিষয়ে তোমাদের আরও কিছু বলব। ”
কিন্তু বুনো হাঁসেরা তাদের কথায় কান না দিয়ে আকাশে উড়ে চলল। উড়তে-উড়তে অনেক উপরে ওঠে বুনো সুলঞ্চরা নিচের দিকে তাকাল। তারা দেখল, কয়েক জন দু-পেয়ে মানুষ কয়েকটি পোষা হাঁস ধরে ছুরি দিয়ে কেটে ফেলেছে।
রক্তে ভেসে যায় যেন সারা উঠোন। উঠোনের এক পাশে চুলোয় ফুটছে গরম পানি। যেসব হাঁসের গলা কাটা হয়েছে সেসব হাঁসকে আবার গরম পানিতে ফেলেছে দু-পেয়ে মানুষেরা। একজন মহিলা দা-ছুরি নিয়ে বসে পড়ল। গরম পানি থেকে একটি-একটি হাঁস তুলে চামড়া ছিলতে লাগল।
এই দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ল বুনো সুলঞ্চরা। চেঁচামেচি করতে-করতে যে যেদিকে পারল পালিয়ে গেল। এমন ভয়ানক দৃশ্য তারা আগে কখনও দেখেনি।
একটি বুনো বাচ্চা-হাঁস চিৎকার করে বলে উঠল, “ওখানে ওদের কী হচ্ছে?”
“মানুষেরা ওদের মেরে ফেলছে। ”
“খুব খারাপ।
” দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাচ্চা হাঁসটি বলল, “আমরা চলে আসার সময় ওরা কী কথা বলতে চেয়েছিল তা আমরা আর কোনো দিন শুনতে পাব না। ” মন খারাপ হয়ে গেল বুনো হাঁসের ছানার।
“আমাদের শোনার প্রয়োজন নেই। ” বুনো মা-হাঁস বলল।
নেতা সুলঞ্চ বলল, “বিভিন্ন ধরনের জীবনযাত্রায় বিভিন্ন ধরনের বিচার বোধ থাকে।
আমরা যারা বুনো জীবন কাটাই তারা কখনও ওই কুকুর, ধেড়ে ইঁদুর, পরগাছা বা আমাদের ওই পিছিয়ে পড়া আত্মীয়দের মতো কথা বলব না। তাদের কথামতো আমাদের চলতেও হবে না, আমরা আমাদের মতোই চলব। ”
“যেসব পোষা বাচ্চা-হাঁসকে এখনও মেরে ফেলা হয়নি, আমরা তাদের নিয়ে আসতে পারতাম। ” খুব দুঃখের সঙ্গে বুনো বাচ্চা-হাঁসটি বলল।
বুনো মা-হাঁস বলল, “নিয়ে আসতে চাইলেই কি আনা যায়? ওড়ার মতা যে ওদের নেই।
ছোটকাল থেকেই ওড়ার প্র্যাকটিস না করলে উড়বে কীভাবে। বাবা-মা তাদের উড়তে শেখায়নি। বাছা, তুমি আরও জোরে উড়ে চলো। ”
তারপর বুনো সুলঞ্চরা আরও দ্রুতগতিতে উড়ে চলল। অল্প সময়ের মধ্যে রঙিন মেঘসাগরের মধ্যে গিয়ে পড়ে তারা।
কোথায় যাবে? উড়েই যাচ্ছে বীর সুলঞ্চ তার দলবল নিয়ে। তার চোখে ভেসে ওঠে সেই সবুজ দেশের ছবি। পাহাড়, সাগর, নদী, জলাশয় সবই আছে এখানে। স্বপ্নের মতো এ দেশে প্রতিবছর তারা আসে। সেই দেশটির নাম বাংলাদেশ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।