আমিও সুরের মত মিলিয়ে যাবো। ততদিন পর্যন্ত পাওয়া যাবে paintlove@gmail.com এ...
প্রায় দুই বছর হয়ে গেছে তানজীরের সাথে নীলার ব্রেকআপ হয়ে গেছে। শামসু চায়নি নীলার এই অসহায় সময়ের কোনো ফায়দা লুটতে। মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে সান্ত্বনা দিয়েছে। তার জবাবও নীলা দিয়েছে।
কিন্তু নীলা এখন সেই নীলা নেই। তার চলাফেরায় এক ধরনের উগ্রতা এসেছে। ব্যবহারে রুক্ষতা এসেছে। সেদিন তো জাহিনের সাথে চরম দূর্ব্যবহার করলো কার্জনের এতগুলো ছেলে মেয়ের সামনে। বিষয়টাতে শামসু কষ্ট পেয়েছে।
জাহিন তার ভালা বন্ধু। শামসু এটাও জানে যে বিষয়টা অতি সামান্য ছিল। কিন্তু নীলা এটা কি করলো? না, শামসুর সাথে নীলার খুব একটা কথা হয়না। জাহিনের সাথে এই ঘটনার পর থেকে শামসুও নীলা কে একটু এড়িয়ে চলে বলা যায়। মানুষের এতটা পরিবর্তন কি করে আসতে পারে।
মনে মনে তানজিরকে গালি দেয় শামসু।
দুইটা বছর চলে গেলেও শামসু এখন মাত্র মাস্টার্সে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই একটা সমস্যা। চার বছরের অনার্স্ শেষ হয় সাত বছরে। এক বছরের মাস্টার্স শেষ হয় দেড় বছরে।
পড়ালেখা করতে করতে বুড়া হয়ে গেল। তবু শালার পড়ালখা শেষ হয় না। মনে মনে ভাবতে থাকে শামসু। একটা চাকরীর তার খুবই দরকার ছিল। দুই বছর আগে একটা মোবাইল কোম্পানীতে জীবনের প্রথম ইন্টারভিউ হয়।
না, চাকরীটা হয়নি শামসুর। নিজেকে বড় অসহায় এবং নিঃসঙ্গ লাগে শামসুর। অনার্সে একটা সেকেন্ড ক্লাস নিয়ে কি চাকরী বা পেতে পারে। তবে দুই বছরে বসে নেই সে। একটা গাইড বই লিখার কাজ করেছে।
তাতে মোটামুটি ভালো একটা আয় হয়েছে।
ভালো ছবি আকতে পারে বলে একটা ছবি আঁকা শেখানোর টিউশনি ও পেয়েছিল। পিচ্চি দুইটা মেয়েকে ছবি আঁকা শেখাতে হবে। এরা আমেরিকায় থাকে। বাংলাদেশে যে ক'দিন আছে তাদের ছবি আঁকা শেখাতে হবে।
প্রথমদিন যাবার পরই তাদের মা এসে বললেন বাংলাদেশের সিনারি আঁকা শেখাতে হবে। সাতদিনের মধ্যে তাদের আর্টিস্ট বানাতে হবে। ভালো কথা....
প্রথমত, এরা কোনোদিন ছবিই আঁকেনি। প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের লাইন, শেপ এসব শেখানো উচিত। মেয়েদের মা দ্বিতীয়দিন এসে জিজ্ঞেস করলেন সিনারি আঁকা শেখানো হয়েছে কি না।
শামসুর প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ছবি আঁকা কি মুড়ি দিয়ে বানানো মোয়া নাকি..?? দেখা যাক...সিনারির প্রাথমিক কিছু জিনিস শেখানো যাক...
- এই , তোমরা নৌকা দেখেছ? কেমন থাকে বলো তো..!
জানা গেল তারা কোনোদিন নৌকা দেখেনি। কোনোদিন বাইরেও নিয়ে যাওয়া হয়নি। ঢাকার বাইরে কোনো দৃশ্য সম্পর্কে তাদের বিন্দুমাত্র ধারনা নেই। শামসু খুঁজে পেল না, যে জিনিস কোনোদিন দেখেনি, যেটার ব্যাপারে তাদের কল্পনা করারও উপায় নেই, সেটা পাঁচ বছরের একটা বাচ্চার পক্ষে কিভাবে আঁকা সম্ভব।
এভাবে তো সম্ভব নয়। চতূর্থ দিনে শামসু টিউশনি ছেড়ে দিল। অন্তত শিল্পের সাথে, সংস্কৃতির সাথে এভাবে কম্প্রোমাইজ করা সম্ভব না।
চতূর্থ বর্ষে থাকা কালীনই শীলার সাথে খুব ভালো বন্ধুত্বের শুরু। হঠাৎ করেই মেয়েটা একদিন ফোন দেয়।
আগে কখনও দেয়নি। শামসু একটু অবাকই হলো। এতগুলো বছর একসাথে পড়ছে, কোনোদিন কথা পর্যন্ত হয়নি। ফোনে তো সে এমনিতেই কথা বেশি বলতে পারে না। অস্বস্তি লাগে।
নীলার সাথে এমনিতেই শীলা নামটার মিল আছে। তার উপর মেয়েটা ফোন করে নীলা সংক্রান্ত কথা শুরু করে। শামসু বেশিক্ষণ কথা বলতে পারে না। আনমনা হয়ে পড়ে। তার কথার তেমন জবাব না পেয়ে শীলাও ফোন রেখে দেয়।
শামসু বিষন্ন মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে...না, নীলাকে কোনোদিনও বলা হয়নি..তবু নীলাকে সে ভালোবাসে। জীবনের প্রথম ভালোবাসা...কিভাবে ভোলা সম্ভব?? এই চিন্তাই সারাক্ষণ তার মাথায় ঘুরতে থাকে...
(চলবে)
আগের পর্বগুলি পড়ুন নিচের লিংকে...
শামসু ব্যাচেলর - ১
শামসু ব্যাচেলর - ২
শামসু ব্যাচেলর - ৩
শামসু ব্যাচেলর - ৪
শামসু ব্যাচেলর - ৫
শামসু ব্যাচেলর - ৬
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।