আমিও সুরের মত মিলিয়ে যাবো। ততদিন পর্যন্ত পাওয়া যাবে paintlove@gmail.com এ...
ঢাকা শহরটা কত শূন্য ছিল এই কটা দিন। আবার গরম হয়ে উঠছে শহরটা। একই সাথে কত রকম রূপ...যেমন শহরের তেমনি শহরের মানুষের....। ঈদের দিনটা ভালই কেটেছিল শামসুর।
যদিও বাড়ির জন্য একটু মন খারাপ হয়েছিল। এই প্রথম বাবা মা ছাড়া সে ঈদ করলো। মন তো একটু খারাপ হবেই। ছোট বোনটা ঈদে কি করেছে কে জানে। হয়তো ওকে মোবাইল ফোনে ট্রাই করেছে।
কিন্তু শামসু কি কথা বলবে? ও জানেনা। মোবাইলটা তাই সারাটাদিন অফ করে রেখেছিল। আচ্ছা সে কি বাবা মার অবাধ্য সন্তান হয়ে উঠেছে? শামসুর মাথা ধরে আসে....কিছু ভাল লাগে না।
রোকন ভাই, কামাল ভাই গত পরশু দিনই চলে এসেছেন। রেজা ভাই বাকি ছিলেন।
তিনিও আজ এসেছেন। রোকন ভাই তো এসে ওকে দেখেই অবাক। "কি ব্যপার শামসু? তুমি কি যাও নাই?" ........."যাব না কেন? চলে এসেছি। একটা কাজ ছিল তাই বেশিদিন দেরী করলাম না..." । অবলীলায় মিথ্যা কথা বলল সে।
এত মিথ্যা কথা কি করে বলা শিখলো শামসু? ক্লাস ফাইভে থাকতে একবার মিথ্যা কথা বলে মার খেয়েছিল গনেশ স্যারের হাতে। বাবা বলেছিলেন, "দেখ বাবা মিথ্যা কথা যারা বলে, আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন না....শোন তুই প্রথমে একদিন ঠিক কর সারাদিন সত্যি কথা বলবি। তারপর থেকে সপ্তাহে দুই দিন, আস্তে আস্তে বাড়াতে থাক...দেখবি একসময় মিথ্যা কথা আর বলতে পারবিনা.."। শামসুর কাছে বেশ মজা লেগেছিল বাবার কথা শুনতে..আচ্ছা দেখা যাক...চেষ্টা করে...সে তো মিথ্যাবাদী হতে চায় না...। শামসু চেষ্টা করেছিল এবং একটা সময় এমন হয়েছিল যে তার পক্ষে মিথ্যা বলা প্রায় অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল।
পরিস্থিতির কারণে মিথ্যা বললেও সহজে ধরা পড়ে যেত...। এ আবার কেমন সমস্যা.......? শামসু এখন অনেকটা ভারমুক্ত...সে মিথ্যা কথা বলতে পারে...ভাবলেশহীন ভাবে বলতে পারে। কারও সাধ্য নেই সেই মিথ্যা ধরতে পারে। তার বাবা কি তাকে এই শিক্ষা দিয়েছিল? শামসু বারান্দায় দাড়িয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকায়। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু।
ঢাকার আকাশটাও যেন কেমন....মনকে স্পর্শ করেনা..রাতের বেলা শামসু কতবার তাকিয়েছে আকাশের দিকে..কই আকাশের তারা কই? শামসু কোনো তারা দেখেনা ঢাকার আকাশে। ছোটবেলায় কত তারা দেখেছে সে...কত সুন্দর দেখাতো আকাশটাকে...শামসুর মনে হলো অনেকদিন পর আকাশ দেখছে...কত মধুরই না ছিল ছোটবেলাটা...এখন বড় হয়ে সময় করে আকাশটা দেখা হয় না। হ্যা....শামসু ঈদ করেছে...ঢাকা শহরে। সকালবেলা উঠেই গোসল করেছে। রিক্সা নিয়ে ছুটেছে জাতীয় ঈদগাহ তে।
