সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............
কোরবানীর গরু কেনা………
ব্যাক্তিগত ভাবে আমি গত ৮/১০ বছরে কোরবানীর গরু কিনতে গরুর হাটে যেতে পারিনি। এই কাজটার জন্য সব সময়ই অন্যের উপড় নির্ভর করতে হয়। এবছর আমার দুই ছেলে অনেক আগে থেকেই ঘোষনা দিয়ে রেখেছিল-ওরা দুই ভাই মিলে গরু কিনবে। যথা পরিকল্পনা তথা কাজ।
সকাল ১০ টার সময় শুভ, সাজিদ দুই ভাই দুইজন সহকারী নিয়ে গরু কিনতে চলে যায় গাবতলীর গরুর হাটে।
কল্যাণপুর ব্রীজের কাছে ড্রাইভারসহ গাড়ি রেখে চার বংগশার্দুল সোজা গরুর হাটে……। বাসা থেকে চলে যাবার ৪৫ মিনিটের মধ্যেই বড় ছেলে কল করে জানায়-“আব্বু,বিরাট এক গরু কিনে ফেলেছি”! আমি গরুর দাম জানার পর বলি-“গরুর হাটে ঢুকেই গরু কিনে ফেললে-একটু যাচাই বাচাই করে নিতে পারতে”।
শুভঃ-“আব্বু, একশ্রেনীর মানুষ আছে-যারা সারাদিন গরুর হাটে ঘোরাঘুরি করে গভীর রাতে গরু কিনে বাড়ি ফিরে, আমরা ঐ দলে নই। গরু দেখে পছন্দ হয়েছে-ব্যাস কিনে ফেলেছি। যারা রাতে গরু কিনে তারা মাস্ট ধরা খাবেই।
হয় সেই গরুর এন্থ্রাক্স নাহয় অন্যকোনো জটিল ডিজিস আক্রান্ত”।
আমিঃ-“ঠিক আছে, সাবধানে গরু নিয়ে বাড়ি ফেরো, সাজিদের দিকে খেয়াল রেখো-গরু থেকে দুরত্ব রেখে চলবে-গরুর শিং দিয়ে গুতা দিতে কিম্বা লাথি দিতে পারে”।
১৫ মিনিট পরে আবার শুভ কল করে জানায়-“আব্বু, গরুর দাম কিন্তু শুধু সাইজের উপড়ই নির্ভর করেনা। টকটকে লাল গরুর দাম অ-নে-ক বেশী। আমাদের গরুটা টকটকে লাল এবং একদম তেলতেলে।
“
আবার মিনিট দশেক পর শুভ কল করে…”আব্বু, এক ধরনের গরু আছে-পুলিশের মত পেট মোটা,সারা শরিরে থলথলে ফ্যাট-ওসব গরু ভালো নয়। আমাদের গরুটা স্লীম এবং খুব স্মার্ট, সামনে যাকেই পায়-তাকেই একটা গুতা দেবেই”!
আবার কলঃ-"আব্বু, গরু কিনতে হয় গরুর দাঁত দেখে। দুই দাঁতের গরু সব থেকে ভালো গরু। আমাদের গরুটাও দুই দাঁতের"।
আবার শুভ কল করে-“আব্বু, আমাদের গরুটা হান্ড্রেড পার্সেন্ট পেট।
মেহেরপুরের গরু। এই গরুকে মোটা তাজা করার জন্য আর্টিফিশিয়াল কোনো খাবার, ইঞ্জেকশান দিয়ে/মেডিসিন খাইয়ে মোটা করা হয়নাই-এই গরুর মাংশ হেব্বী টেস্টি”!
কিছুক্ষণ পর ছোটছেলে সাজিদ কল করে। “আব্বু, আমি কিন্তু গরু পছন্দ টছন্দ করিনাই, দামও বলিনাই………-যা করার ভাইয়াই করেছে”-এই পর্যন্ত বলেই আস্তে করে বলে-“তোমাকে পরে কল করছি……”। আমি বুঝতে পারি-শুভ ওর পাশে চলে এসেছে……
আবার সাজিদের কল। “আব্বু, ভাইয়া গরু কিনে ‘রাম ঠকা ঠকছে’! যারাই গরুর দাম শোনে তারাই বলে-‘এই গরুর এত বেশী দাম হওয়া ঠিক হয়নাই’।
আমি যে তোমাকে একথা জানিয়েছি তা আবার ভাইয়াকে বলে দিওনা”-বলেই সাজিদ ফোন রেখে দেয়।
আবার শুভ কল করে-“আব্বু, একশ্রেনীর মানুষ আছে-তারা কত বেশী দামে, কিম্বা কত বড় গরু কিনেছে তা জাহির করে। তাছারা কোরবানী হলে “ত্যাগের জন্য”-সেই কোরবানীর পশু দরদাম করে কিপ্টামী করে কেনাটা কোরবানীর মুল উদ্দেশ্যটাই বরবাত করে দেয়”!
বেলা দুইটা, তিনটা গড়িয়ে চারটা-ছেলেরা গরু নিয়ে বাড়ি ফিরছেনা। আমি কল করি-জানতে চাই-তোমরা কোথায়? শুভ জানায়-“আমরা সংসদ ভবন এলাকায় গরুকে ঘাস খাওয়াচ্ছি-গরুর পেট একদম খালিতো-তাই দেখতে একটু শুকনা শুকনা লাগছে। তুমি আবার মনে করোনা-গরু ছোট”!
আমি বুঝে গেছি-ছেলেরা গরুকে ঘাস খাইয়ে বড় বানিয়ে বাড়ি ফিরবে…!তারপরেও আমি জানতে চাই-“তোমরা লাঞ্চ করেছো”? যদিও আমি নিশ্চিত ছিলাম-সাজিদ যেহেতু সাথে আছে, কাজেই এই প্রশ্নের জবাব ‘হ্যা’ হবে।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে গরু নিয়ে ছেলেরা বাড়ি ফেরে। বিল্ডিং এর অন্য বাসিন্দারাও ৮/১০ টা গরু কিনেছে। এখন গরুর মালিক পক্ষের মধ্যে গরুতে গরুতে কম্পেয়ারিজম চলছে-কার গরু বড়/ছোট/কত দাম-ইত্যাদি। সকলেই বুঝে গিয়েছে-শুভ ‘ধরা’ খেয়েছে। অন্যদের গরু দেখে সাজিদের মন খারাপ!সাজিদ বলে-“আব্বু, ভাইয়ার জন্যই আমরা ঠকে গেলাম”! শুভ সেই সকালেই গরু কেনায় ধরা খেয়ে উতকন্ঠিত।
মেজাজ বিগড়ে ছিল। সাজিদকে উচ্চস্বরে বলে-“সাজিদ,পেট মোটা গরু আর টাকাটাই বড় বিষয়না। তুমি যদি মনে করো-কোরবানী মানেই গোস্ত খাওয়া-তাহলে তোমার উচিত ছিল একটা জলহস্তী কিনে কোরবানী দেয়া”!
সাজিদঃ-“ভাইয়া, তোমার উচিত সত্যকে মেনে নেয়া……গরু কেনা তোমার আমার কাজ নয়”!
এবার শুভ আরো চিতকার করে বলে-“ঠিক আছে, আমি জানিতো-এখন তুমি গিয়ে আম্মুকে সব বলে দিবা-যাও বলো গিয়া, যা তোমার খুশী”!
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।