আবিদঃ দোস্ত! মেয়েটারে দেখসোস?
জামানঃ হুহ।
রাজুঃ আরে দেখনা, কেমন জাস্তি ফিগার!
আবিদঃ দোস্ত! কোমরের বাঁকটা দেখসোস? অস্থির না?
(সরি ফর দ্য ল্যাঙ্গুয়েজ। কিন্তু তারপর আবিদ এবং রাজু এভাবে মেয়েটির শরীরের আরোও নানান অংশ সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানগর্ভ মন্তব্য পেশ করল। ঐ জ্ঞানের মাত্রা এতোই বেশি যে তা এখানে লিখতে আমি অক্ষম! অল রাইট, আমরা আবার গল্পে ফিরে আসি। )
জামানঃ আরে! তোরা থামবি? আর রাজু! তোর না গার্লফ্রেন্ড আছে।
তাইলে তুই অন্য মেয়েদের প্রতি নজর দিস কেন?
রাজুঃ গার্লফ্রেন্ড থাকল তো কী হইসে। গার্লফ্রেন্ড কী আমার চউক্ষে পর্দা ফালায়া রাখসে? তুই হুজুর হইসোস, তুই দেখিস না, শুনিস না আমাদের কথা। আমরা তো হুজুর না। আমরা তো আর আমাদের চোখরে আটকায়া রাখতে পারি না। তুই চোখ থাকিতে অন্ধ হইতে পারোস, আমরা তো অন্ধ না।
আমাদের চোখ আছে, আমরা দেখব। তুই ঐ গানটা শুনোস নাই? “তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি এ কী আমার অপরাধ?”
জামানঃ আর কিছু পাস নাই। একটা ফাউল গান শুনায়া দিলি। ঐ গান যে লেখছে সে তো তোর মতই আরেক টাল্টু, বদমাইশ। ঐসব টাল্টুরাই তো সব নষ্ট করে।
এরাই গান বানায় “চুমকি চলেছে একা পথে সঙ্গী হলে দোষ কী তাতে। ” চুলতানা কামাল জাতীয় ভন্ড নারীবাদীরা একদিকে ইভ টিজিং এর বিরোধিতা করে আরেকদিকে ঐসব ইভ টিজিং মার্কা গানগুলোকে সংস্কৃতি চর্চা বলে। যত্তসব ডাবল স্ট্যান্ডার্ড।
আবিদঃ আরে ধূর! বন্ধ করবি তোর ওয়াজ মাহফিল?
জামানঃ হুম! সেদিন তো দেখলাম ফেসবুকে খুব শফী সাহেবের তেঁতুল থিওরির বিরুদ্ধে কপচাইলি।
এখন তো দেখি, তেঁতুল দেইখা নিজের মুখ-টুখ সব খান দিয়া লালা ফালাইয়া একেবারে আশেপাশের সবাইরে ভাসাইয়া দিতেসোস ।
শালা! তোরা আর ঠিক হবি না কোনদিন!
রাজুঃ যাহ! বাদ দে তো! ঝগড়া বাঁধাইস না। চল যাইগা!
[অত্যন্ত দুঃখজনক হইলেও সত্য। আমাদের সমাজের একটা বড় অংশের পোলাপাইনই রাজু আর আবিদ টাইপের। বেশির ভাগ যদিও মুখ দিয়ে এভাবে বর্ণনা দেয় না। কিন্তু দৃষ্টি তাদের সবার একই।
]
[এবার বাস্তবতা বাদ। এবার একটা অবাস্তব/ফ্যান্টাসি গল্প বলি। কেউ হাসবেন না প্লিজ!]
রাজুঃ দোস্ত! মাইয়াটা দেখসোস?
…........
…........
রাজুঃ কিরে আবিদ, কোন কথা কস না কেন? মাইয়াটা দেখোস নাই? অস্থির ফিগার?
আবিদঃ আরে নাহ! আমি আর এখন মাইয়া দেখি না।
রাজুঃ হাহ! হাহ! হাহ! কেউ আম্রে মাইরালা! তুই মাইয়া দেখোস না এখন? ক্যান? তুইও কি জামানের মত হুজুর হয়ে গেলি?
আবিদঃ নাহ! আমি ঠিক হুজুর হই নাই! তুই তো জানিস আমি একটা মাইয়ার প্রেমে পড়েছি।
রাজুঃ হুম, তুই তো অবনীর প্রেমে পড়সোস।
তো কী হইসে? অবনী কিছু বলসে?
আবিদঃ নাহ! ও তো জানেই না এখনো কিছু। আমারই শুধু ওরে ভাল্লাগসে। ওরে তো কিছুই বলি নাই এখনো।
রাজুঃ তাইলে?
আবিদঃ আসলে কিভাবে বলবো? তুই হাসতে পারবি না। কথা দে?