ছোটবেলা থেকেই অভ্যাস ছিল প্রথম জামাতটা পড়ার। ঈদের দিনে শুধু ঐ মুহূর্তটুকুই শামসুর মনে হয় সবচেয়ে সুখের...। সারি সারি মানুষ এক আকাশের নিচে...একসাথে। নামায শেষ হবার পর পরিচিতরা কোলাকুলি করেছে। শামসু কারও সাথে করেনি।
ভাগ্য ভাল তার কোনো বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে যায় নি! দেখা হলে কি বলতো শামসু জানেনা। নিশ্চয়ই কোনো একটা মিথ্যা কথা বলতো! তারপর সারাটাদিন রাস্তায় রাস্তায় হেঁটেছে সে। সে থাকে শঙ্করে। সারাটাদিন রাস্তা জুড়ে বড় লোকের আদরের ছেলেরা গাড়ি নিয়ে এই মাথা থেকে ঐ মাথা ঘুরেছে। মাথাধরা শব্দ সেসব গাড়ির।
গাড়িতে কম বয়সী মেয়েগুলো হাসাহাসি করছে। না শামসু মোটেই মানিয়ে নিতে পারে না। তার মনে হয় সে এখানে অনাকাঙ্খিত। শামসুর গাড়ি নেই। সে জানে না কোন গাড়িতে কি সুবিধা.....।
না...শামসু জানে..অনেক কিছুই সে জানে... শামসু জানে কি করে পাতা দিয়ে বাঁশি বানাতে হয়, কি করে তেলাপোকা ধরে পাখা ছিড়ে বরশিতে গাঁথতে হয়, সে জানে কিভাবে নারিকেল গাছে উঠতে হয়, সে জানে....। বাড়িতে একগাদা হাঁস মুরগি ছিল। একটা বয়সে ওগুলো্ই ছিল শামসুর খেলার সাথী। শামসু জানে.....অনেক কিছুই জানে...শুধু জানেনা নীলার ঐ পাষাণ হৃদয়ে কি আছে...? যখন দেখে নীলা অন্য ছেলের সাথে..আর পয়সাওলা ছেলেটা নীলাকে নিয়ে গাড়িতে ঘুরে বেড়ায়........শামসুর প্রচন্ড চিতকার করতে মন চায়...। কিন্তু কই পারে।
ঢাকা শহর তার মুখের কথা কেড়ে নিয়েছে। চিতকার করে কাঁদার অধিকারটুকু তার নেই। শামসু দেখেছে..ঈদের দিনে পয়সাওলা ছেলেদের উদ্দাম উল্লাস...সাথে দেখেছে জরাজীর্ণ বস্ত্র গায়ে টোকাই ছেলেটার ডাস্টবিনে খাবার কুড়ানো। শামসুর চোখে জল চলে এসেছে। কিন্তু সে কাঁদতে পারেনি।
শামসু এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। ঈদের দিনেও বৃষ্টি হয়েছিল। শামসু ভিজতে পারেনি। আজকে বোধ হয় বড় রকমের একটা ঝড় হবে।
শামসু আজ ভিজবে...কেন জানিনা নীলার কথা খুব মনে পড়ছে। মেয়েটা এত ছলনা করে তারপরও ওর কথা মনে পড়ে। দেখলেই এমন একটা হাসি দিবে যে শামসু ঐখানেই শেষ।
নীলার সাথে তার দেখা হবে। এই তো ভার্সিটিটা খুলুক।
আশফাক, রেজা..ওরা তো হলে চলেই এসেছে। দুই মাস কারও সাথে দেখা নাই। ভালো, আড্ডা দেয়া যাবে। ক্লাস শুরু হলে নীলার সাথেও দেখা হবে। নীলার হাসিটা দেখা হবে।
আহ..! মেয়েটার হাসিটা কি সুন্দরই না! চাকরীটা একবার হয়েই যাক.....
আগের পর্বগুলি পড়ুন....
শামসু ব্যাচেলর - ১
শামসু ব্যাচেলর - ২
শামসু ব্যাচেলর - ৩
শামসু ব্যাচেলর - ৪
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।