এক সময় ৭৭ বছরের সপ্তম মাসের সপ্তম দিনে বুড়োদের ভীমরতি বা মতিভ্রমের ঘটনা ঘটার লোকশ্রুতি মানা হলেও এ যুগে তা অবসলিট হয়ে গেছে। কারণ এখন আর টাইমফ্রেম বেঁধে দিয়ে ভীমরতির সময়কাল নির্ধারণ করে দেয়া যায় না। অন্যদিকে ভীমরতি এখন ছেলেবুড়ো সবারই হয়। হয় সরকারেরও। অন্তত বিদ্যুৎ-বুভুক্ষু দেশ ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির সরকারি পরিকল্পনা শুনে আমার এটাই মনে হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বেশ শালীন ভাষায় বলে দিয়েছেন, 'সরকারের এই সিদ্ধান্তের পেছনে দুর্বল মনের সব প্ররোচনা থাকতে পারে, লজিক নেই। বালখিল্যতা আছে গভীরতা নেই। এটা আর কিছু নয়, ভারতের কাছে একটা নতজানু এবং আর্থিক ঔপনিবেশিকতার চূড়ান্ত নিদর্শন। '
আমি ডাহা মূর্খ মানুষ। যুক্তির মারপ্যাচে অভ্যস্থ নই।
তবে একটুকু বুঝতে পারি ভারত বাংলাদেশকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে যাবে কোন দুঃখে? ভারতের নিজেরই তো রয়েছে বিদ্যুৎ সঙ্কট। তার চাহিদা ১ লাখ ৯০ হাজার মেগাওয়াট এবং উৎপাদন হচ্ছে ১ লাখ ৪০ হাজার মেগাওয়াট। ঘাটতি ৫০ হাজার মেগাওয়াট। আগামী দু এক বছরের মধ্যে দেশটির বিদ্যুৎ চাহিদা দাঁড়াবে ২ লাখ ৫০ হাজার মেগাওয়াট।
সম্প্রতি নগরীর এক তারকা হোটেলে কথা হচ্ছিল ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশতাক এইচ খানের সঙ্গে।
বিষয়টি তুলতেই তিনি বলেন, 'ভারত বাংলাদেশকে কেন বিদ্যুৎ দেবে, তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। দেশটিতে এখনো ন্যাশনাল গ্রিড চূড়ান্ত হয়নি। আগামী তিন বছরের মধ্যে হয়ে যেতে পারে। তার আগে বাংলাদেশ নিজের টাকায় যদি ভারতকে ট্রান্সমিশন লাইন তৈরি করে দেয়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের সারপ্লাস বিদ্যুতের কিছু অংশ বাংলাদেশ পেতে পারে। তাও বছর দুয়েকের জন্য।
এরপর ন্যাশনাল গ্রিড পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে ভারত বাংলাদেশকে এক ওয়াট বিদুৎ দিতে পারবে না। '
তুলনামূলক অর্থনীতির এ ঝানু প্রফেসর আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন, ট্রান্সমিশন লাইন বাবত বাংলাদেশ যে পরিমাণ অর্থ খরচ করতে যাচ্ছে, তার পুরোটাই জলে যাবে।
৫০০ মেগাওয়াটের জন্য ট্রান্সমিশন লাইন বানাতে বাংলাদেশের খরচ হতো ৩০০ কোটি টাকা। কিন্তু ভারতের হিসেব অনুযায়ী খরচ হবে ১,১০০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে অবকাঠামো তৈরি বাবদ ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৮০০ কোটি বেশি আদায় করে নিয়ে যাবে।
ঘটনার শেষ এখানেই নয়, ভারত এই ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণের জন্য ঋণ দেবে কিন্তু বাংলাদেশকেই উচ্চহারে তার সুদ পরিশোধ করতে হবে। এর মাধ্যমে ভারতের একটা ব্যাংকের ব্যবসা হবে। আবার এই লাইন বানানোর জন্য ভারত থেকেই মালামাল আনতে হবে। সুতরাং এখানেও আরেকটা ব্যবসা হবে ভারতের।
অথচ এই ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য যে ১,১০০ কোটি টাকা খরচ হবে তা দিয়ে বাংলাদেশ নিজেই ৫০০ মেগাওয়াটের একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে পারবে।
আর বিদ্যুৎ আমদানির জন্য খসড়া চুক্তিতে যেসব শর্তের জানা গেছে, তাতে ভারতের স্বার্থ এতো বেশি যে, বাংলাদেশকে এখানে কোনো পক্ষই মনে হচ্ছে না। বিল নির্ধারণ ও বকেয়া পড়লে মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ইত্যাদি ক্ষমতা ভারতীয় বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতে দেয়ার প্রস্তাব রাখায় বাংলাদেশ ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির করতে গিয়ে জিম্মি হয়ে পড়ার যাবতীয় ব্যবস্থা এই চুক্তিতে রয়ে গেছে।
কিন্তু আরেক দফা ক্ষমতায় আসতে হলে সরকারের সামনে এই 'অসম' চুক্তি বাস্তবায়নের বিকল্প পথ যে নেই!!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।