রাজুঃ আরে ধুর! হাসার কথা হলে হাসবো, না হলে নাই।
এত ভংচং করিস না তো, ঝটপট বলে ফেল।
আবিদঃ আসলে যখন আমি অন্য কোন মেয়ের দিকে এভাবে তাকাই, তাদের ফিগার দেখি, তখন আমার অবনীর কথা মনে পড়ে। আমার মনে হয়, আমি যেমন এই মেয়েটির দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকাচ্ছি, অন্য কোন ছেলেও তখন হয়ত অবনীর দিকে তাকাচ্ছে। আমার তখন খুব খারাপ লাগে। ব্যাপারটা আমি কোনভাবেই মেনে নিতে পারি না।
আমার কেন জানি মনে হয়, আজ আমি এভাবে অন্য মেয়ের দিকে তাকাচ্ছি বলেই হয়ত অন্য আরেকটি ছেলে আমার অবনীর দিকে তাকাচ্ছে। ছেলেমানুষীই বলবি তোরা, কিন্তু কেন জানি আমার মনে হয়, আমি যদি কোন মেয়ের দিকে এভাবে না তাকাই, আমার অবনীর দিকেও কোন ছেলে তাকাবে না! কেউ তাকাতে চাইলেও কোন না কোন বাঁধা সামনে এসে দাঁড়াবে!
রাজুঃ হাহ! হাহ! হাহ!! হে খোদা! আমারে উডায়া নাও, নাইলে দড়ি ফালাও বায়া উডি যাই! প্রেম-টেম কিছুই হয় নাই, এর মধ্যে এধরণের আজগুবি চিন্তা মাথায় আসতেসে! প্রেম-বিয়ে হইলে না জানি কী করবি!
জামানঃ রাজুরে! তুই আর ঠিক হইলি না! ও কী খারাপ কিছু বলসে? হ্যাঁ, এটা অবশ্যই ছেলেমানুষী চিন্তা যে, ও না তাকালে ওর অবনীর দিকে অন্য কেউও তাকাবে না। কিন্তু দেখ! প্রতিটা ছেলেই যদি এভাবে চিন্তা করত? তাহলে তো কোন মেয়ের দিকেই কোন ছেলে এভাবে তাকাত না। সমাজটা ইভটিজিং মুক্ত থাকত, পবিত্র হয়ে উঠত।
রাজুঃ দোস্ত! তোদের দুইটারই কী মাথার তার ছিড়ে গেছে? সবার কী গার্লফ্রেন্ড আছে? নাকি তোরা “সবার জন্য গার্লফ্রেন্ড/বউ” নামে কোন প্রজেক্ট চালু করবি?
আবিদঃ দোস্ত! দেখ, আমরা যে মেয়েটির দিকে এভাবে তাকাচ্ছি, তাকে কিন্তু আমাদের নিজেদের গার্লফ্রেন্ড বানানোর চিন্তা বা চেষ্টা করছি না।
শুধু মাত্র সস্তা আনন্দ পাওয়ার জন্যই আমরা এটা করছি। আর দেখ আমাদের কারো গার্লফ্রেন্ড/বউয়ের দিকে কিন্তু আমরা বাজে চোখে তাকাই না। কাজেই আমরা অন্তত এটা ভাবতে পারি, মেয়েটি আমাদের না হোক, অন্য কারো না কারো গার্লফ্রেন্ড/বউ হতে যাচ্ছে? ঠিক আছে? তেমনি কপাল খুব খারাপ না হলে আমাদেরও অনাগত(!) গার্লফ্রেন্ড/বউ আছে কোথাও না কোথাও। ঠিক? তাই আমরা ভাবতে পারি, কারো বর্তমান/ভবিষ্যত গার্লফ্রেন্ড/বউ মেয়েটির দিকে যদি আমরা না তাকাই, তাহলে আমাদেরও এখনো দেখা না পাওয়া ভবিষ্যত গার্লফ্রেন্ড/বউয়ের দিকে কেউ এভাবে বাজে চোখে তাকাবে না!
রাজুঃ এক্সেলেন্ট আইডিয়া দোস্ত! তোরা তো শান্তিতে কদ-বেল পায়া যাবি এই থিওরি কপচাইয়া! অসাধারণ দোস্তরা অসাধারণ!! আমি পুরাই ইমোশনাল হইয়া গেলাম!
জামানঃ ধুর ব্যাঙ! তোরে কিছু বলাটাই ভুল, সব ফাইজলামি কইরা উড়াইয়া দিস!
[[এটা একটা ফ্যান্টাসিই। এটা কখনো সম্ভব নয়।
মেয়েদের প্রতি আচরণ ঠিক করার জন্য যেমন সবাইকে মা-বোন মনে করাও সম্ভব হয় না, তেমনি আমাদের এ গল্পের মত করেও সম্ভব হবে না। একমাত্র আল্লাহর ভয়ই পারে মেয়েদের প্রতি ছেলেদের আচরণ ঠিক করতে। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে এ তাওফিক দেন। ]]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।