বাংলায় এমন কিছু শব্দ প্রচলিত হয়েছে যেগুলি সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম অনুসারে সুষ্ঠু নয়, অর্থাৎ তাদের গঠনের ব্যাকরণের নিয়ম ঠিকভাবে অনুসৃত হয়নি। এসব শব্দকে প্রতিষ্ঠিত অশুদ্ধ বা অসিদ্ধ বলা হয়। এ রকম বহু শব্দ যুগপরম্পরায় চলে যায় এবং কথ্য ও লিখিত ভাষায় তাদের আসন পাকা করে ফেলে।
রাজশেখর বসুর মতে, ভাষামাত্রেই প্রায়ই 'পূর্ববর্তী কোনও ভাষার বিকার বা অপভ্রংশ এবং একাধিক ভাষার মিশ্রণ। '
বাংলায় অন্য ভাষা থেকে আগত শব্দের বিকৃতি সম্পর্কে আপত্তি তেমন জোরালো নয়, কিন্তু তৎসম শব্দে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম যথাযথভাবে পালিত না হলেও পণ্ডিতরা ক্ষুব্ধ হন।
বাংলায় এই অর্থে 'ভুল' বহু শব্দই বহুদিন ধরে প্রচলিত এবং এতই প্রচলিত যে অনেক সময় সেগুলির শুদ্ধ রূপই আমরা ভুলে যাই।
এই রকম প্রতিষ্ঠিত অশুদ্ধ শব্দের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা দিয়েছেন সুভাষ ভট্টাচার্য তাঁর 'বাংলা প্রয়োগ অভিধানে'। এগুলো হচ্ছে : অন্তরীণ, আন্তর্জাতিক, আধুনিকা, ইতিমধ্যে, ইতিপূর্বে, উপরোক্ত, একত্রিত, কর্ষিত, চলমান, জাগ্রত, দিবারাত্রি, নিন্দুক, নিরভিমানী, নিরলস, নিরাশা, নিরাসক্ত, নিরুদ্দিষ্ট, নির্দোষী, নির্বিরোধী, নিশি, নিশ্চয়তা, নিষ্করুণ, পার্বত্য, পাশবিক, প্রবহমান (ণ), প্রস্তাবিত, প্রাগৈতিহাসিক, বাহ্যিক, বিবাহিত, বিশৃঙ্খলা, বিস্তারিত, ভাসমান, ভ্রাম্যমাণ (ভ্রমণশীল অর্থে), মজ্জমান, মহদাশয়, মুহ্যমান, রুপী, শরৎচন্দ্র, সক্ষম, সকরুণ, সকাতর, সচঞ্চল, সচল, সঠিক, সততা, সমতুল্য, সমসাময়িক, সশঙ্কিত, সাবধানী, সিঞ্চন, সৃজন, স্ফুটমান, নিরুবিগ্ন, নিরঞ্জন (বিসর্জন অর্থ), বনানী ইত্যাদি।
সুভাষ ভট্টাচার্যের মতে, এসব শব্দ নানাভাবে গঠিত হয়েছে। কোনটি সংস্কৃত নিয়মের ভুল প্রয়োগের ফলে সৃষ্ট; কোনটি বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী গঠিত।
সংস্কৃত নিয়ম কঠোরভাবে অনুসৃত হয়নি বলেই এগুলিকে বর্জন করা আজ আর সম্ভব নয়।
চিন্তাহরণ চক্রবর্তী লিখেছেন, 'বহুলপ্রচলিত প্রয়োগ আপাতদৃষ্টিতে যতই নিয়মবিরুদ্ধ হউক না কেন, প্রাচীন নিয়মকে একটু ব্যাপক ও শিথিল করিয়া বা নতুন নিয়ম আবিষ্কার করিয়া তাহার সমর্থনের চেষ্টা বৈয়াকরণের অবশ্যকর্তব্য কর্ম’ (ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি)।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।